ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সহিংসতা অতীতের চেয়ে কম

পৌর নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন

প্রকাশিত: ২৩:১২, ৫ মার্চ ২০২১

পৌর নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন

শাহীন রহমান ॥ কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এবারের ৫ দফায় অনুষ্ঠিত পৌরসভায় নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। সহিংসতার যে ঘটনা ঘটেছে তা অতীতের যে কোন নির্বাচনের চেয়ে কম। ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল ভাল এবং স্বতঃস্ফূর্ত। নির্বাচনের প্রচার থেকে শুরু করে ভোটের আগ পর্যন্ত আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আগের চেয়ে কম ছিল। নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বাধা দেয়ার ঘটনা এবারে তেমন একটা ঘটেনি। সব রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে প্রচার চালিয়েছেন। এমনকি ভোটের দিন গণহারে নির্বাচন বর্জনের ঘটনা ঘটেনি বললেই চলে। গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫ দফায় ২৩০ পৌরসভায় নির্বাচন সম্পন্ন করেছে ইসি। এছাড়া আগামী ১১ এপ্রিল আরও কিছু পৌরসভায় নির্বাচনের দিন তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছে ওইদিন আরও ৯ পৌরসভায় ভোট হবে। দেশে ৩২৩টি পৌরসভায় রয়েছে। বাকি পৌরসভায় পর্যায়ক্রমে মেয়াদ শেষের ভিত্তিতে ভোটগ্রহণ করা হবে। এছাড়া কিছু পৌরসভায় সীমানা জটিলতা ও মামলা থাকার কারণে ভোটগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। মামলা সংক্রান্ত জটিলতা কেটে গেলে সেসব পৌরসভায় নির্বাচনের উদ্যোগ নেবে ইসি। আগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করলেও এবারের পৌরসভায় সবগুলোতেই প্রার্থী দিয়েছে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। নির্বাচন বিশ্লেষণের দেখা গেছে, বিএনপিসহ ১২ রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নেয়। ভোটের ফলে অধিকাংশ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়লাভ করলেও বিএনপি অর্জন কম নয়। কোন কোন পৌরসভায় রেকর্ড সংখ্যক ভোট পেয়ে জয় পেয়েছে বিএনপির প্রার্থীরা। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম দফায় নির্বাচনে ৩০ পৌরসভার মধ্যে মাত্র ১টিতে জয় পায় বিএনপির প্রার্থীরা। এই একটিতে বিএনপির প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ৮২ হাজার। বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি দলীয় প্রার্থী রেজাউল করিম বাদশা ৮২ হাজার ২১৭টি ভোট পেয়ে জয় পেয়েছেন। শুধু বগুড়াতে নয় বেশ কিছু পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা রেকর্ড পরিমাণ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। যদিও অনেক পৌরসভায় দলটির প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন। তাদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা একেবারেই নগন্য। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিএনপির প্রার্থীর চেয়ে দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী যেমন জয় পেয়েছে। আবার বিদ্রোহী প্রার্থীরাও নির্বাচনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন এমন ঘটনাও এবারের পৌরসভা নির্বাচনের রয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য। তবে কিছু কিছু কেন্দ্রে সহিংসতাসহ ভোট কেন্দ্র দখল, জাল ভোট দেয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল। তবে তুলনামূলক সেই হার অনেক নগন্য। হাতে গোনা কিছু পৌরসভায় নির্বাচনের দিন সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। হয়েছে প্রাণহানিও। অভিযোগের ভিত্তিতে সেসব পৌরসভায় ভোট স্থগিত, ফল প্রকাশ স্থগিতসহ নানা ব্যবস্থা নিতেও দেখা গেছে। এবারের পৌরসভায় ভোট পড়ার গড় হার ছিল বেশি। মেয়র পদে ৬৫ শতাংশের উপরে ভোট পড়েছে। যদিও পাঁচ বছর আগে অনুষ্ঠিত পৌরসভায় ভোট পড়ার হার ছিল ৭৩ শতাংশ। ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে ২৩০ পৌরসভার মধ্যে ১৮৫ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয় পেয়েছে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে। তবে বিএনপির প্রার্থীরা মাত্র ১১টি পৌরসভায় জয় পেয়েছে। এর বাইরে জাতীয় পার্টি এবং জাসদের একজন করে প্রার্থী মেয়র পদে জয় পেয়েছেন। তবে নির্বাচনে উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো অধিক হারের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এই নির্বাচনে মেয়র পদে জয় লাভ করেছেন। এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দলের মনোনয়ন না পেয়ে সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। জয় লাভ করা এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবে জয় পাওয়া বিএনপিরও অনেক বিদ্রোহী রয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয় পাওয়া অনেকটা দুষ্কর। সেখানে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন নির্বাচন অবাধ হওয়ার কারণে। নির্বাচন কমিশনের দেয়া হিসাব অনুযায়ী এবারের পৌরসভায় নির্বাচনে ২৮ ডিসেম্বরের প্রথম ধাপে ভোট পড়ে ৬৫.২৫ ভাগ। ১৬ জানুয়ারির দ্বিতীয় ধাপে ভোটের হার ৬৩.৬৭ ভাগ, ৩০ জানুয়ারির তৃতীয় ধাপে ৭০.৪২ ভাগ, ১৪ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ ধাপে ৬৫.৩৩ ভাগ এবং ২৮ ফেব্রুয়ারির পঞ্চম ধাপে ৫৮.৬৭ ভাগ ভোট পড়েছে। এর আগে ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় দলীয় ভিত্তিতে। আইন অনুযায়ী পৌরসভায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মেয়র প্রথম বৈঠক থেকে পরবর্তী ৫ বছর। মেয়াদ শেষের আগের ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট করার বিধান রয়েছেন। এদিকে পৌরসভা নির্বাচনের পর এবার নজর ইউপি নির্বাচনের দিকে। দলীয় ভিত্তিতে এই নির্বাচনে আগামী রমজানের পরই ব্যাপক পরিসরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে রমজানের আগে এক দফায় ইউপি নির্বাচনের তফসিল দিয়েছে ইসি। কয়েক দফায় আগামী মে মাস থেকে দেশে সাড়ে চার হাজার ইউপি নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। সিইসি নুরুল হুদার অধীনে বর্তমান কমিশন চার বছর পার করেছে। গত একাদশ জাতীয় নির্বাচন এই ইসির অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে দেশে যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন শুরু হয়েছে এই ইসির অধীনে এই বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হওয়া শেষ নির্বাচন। এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন শেষে জেলা পরিষদ এবং দু-একটি সিটি নির্বাচন এই ইসির অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর আগামী ফেব্রুয়ারিতে নতুন ইসি দায়িত্ব গ্রহণ করবে। সেই ইসির অধীনে দেশে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
×