ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তদন্ত কমিটি অস্বাভাবিক কিছু পায়নি

মুশতাকের মৃত্যু স্বাভাবিক ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ৫ মার্চ ২০২১

মুশতাকের মৃত্যু স্বাভাবিক ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দী লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত ৩ কমিটির মধ্যে কোন কমিটির রিপোর্টেই অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায়নি। তাই রিপোর্ট অনুযায়ী মুশতাকের মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও কারা কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই এমন তথ্য উঠে এসেছে বলে জানান তিনি। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সবগুলো কমিটির অভিমত এই রকম। তারা ভিডিও ফুটেজ, তার কক্ষে যে কয়জন ছিলেন এবং কারাগারের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও হাসপাতালে যখন নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের সবার অভিমত নিয়ে যে প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাতে বলছেন ন্যাচারাল ডেথ হয়েছে। অস্বাভাবিক মৃত্যু নয় এটা। মৃত্যুর কারণ তাহলে কী-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে তা বোঝা যাবে। তবে মুশতাকের কক্ষের লোকজন বলেছিল, সেদিন টয়লেটে যাওয়ার পর তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এবং তারপর যথারীতি কারাগারের চিকিৎসক তাকে চিকিৎসা দিয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাজউদ্দীন মেডিক্যালেও নেয়া হয়েছিল। তবে এখনও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসেনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সুরতহাল রিপোর্ট এসেছে যে, শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আর পোস্টমর্টেম চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে যে অভিমত করেছেন, তা লিখিত অভিমত নয়, তা এই প্রতিবেদনে এসেছে। সেটাই সাংবাদিকদের জানালাম। তদন্ত প্রতিবেদনে কোন সুপারিশ ছিল কিনা এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সার-সংক্ষেপ আমাকে দিয়েছে। কারাগারে যদি কোন ধরনের ঘাটতি থাকে, কোন ধরনের অসুবিধা থাকে। তাহলে সুপারিশ থাকে। এ বিষয়ে কোন সুপারিশ করেছে কিনা তা আমার কাছে এখনও আসেনি। কেউ কেউ মুশতাকের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এগুলো মাথায় রেখে, ঘটনাটি জানার জন্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি গঠন করা হয়। এখানে কোন রকম অনিয়ম বা গাফিলতি যদি থাকত, তাহলে নিশ্চয় জানাতো। যদি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে কিছু আসে, তাহলে জানাব। সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. তরুণ কান্তি শিকদারকে আহ্বায়ক করে গঠিত ৫ সদস্যের কমিটি বুধবার বিকেলে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুশতাকের মৃত্যু ছিল ন্যাচারাল ডেথ। উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে ২০২০ সালের ৬ মে মুশতাককে রাজধানীর লালমাটিয়ার বাসা থেকে গ্রেফতার করার পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। পরে অভিযোগপত্র দেয়া হলে সেখানেও তাকে আসামি করা হয়। গত দশ মাসে কয়েকবার আবেদন করেও জামিন পাননি মুশতাক। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে ৫৩ বছর বয়সী মুশতাকের মৃত্যু হয়। তবে কীভাবে তার মৃত্যু হল, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট কোন বক্তব্য না আসায় সন্দেহ প্রকাশ করেন অনেকে। পরদিন সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে মুশতাকের মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ নিয়ে গাজীপুর সদর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে কারা কর্তৃপক্ষ। ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার পর গাজীপুর জেলা প্রশাসক দুই সদস্যবিশিষ্ট ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৫ সদস্যের পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। গত বুধবার বিকেলে দুই কমিটির প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। পেশায় ব্যবসায়ী মুশতাক অনলাইনে লেখালেখিতে বেশ সক্রিয় ছিলেন। তার সঙ্গে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তা সংগঠনের দিদারুল ভূইয়াও এ মামলার আসামি। মুশতাকের মৃত্যুতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ হয়। প্রতিবাদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি তোলা হয়। এছাড়াও কারাগারে বন্দী অবস্থায় মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনাকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
×