ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যবসায়ী মহলে নির্বাচনী উৎসবের আমেজ

প্রকাশিত: ২৩:০১, ৫ মার্চ ২০২১

ব্যবসায়ী মহলে নির্বাচনী উৎসবের আমেজ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের ব্যবসায়ী মহলে নির্বাচনী উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আগামী ৫ মে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। এর আগে তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৪ এপ্রিল। এই দুই নির্বাচন ঘিরে ব্যবসায়ী মহল সরব হয়ে উঠেছে। জমে উঠেছে নির্বাচন। তবে এবার ব্যাপক হারে ভুয়া ভোটার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ব্যবসায়ীদের নির্বাচনে কারচুপি হতে পারে বলে মনে করছেন সাধারণ সদস্যরা। নির্বাচনকে ঘিরে প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর নামী-দামী হোটেল-রেস্তরাঁয় নির্বাচনী বৈঠক করেছেন বাণিজ্য সংগঠনের সদস্যরা। এফবিসিসিআই নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যে সংগঠনটির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মোঃ জসিম উদ্দীন নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন। অন্যদিকে বিজিএমইএ নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থী হিসেবে মাঠে লড়ছেন সংগঠনটির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান। জানা গেছে, রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে নির্বাচনী এক অনুষ্ঠানে সরকারদলীয় দুই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন ওই নির্বাচনী অনুষ্ঠানে। এরপরই নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন মোঃ জসিম উদ্দীন ও ফারুক হাসান। প্রায় প্রতিদিনই এই দুই ব্যবসায়ী নেতার পক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে সভা ও নির্বাচনী বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেখানে সাধারণ ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে তারা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে মাঠে রয়েছেন সংগঠন দুটির সাধারণ সদস্যরা। তাদের মতে, বাণিজ্য সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের ঠাঁই হওয়া উচিত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ব্যবসায়ী নামধারী কিছু নেতা তদ্বির বাণিজ্যের মাধ্যমে এসব সংগঠনে জায়গা করে নিয়েছেন। এতে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা অনেকাংশে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে এবার বাণিজ্য সংগঠনগুলোতে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের জায়গা করে দিতে পরামর্শ দেয়া হয়। এতে ব্যবসায়ী মহল সরব হয়ে ওঠে। তবে এফবিসিসিআই নির্বাচন ঘিরে কারচুপির আয়োজন চলছে একাধিক অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহলে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ীÑ ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) আসন্ন ২০২১-২০২৩ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে পরিচালক পদের ভোট গ্রহণ আগামী ৫ মে অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে আগামী ৬ মার্চের মধ্যে এফবিসিসিআইর সদস্য সংগঠনগুলোকে চাঁদা পরিশোধ করতে হবে। সাধারণ পরিষদ সদস্য হিসেবে নাম প্রেরণের সর্বশেষ তারিখ হচ্ছে ৮ মার্চ। জানা গেছে, সংগঠনের চাঁদা পরিশোধ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছে ছোট ছোট বাণিজ্য সংগঠনগুলো। তাদের চাঁদা পরিশোধ করতে দেয়া হচ্ছে না। আবার গোপনে অবৈধ কাগজপত্র দেখিয়ে ওই সংগঠনগুলোর চাঁদা পরিশোধ করছেন এফবিসিসিআইর কয়েকজন নেতা। তারা কিছু কিছু সংগঠনের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের লোকজনকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ভোটার বানাতে বাধ্য করছেন। এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ আলী আশরাফ এমপি বলেন, এফবিসিসিআই কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি না। নির্বাচন বোর্ড তফসিল অনুযায়ী রুটিন কাজ করবেই। সংগঠনগুলোর বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অন্যরা কেন চাঁদা নেবে। এটা হতে পারে না। আমি আশা করছি- যেসব সংগঠন চাঁদা দিতে পারছে না, নির্বাচন বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দেবেন। এবারের নির্বাচনে সরকারের গ্রীন সিগন্যাল পাওয়া একমাত্র সভাপতি প্রার্থী বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ জসিম উদ্দীনের নাম ঘোষণা করেছেন সংগঠনটির সাবেক সভাপাতিরা। তার সঙ্গে নেতৃত্ব দিতে প্রায় দেড় শতাধিক পরিচালক পদের প্রার্থী মাঠে সরব। তাদের তৎপরতায় নির্বাচন হয়ে উঠেছে উৎসব মুখর। ভোট প্রত্যাশী ব্যবসায়ীদের আশাÑ এই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হবে। তবে এখনও ভোটার ও প্রার্থী হওয়া নিশ্চিতকরণ নিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মাঝে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন সম্প্রতি নির্বাচন সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে বলেন, সবার অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন দেখতে চাই। ভোট সুষ্ঠ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হোক এটাই প্রত্যাশা করছি। আশা করছি- এই নির্বাচনে এফবিসিসিআই ও ব্যবসায়ীদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। করোনা সঙ্কট উত্তরণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় জসিম উদ্দীনের নেতৃত্ব ঘুরে দাঁড়াবে বেসরকারী খাত। তিনি বলেন, যে কেউ প্রার্থী হয়ে প্রতিযোগিতা করতে পারেন। তবে নির্বাচন সুষ্ঠ হবে এটাই প্রত্যাশা করছি। নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড ঘোষিত তফসিলে আরও বলা হয়- আগামী ১৩ মার্চ প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। অভিযোগ এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনী সাপেক্ষে ২৪ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী পরিচালক পদের প্রার্থীদের (নির্বাচিত এবং মনোনীত) মনোনয়নপত্র দাখিল ও যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিন ৩১ মার্চ। ৮ এপ্রিল প্রার্থী তালিকা প্রকাশ। ১১ এপ্রিল প্রার্থিতা বাতিলের শেষ দিন। ১৫ এপ্রিল চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ। ২১ এপ্রিল প্রত্যাহার ও চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ। আগামী ৫ মে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পরিচালক পদে সাধারণ সদস্যদের ভোট গ্রহণ শেষে ফল প্রকাশ। নির্বাচিত পরিচালকদের ভোটে সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি ও ছয়জন সহসভাপতি পদে নির্বাচন হবে ৭ মে বিকেল ৩টায়। এরপর ৯ মে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। জমে উঠেছে বিজিএমইএ নির্বাচন ॥ জমে উঠেছে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও মালিক সমিতির (বিজিএমইএ) নির্বাচন। আগামী ৪ এপ্রিলের নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যেই তিনটি প্যানেল তৈরি হয়েছে। সংগঠনটির অধিকাংশ সাবেক সভাপতিদের নেতৃত্বে রয়েছে সম্মিলিত পরিষদ। এ প্যানেলের সভাপতি পদেও প্রার্থী হচ্ছেন বিজিএমইএ’র সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান। বর্তমান সভাপতি রুবানা হকের ফোরাম প্যানেলের নেতৃত্বেও রয়েছেন সাবেক কয়েকজন সভাপতি। এবারের নির্বাচনে ফোরাম থেকে প্যানেল লিডার করা হয়েছে সাবেক সহসভাপতি এবিএম শামসুদ্দিনকে। এর আগে গত ১২ জানুয়ারি বিজিএমইএ’র নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। আগামী ৪ এপ্রিল রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হবে। সরকারদলীয় প্রার্থী হিসেবে ফারুক হাসানের পক্ষে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে বিকেএমএই। এছাড়া পোশাক খাতের অন্য সংগঠনগুলোও তার সঙ্গে রয়েছে বলে জানা গেছে।
×