ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কানেক্টিভিটি নিয়ে কাজ করলে পুরো অঞ্চল বদলে যাবে

প্রকাশিত: ২৩:০২, ৫ মার্চ ২০২১

কানেক্টিভিটি নিয়ে কাজ করলে পুরো অঞ্চল বদলে যাবে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশ সীমান্তে প্রাণক্ষয়ের পেছনে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে মূল কারণ হিসেবে দেখছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জয়শঙ্কর এ কথা বলেন। খবর বিডিনিউজের। সীমান্ত হত্যা নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি মনে করি, আমরা একমত হয়েছি, যে কোন মৃত্যুই দুঃখজনক। কিন্তু আমাদের নিজেদের জিজ্ঞেস করতে হবে, সমস্যাটি কেন হচ্ছে। এবং আমরা জানি সমস্যাটি কী। সমস্যা হচ্ছে অপরাধ। সুতরাং আমাদের মিলিত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ‘অপরাধহীন ও মৃত্যুহীন’ সীমান্ত। আমি নিশ্চিত, আমরা যদি এটা করতে পারি, অপরাধহীন ও মৃত্যুহীন সীমান্ত, তাহলে এক সঙ্গে এই সমস্যার সমাধান করতে পারব। জয়শঙ্কর বলেন, যেটাকে আমরা সীমান্ত হত্যা বলি, মূলত অনেক মৃত্যু হয় ভারতের বহু ভেতরে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী (মোমেন) এবং আমি এ ব্যাপারে আলোচনা করেছি, যেভাবে প্রতিবেশী ও বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা হওয়া দরকার। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির সময়সীমা নিয়ে এক প্রশ্নে কৌশলী উত্তর দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। শীঘ্রই আমাদের সচিবদের বৈঠক রয়েছে। আমি নিশ্চিত, তারা এ বিষয়ে পরবর্তী আলোচনা চালিয়ে নেবেন। আমি মনে করি, আপনারা এক্ষেত্রে ভারত সরকারের অবস্থান জানেন, যা এখনও পরিবর্তন হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর চূড়ান্ত করতে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় পৌঁছান জয়শঙ্কর। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন; প্রায় দেড় ঘণ্টা চলে তাদের এই বৈঠক। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্পর্কের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যা নিয়ে আমরা বর্তমানে কাজ করছি না। আমাদের সম্পর্ক সত্যিকার অর্থে ৩৬০ ডিগ্রী। মানুষের সম্পর্কের সব ক্ষেত্রে আমরা কিছু না কিছু করছি। যতই কাজ করছি ততই নতুন নতুন সম্ভাবনা উন্মোচিত হচ্ছে। পঞ্চাশ বছরের সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় যোগাযোগকে ‘বড় পরিসরে গুরুত্ব দেয়া দরকার’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, কানেক্টিভিটির এই জায়গাকে আমরা বড় লক্ষ্য হিসেবে ধরে এগোতে পারি। জয়শঙ্করের মতে, ভারত ও বাংলাদেশ যদি কানেক্টিভিটির জায়গায় ঠিকমতো কাজ করতে পারে, তাহলে পুরো অঞ্চলই বদলে যাবে; বঙ্গোপসাগরীয় এলাকাকে তখন অন্যরকম মনে হবে। আমরা উভয় দেশ মনে করি এটা সম্ভব। আজকের দিনে আমাদের আলোচনার বড় অংশজুড়ে ছিল এটা। আমরা চাইলে এক্ষেত্রে তৃতীয় কোন দেশকেও একীভূত করতে পারি। যেমন জাপান, যাদের সঙ্গে আমাদের উভয়দেশের ভাল সম্পর্ক রয়েছে। বঙ্গোপসাগরীয় এলাকায় জাপান অনেক কানেক্টিভিটি প্রকল্পে যুক্ত। এর আগে লিখিত বক্তব্যে জয়শঙ্কর বলেন, আমাদের সম্পর্ক গৎবাঁধা অংশীদারিত্বের উর্ধে এবং আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের বন্ধন শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং প্রগতিশীল দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কেন্দ্রবিন্দু। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে উভয়পক্ষই এ সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে, বিশেষত ২০১৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে। বাংলাদেশের সঙ্গে এই সম্পর্ক ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথমে’ এবং ‘এ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির প্রাসঙ্গিকতার মধ্যেই নিহিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। জয়শঙ্কর বলেন, আমরা বাংলাদেশকে কেবল দক্ষিণ এশিয়াতেই নয়, বিস্তৃৃত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলেও একটি মূল প্রতিবেশী এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করি। আমাদের সম্পর্কের প্রতিটি অর্জন সমগ্র অঞ্চলকে প্রভাবিত করে। সবাই জানেন যে, আমরা অন্যদের কাছে এই সম্পর্ককে একটি অনুকরণীয় উদাহরণ হিসেবে উদ্ধৃত করি। এ কারণেই নিরাপত্তা, বাণিজ্য, পরিবহন ও সংযোগ, সংস্কৃতি, মানুষে মানুষে সম্পর্ক থেকে শুরু করে জ্বালানি ও অভিন্ন সম্পদ এবং প্রতিরক্ষা সম্পর্কের যৌথ বিকাশসহ সব ধরনের ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণে কাজ চলছে বলে জানান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক কার্যক্রমগুলো ‘সাধারণ পরামর্শ এবং প্রস্তাবের উর্ধে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, এসব কাজে মাঠ পর্যায়েও বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েকটি উদাহরণ হলো- চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আগরতলায় পরীক্ষামূলকভাবে পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালনা, ত্রিপুরাকে আপনাদের জাতীয় নৌপথে সংযুক্ত করার জন্য অভ্যন্তরীণ নৌপথে দুটি নতুন প্রটোকল রুট যুক্ত করা, ১০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ হস্তান্তর, কন্টেনার ও পার্সেল ট্রেন চলাচল শুরু এবং জ্বালানি খাতে একটি যৌথ উদ্যোগ গঠন।
×