ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দিনাজপুরে ধান গাছে ‘অদ্ভুত’ রোগের প্রাদুর্ভাব

প্রকাশিত: ১৬:৪৬, ৫ মার্চ ২০২১

দিনাজপুরে ধান গাছে ‘অদ্ভুত’ রোগের প্রাদুর্ভাব

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুরের বিরামপুর ও হাকিমপুর উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে বাড়তি দামের আশায়, ভারতীয় চিকন জাতের ধান আবাদ করে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। ধানের গাছের পাতা লাল বর্ণের হয়ে ও গোড়া পচে মরে যাচ্ছে। কোনও ওষুধে কাজ হচ্ছে না। এতে করে ধানের ফলন ও উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। এদিকে স্থানীয় কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে এ সংকট উত্তোরণে কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি এই জাতের ধানের আবাদ থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন কর্মকর্তারা। বিরামপুর উপজেলার চরকাই গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, গত আমন মৌসুমে জিরা ধানের দাম বেশ ভালো ছিল। সেই কথা মাথায় নিয়ে বাড়তি লাভের আশায় ও বাড়িতে খাওয়ার জন্য এবারে আট বিঘা জমিতে চিকনজাতের জিরা ধান লাগিয়েছি। কিন্তু সেই ধান লাগিয়ে তো দুশ্চিন্তা আরও বাড়ছে। ধানের গাছে অদ্ভুত এক রোগ দেখা দিয়েছে। ধানগাছের পাতাগুলো লাল বর্ণের হয়ে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। আবার যে গাছ লাগিয়েছি, সেটাও বাড়ছে না। কোনও শিকড় ছাড়ছে না। ঠিক যেমন লাগিয়েছি তেমনই থাকছে। শিকড় না ছাড়লে গাছ বাড়বে কীভাবে। একটি গাছ আক্রান্ত হওয়ার পর আরেকটি আক্রান্ত হচ্ছে। এভাবে পুরো মাঠের ধান গাছ মরে যাচ্ছে। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। একই গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, এবারে চার বিঘা জমিতে ভারতীয় জাতের জিরা ধান লাগিয়েছি। কিন্তু কয়েকদিন হয়ে গেলো, ধান গাছ যেমন লাগিয়েছি, এখনও ঠিক সে রকমই আছে, একটুও বাড়েনি। গাছের পাতা লাল হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় দোকানদারদের পরামর্শ মোতাবেক জমিতে ভিটামিন-ওষুধ দিচ্ছি। কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হচ্ছে না। হাকিমপুর উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক সজিব হোসেন বলেন, স্থানীয় বাজার থেকে ভারতীয় জিরা ধানের বীজ কিনে বিছন করে, সেই বিছন জমিতে লাগিয়েছিলাম। জমিতে যে একটা করে গাছ লাগিয়েছি, তা থেকে কোনও উন্নতি নেই। আর এখন গাছের পাতা লাল হয়ে উঠছে। যত দিন যাচ্ছে, গাছগুলি মাটির মধ্যে বসে যাচ্ছে। দোকানদার যে ভাবে বলেছে, সেই মোতাবেক জমিতে সার ও ভিটামিন সবকিছু দিচ্ছি। কিন্তু কোনও কিছু দিয়েই কোনও কাজ হচ্ছে না। এখন বাধ্য হয়ে জমির যেসব ধান গাছ লাল হয়ে যাচ্ছে, শ্রমিক লাগিয়ে সেগুলো উঠিয়ে ফেলছি। এখন তো আমরা দুশিন্তায় পড়ে গেছি ধানের যদি গাছই না হয়, তাহলে ফলন হবে কোথা থেকে। আর আমরা যে খরচ করেছি সেই খরচই বা উঠবে কীভাবে। লাভ তো দূরের কথা। তিনি জানান, তবে শুধু ভারতীয় জিরা ধানেই এই সমস্যা হচ্ছে। অন্য ধানে কোনও প্রকার সমস্যা হয়নি। সেগুলো বেশ ভালো আছে। হাকিমপুর উপজেলার সাতকুড়ি বাজারের এক বীজ বিক্রেতা বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা কৃষকদের মাঝে বীজ সরবরাহ করেছি। তবে এবারে বীজের কী যেন সমস্যা হয়েছে। যার কারণে ধান গাছে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এটা আবহাওয়ার কারণেও হতে পারে। বিষয়টি কৃষি অফিসকে জানিয়েছি। তারা মাঠ পরিদর্শন করে ধানের চারাগুলো দেখে আবহাওয়ার কারণে এটি হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন। তারা যে পরামর্শ দিচ্ছে সে মোতাবেক আমরা কৃষকদের ওষুধ দিচ্ছি। এতে করে ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মমতাজ সুলতানা বলেন, এই উপজেলায় বেশ কিছু অঞ্চলের কৃষকরা বিক্ষিপ্তভাবে ভারত থেকে আনা একটি ধানের জাত ব্যবহার করছেন। তারা স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন নামে বিশেষ করে জিরা ধান নামেই এটি ব্যবহার করছেন। এই ধান রোপণের পর তারা যথেষ্ট পরিমাণ আগাছানাশক ব্যবহার করেছেন। এর ফলে ধান গাছের পাতা লালচে বর্ণের হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এই ধান গাছটির নমুনা সংগ্রহ করে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে পাঠিয়েছিলাম। তাদের পরামর্শ মোতাবেক আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে এসব জমিতে বিঘা প্রতি পাঁচ কেজি করে ইউরিয়া সার, পাঁচ কেজি পটাশ ছিটানোর কথা বলছি। একইসঙ্গে জমিতে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকে, তাহলে পানি সরিয়ে দিয়ে জমির মাটি নেড়ে দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। এতে করে এটি কেটে যাবে আশা করছি। তবে যেহেতু এই জাতটি সরকারিভাবে আমাদের দেশে অনুমোদিত নয়, এ কারণে এই জাতটি ব্যবহার না করতে কৃষকদের বলা হচ্ছে।
×