ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিন্ডিকেটের কারসাজি

বেনাপোলের ওপারে আটকা পাঁচ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক

প্রকাশিত: ০১:৪৯, ৫ মার্চ ২০২১

বেনাপোলের ওপারে আটকা পাঁচ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক

স্টাফ রিপোর্টার, বেনাপোল ॥ বেনাপোল বন্দরের ওপারে ভারতের পেট্রাপোলে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আমদানি পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৫ হাজার ট্রাক। ফলে দুই দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশে পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে এ ধরনের জটিলতা ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করে ট্রাক থেকে প্রতিদিন আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকার চাঁদা। আমদানিকারক, সি এ্যান্ড এফ এজেন্টসহ অন্য ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানিতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মোঃ আজিজুর রহমান জানান, ভারতীয় পেট্রাপোল কালিতলা পার্কিংয়ে বর্তমানে চার হাজারের অধিক পণ্য বোঝাই ট্রাক আটকে আছে। আমরা রাজস্ব আয় বাড়াতে ও ট্রাক সংখ্যা বৃদ্ধি করতে ভারতীয় কাস্টমস ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে যাচ্ছি। ভারত থেকে পণ্য বোঝাই আমদানিকৃত ট্রাক যদি বাংলাদেশে প্রবেশ না করে তবে রাজস্ব আয়ের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বন্দর দিয়ে প্রতিবছর ভারতের সঙ্গে ২৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য সম্পন্ন হয়ে থাকে। বছরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে বেনাপোল কাস্টমস হাউস। দেশের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৭-৮শ’ ট্রাক পণ্য আমাদনি হতো ভারত থেকে। বর্তমানে তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩-৪শ’ ট্রাকে। ওপারে বনগাঁও পৌরসভার মেয়র শংকর আড্য ডাকু কালিতলা পার্কিং নামে একটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন পার্কিং তৈরি করে সেখানে আমদানি বোঝাই ট্রাকগুলো জোর করে প্রবেশ করানো হচ্ছে। প্রতি ট্রাক থেকে ড্যামারেজ বাবদ ২ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। বর্তমানে একটি ট্রাক বাংলাদেশে আমদানি হতে ১৫-২০ দিন করে সময় লাগছে। যার পুরো চাঁদার অর্থ বাংলাদেশী আমদানিকারকদের পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে মোটা অঙ্কের লোকসানের কথা ভেবে অনেকেই বেনাপোল বন্দর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিং এ্যান্ড ফরোয়াডিং এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা জানান, দেশের ৭৫ ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচা মালামালের পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য আসে এই বন্দর দিয়ে। ওপারে পণ্য আমদানিতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওপর এর প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়ছে। গত ২ মার্চ সকালে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান আমদানিকৃত ট্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও রাজস্ব আয় বাড়াতে ভারতীয় ব্যবসায়ী ও কাস্টমসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিং এ্যান্ড ফরোয়াডিং এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, দেশের ৭৫ ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচা মালামালের পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য আসে এই বন্দর দিয়ে। পণ্য আমদানিতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওপর এর প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়ছে। বেনাপোল কাস্টমস সি এ্যান্ড এফ এজেন্ট কর্মচারী এ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জানান, বেনাপোলের ওপারে এখন ভয়াবহ পণ্যজট লেগে রয়েছে। প্রায় ৪ হাজারের অধিক ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে বন্দরের ওপারে অপেক্ষায় রয়েছে। পেট্রাপোলের কালিতলা পার্কিং থেকে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতে এখন প্রায় ১৫ দিন লেগে যাচ্ছে। ফলে আমদানিকারক ও সি এ্যান্ড এফ এজেন্টদের যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তেমনই বেড়ে যাচ্ছে আমদানি ব্যয়। ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করতে বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বনগাঁও পৌর প্রশাসক শংকর আড্য ডাকুর নেতৃত্বে তার লোকজন প্রতিটি পণ্য বোঝাই ট্রাক থেকে প্রতিদিন ২ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে। পণ্য বোঝাই একটি ট্রাক ২০ দিন ওপারে আটকে থাকলে তাকে ৪০ হাজার ভারতীয় রুপী পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে আমদানিকারকরা মোটা অঙ্কের আর্থিক লোকসানে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে।
×