নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ ॥ হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার কালিগজিয়া ত্রিপুরা পল্লীর পাশে পাহাড়ি টিলার আরেক সৌন্দর্য আনারস বাগান। সে সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বিলাতি জাতের আনারস গাছের ফাঁকে ফাঁকে রোপণকৃত লেবু ফলন।
পতিতই পড়ে ছিল প্রায় ১ একর এই পাহাড়ি টিলা। ত্রিপুরা পল্লীর বাসিন্দা সুনীল দেববর্মা মেম্বার এ পতিত জমির অর্ধেক আবাদ করে প্রথমে রোপণ করেন প্রায় ৫ হাজার আনারস গাছ। রোপনের বছর যেতেই গাছে ধরা পড়ে আনারস। শুধু আনারসের আয়ের উপর ভর করে এগোতে সমস্যা হচ্ছিল। তাই আনারসের সঙ্গে পরিকল্পনা করেন লেবু চাষের।
উন্নত জাতের চারা সংগ্রহ করে আনারস গাছের ফাঁকে ফাঁকে লেবু চারাগুলো রোপণ করা হয়। ধরা পড়ে আনারস। লেবুর সঙ্গে আনারসের ভাল ফলন দেখে উৎসাহ বেড়ে যায় তার। পরে পুরো জমিতে আবাদ করে তিনি আরও প্রায় ৫ হাজার আনারসের চারা রোপণ করেন। সুনীল দেববর্মা শ্রমিক সঙ্গে নিয়ে নিয়মিত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। পুরো দিনটাই আনারস ও লেবু গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে তাকে।
এসব চাষে তিনি কোন বিষ প্রয়োগ করছেন না। কিছু পরিমাণে সার ও ব্যাপকভাবে গোবর ব্যবহার করছেন। তাতে ভাল ফলন আসছে। তার চাষ দেখে অন্য চাষিরাও আনারস ও লেবু চাষে মনযোগী হয়েছেন। পতিত পড়ে থাকা বিরান টিলা এখন ফলে ভরপুর। যা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় যে কারোরই।
ডুবাঐ কৃষি ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার প্রণব মজুমদার বলেন, পাহাড়ে এসে সুনীল দেববর্মাকে পরামর্শ প্রদান করেন। তিনি পরামর্শ গ্রহণ করে বিষমুক্ত আনারস ও লেবু চাষ করছেন। তার চাষাবাদে ব্যাপক সফলতা এসেছে। এ পাহাড়ে অন্যান্য চাষীরাও আনারস ও লেবু চাষ করে লাভবান।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আবদুল আউয়াল বলেন, পাহাড়ি এলাকায় এখন ব্যাপকভাবে লেবু আনারসসহ নানা ফসলের চাষ হচ্ছে। চাষাবাদকে এগিয়ে নিতে আমরা কৃষকদের নানাভাবে উৎসাহিত করছি। অনেক সময় প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এখানে আমাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে সুনীল দেববর্মা আনারস ও লেবু চাষ করে লাভবান।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, পাহাড়ে প্রচুর ঘাস পাওয়া যায়। এসব প্রাকৃতিক খাবার পেয়ে গরু পালন করা সহজ। আর গরুর গোবর ব্যবহার করে চাষিরা নানা ধরণের ফসল চাষে এগিয়ে আসছেন।
হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের ডা. মিঠুন রায় বলেন, ভিটামিন সি, নানা খনিজ পুষ্টি উপাদান যেমন পটাশিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, থায়ামিন, ফোলেট, এমনকি ফাইবার এবং ব্রোমেলিন ইত্যাদি নানা কার্যকরি উপাদানে সমৃদ্ধ আনারস।
আনারস শুধু যে খেতেই সুস্বাদু, তা কিন্তু নয়। এই ফলটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হজম শক্তি বাড়ায়, হাড় শক্ত করে, প্রদাহ জনিত সমস্যা দূর করে, ঠান্ডা লাগা এবং কাশি কমাতেও কাজে আসে। এখানেই শেষ নয়, গবেষণায় বলছে অতিরিক্ত ওজন কমাতেও আনারসের দারুণ ভূমিকা।
শীর্ষ সংবাদ: