ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তদন্তের আগে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না

প্রকাশিত: ২৩:০১, ৫ মার্চ ২০২১

তদন্তের আগে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না

শংকর কুমার দে ॥ আইনের অপব্যবহাররোধে ডিজিটাল আইনের পরিবর্তন আসছে। নতুন সিদ্ধান্তে ডিজিটাল আইনে সরাসরি মামলা নেয়া যাবে না। কোন অভিযোগ এলে প্রথমে তদন্ত করে দেখবে পুলিশ। তদন্তের মৌলিক আগে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারবে না। তারপর তদন্ত সাপেক্ষে মামলা নেয়া হবে। সাজার ব্যাপারেও প্রিন্সিপাল আইন মেনে বিধান করা হচ্ছে। ডিজিটাল আইনে আটক ভিন্ন চিন্তার লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে অসুস্থ হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু বরণ করার পর ডিজিটাল আইনটির ব্যবহার ও অপব্যবহার নিয়ে সরকারের নীতি নির্ধারক মহলে আলোচনা চলছে। আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। পুলিশের সাইবার ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার পর তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতায় বিভিন্ন শ্রণীর মানুষের মধ্যে ইন্টারনেট, স্মার্টফোনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদসহ ডিজিটাল অপরাধ বেড়ে যায়। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, গুগল, স্কাইপিতে ভুয়া আইডি খুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল, ব্লগে মিথ্যা মানহানিকর তথ্য প্রচার, বিভিন্ন এ্যাপসে অশ্লীল ছবি, ভিডিও এবং মেসেজ পাঠিয়ে উত্ত্যক্ত করছে ডিজিটাল অপরাধীরা। ফিশিংয়ের মাধ্যমে অন্যের আইডি হ্যাক করে প্রতারণাও করা হচ্ছে। বিশেষ করে নারীরা ব্যাপক হারে ব্ল্যাক মেইলিংয়ের শিকারে পরিণত হচ্ছিল। অনেকেই আত্মহননের পথ পর্যন্ত বেছে নিচ্ছিল। এক শ্রেণীর ভিন্ন চিন্তার ব্লগার, লেখক, কার্টুনিস্টরা মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে ইন্টারনেটের যথেচ্ছ ব্যবহার করার অভিযোগ উঠে। এই পরিস্থিতিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ডিজিটাল আইনের অপব্যবহার করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর এতে সমালোচিত হচ্ছে সরকার। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হওয়া ভিন্ন চিন্তার লেখক মুশতাক আহমেদ কারাগারে অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার পর এই আইনটি বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে ১৯৭টি। ১৯৭টি মামলায় ৪৫৭ ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মোট মামলার সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১৮৯টি। এরমধ্যে ৭২১টি মামলা থানায় এবং আদালতে ৪৬৮টি। এরমধ্যে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত সাংবাদিকের সংখ্যা ছিল ৪৪ জন। তবে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে মামলা কম হয়েছে। গত ৬ বছরে ৪ হাজার সাইবার মামলা হয়েছে। অপরাধের শিকার ৭০ শতাংশই নারী। সাজা হয়েছে মাত্র ২৫ জনের। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, ডিজিটাল আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় এসব ভার্চুয়াল অপরাধের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে। এমনকি অনেক সময় ডিজিটাল অপরাধী ধরা পড়লেও শাস্তির নজির খুবই কম। ঘটনাগুলো এখন শুধু ভার্চুয়াল জগতেই নেই, জাতীয় নিরাপত্তায়ও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফেসবুকে অপপ্রচার ও গুজব যেভাবে বেড়েছে, তাতে সাময়িক সময়ের জন্য এ সাইটটিকে বন্ধ করা হলেও ভুয়া আইটি খুলে আবারও পুনরাবৃত্তি ঘটানো হচ্ছে। সাইবার ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, ঢাকার একমাত্র সাইবার ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে ৩৫০ মামলা বিচারাধীন। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনটি মামলার বিচার কাজের মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। ২০১৪ সালে ট্রাইব্যুনালে ৩২টি মামলার বিচার কাজ চলে। পরের বছর বিচারের জন্য আসে ১৫২টি মামলা। আগের বছরগুলোর চেয়ে ২০১৬ সালে দুই শতাধিক মামলা বিচারের জন্য আসে। ২০১৭ সালে ৫৬৮ এবং ২০১৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনালে মামলা আসে ২৬৭টি। সাইবার ট্রাইব্যুনালে ৬০ শতাংশের বেশি মামলায় অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় আসামিরা খালাস পেয়েছে। এতে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছে ভুক্তভোগীরা। অভিযোগ করেও বিচার না পেয়ে আত্মহত্যার পথও বেছে নেয় কেউ কেউ। সাইবার অপরাধের মামলা নিয়ে এক তথ্যে জানা যায়, গত ৬ বছরে সাইবার অপরাধের ঘটনায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে তিন হাজার ৬৫৯টি। এরমধ্যে সাইবার ট্রাইব্যুনালে গেছে এক হাজার ৫৭৫টি মামলা। নিষ্পত্তি হয়েছে ৫২২টির। মাত্র ২৫টি মামলায় আসামিদের সাজা হয়েছে। পুলিশের ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (সিডিএমএস) পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ সালে ৩৫টি ও ২০১৪ সালে ৬৫টি মামলা হয় সারাদেশে। ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালে মামলা হয় ৫৯৭টি যার মধ্যে ১৩৭টি ঢাকায়। ২০১৬ সালে সারাদেশে মামলা হয় ৮৭৯টি যার মধ্যে ঢাকায় ২০৬টি। ২০১৭ সালে মামলা হয় এক হাজার ২৮টি। এরমধ্যে ঢাকায় ২৩৬টি। ২০১৮ সালে মামলা হয় এক হাজার ৫৫টি যার মধ্যে ৩৩৩টি ঢাকায়। তথ্য বলছে, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালে শুধু ঢাকায় মামলা হয়েছে ৯১২টি। সাইবার অপরাধীদের শিকার ৫২২ জনকে নিয়ে পুলিশের এক গবেষণায় দেখা যায়, ভুক্তভোগীদের ৭০ শতাংশই নারী। তাদের মধ্যে ২৫ বছরের কমবয়সী নারী ৫৭ শতাংশ। সাইবার অপরাধের ধরনের মধ্যে রয়েছে জঙ্গী-সংক্রান্ত এক শতাংশ, চাঁদাবাজি সাত শতাংশ, সাইবার পর্নোগ্রাফি ১৪ শতাংশ, হ্যাকিং ২০ শতাংশ, মানহানি ১৮ শতাংশ, ভুয়া আইডি ২০ শতাংশ ও অন্যান্য ছয় শতাংশ। সাইবার অপরাধের ভিকটিম ৫৮ শতাংশই ফেক আইডি এবং আইডি হ্যাক করে মানহানিকারী অপরাধীর শিকার। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, গতবছর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ছাড়িয়েছে। এরমধ্যে ৭০ ভাগই সাইবার অপরাধের ঝুঁকিতে আছেন। ব্যবহারকারীদের মধ্যে ২০ ভাগ কোন না কোনভাবে সাইবার অপরাধের সঙ্গে জড়িত। মাত্র ১০ ভাগ ব্যবহারকারী সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন। একই তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। আর সাইবার অপরাধের ৭৫ ভাগ অভিযোগই ফেসবুককেন্দ্রিক। ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হওয়া ৪৯ শতাংশই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সাইবার ভুক্তভোগীদের মধ্যে ফেসবুক আইডি হ্যাকের শিকার হয়েছেন এক হাজার ১১২ জন, যার মধ্যে ৬০৬ জন পুরুষ ও ৫০৬ জন নারী। মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণার শিকার হয়েছেন ৩৪৯ জন, যার মধ্যে ২৭০ জন পুরুষ ও ৭৯ জন নারী। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ২১৮ জন, যার মধ্যে ৪৫ জন পুরুষ ও ১৭৩ জন নারী। ফেসবুক, মেসেঞ্জারে ভুয়া আইডি দিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে ৫১৩ জনকে। প্রতারণার শিকার হয়েছেন ১৯৫ জন পুরুষ ও ৩১৮ জন নারী। একই বছরে ৩৭ জন ই-মেইল হ্যাকের শিকার হয়েছেন। আর ৩২৩ জন পুুরুষ ও ২৯১ জন নারী মিলিয়ে অন্যান্য হয়রানির শিকার হয়েছেন মোট ৬১৪ জন। সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে সরকার। এই আইনের বিভিন্ন ধারায় সাইবার ক্রাইমের জন্য কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে। এই আইনের আওতায় কেউ যদি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন ধরনের প্রপাগাণ্ডা চালায়, তাহলে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ যদি জনগণকে ভয়ভীতি দেখায় এবং রাষ্ট্রের ক্ষতি করে, তাহলে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ আইনের ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ধর্মীয় বোধ ও অনুভূতিতে আঘাত করে, তাহলে ১০ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আইনের ২৯ ধারায় বলা হয়েছে, কারও বিরুদ্ধে কুৎসা রটালে, মানহানিকর কোন তথ্য দিলে তিন বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ৩১ ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ অরাজকতা সৃষ্টি করলে সাত বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ডিজিটাল আইনের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সাংবাদিক ও প্রগতিশীল লেখকরা প্রতিবাদ করে আসছিল। কিন্তু জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মের নামে অপপ্রচার চালিয়ে দেশে অরাজক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছিল। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে অনেক অঘটন ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্ম দেয়া হয়েছিল। এতে অনেক মানুষকে হত্যা, আহত, ধনসম্পদ বিনষ্ট করা হয়। অনেকে সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে অপমান-অপদস্থের শিকার হচ্ছেন। এজন্য ডিজিটাল আইনটি ব্যবহার করে ডিজিটাল অপরাধ দমনের চেষ্টা করা হয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করে শুধু জঙ্গীবাদ বা সন্ত্রাসবাদই ছড়িয়ে দেয়া হয়নি, বরং এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরি, অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা চুরি, সার্ভার কিংবা ডিভাইস থেকে তথ্য চুরি করার মতো ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জঙ্গী মতপ্রকাশ, নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কথা বলা, বিজ্ঞানচিন্তা কিংবা অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিরুদ্ধে বক্তব্যের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তির অপরাধ মারাত্মক বেড়ে যায়। মতপ্রকাশের জন্য এই আইনে সাংবাদিক, শিক্ষক, লেখক, কার্টুনিস্ট, আলোকচিত্রসহ বেশকিছু মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার ক্ষেত্রে বেশিরভাগই হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেয়ার কারণে। মামলার অভিযোগগুলো হচ্ছে কটূক্তি, পোস্টের মাধ্যমে মানহানি করা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা এবং ধর্মের অবমাননা। তবে এদের সবাই যে নির্দোষ নিরাপরাধ তা মানতে রাজি নন তদন্তে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা। সুপ্রীম কোর্টের একজন আইনজীবী বলেছেন, বর্তমানে সাইবার অপরাধের মাত্রা অনেক বেড়েছে, তাই এই মামলাগুলোর বিচার দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি করতে হবে। বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত হলে সাইবার অপরাধ কমে আসবে। আর সাইবার আইন যেমন শক্ত না, যেটুকু আছে তারও যথাযথ ব্যবহার হতে দেখছি না। তাই সাইবার অপরাধ বাড়ছে। ফেসবুকের মাধ্যমে নানাভাবে মানুষকে হেনস্তা করা হচ্ছে। কুৎসা রটিয়ে সম্মানহানির ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকারকে নানা ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতেও একটি গ্রুপ ফেসবুকে সক্রিয় আছে। সাইবার অপরাধ ঠেকাতে হলে সরকারের সর্বোচ্চ মনিটরিং জরুরী বলেও মনে করেন এই আইনজীবী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে যে তথ্যপ্রযুক্তি আইন হয়েছিল সেখানে মামলা করার বিধান ছিল শুধু আদালতে। ২০১৩ সালে এই আইন সংশোধন করে পুলিশের কাছে মামলা দায়েরের সুযোগ রাখা হয়। এরপর থেকেই তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার ব্যাপক অপপ্রয়োগ দেখা যায়। এরপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৫৭ ধারা বাতিল করা হলেও ওই ধারার সবকিছু নতুন আইনে রাখা হয়েছে। এই বিতর্কিত আইনটি সংশোধনের জন্য আন্তর্জাতিক মহল থেকেও চাপ আসে। সম্পাদক পরিষদ কয়েক দফা এই দাবি জানায়। সরকারের তরফে সম্পাদক পরিষদকে এই আইনের বিতর্কিত ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানানো হলেও পরবর্তী সময়ে তা করা হয়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিজিটাল অপরাধ দমনের প্রয়োজনে একটি আইনের দরকার আছে। জঙ্গী মত দমনের জন্য এ আইনের প্রয়োগ দরকার ছিল। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে। এ আইনটি লেখক-সাংবাদিক ও সৃজনশীল ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। একইসঙ্গে আইনটি সমাজে আতঙ্ক তৈরি করেছে। এ আইনে শাস্তি ও জরিমানা বাড়ানো হয়েছে অত্যাধিক। ফলে এ আইনটি পর্যালোচনা করা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞগণ।
×