ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দৌলতপুরে প্রণোদনার অর্র্থ বঞ্চিত প্রকৃত খামারিরা

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ৪ মার্চ ২০২১

দৌলতপুরে প্রণোদনার অর্র্থ বঞ্চিত প্রকৃত খামারিরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, দৌলতপুর, ৩ মার্চ ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক দুগ্ধ খামারিদের জন্য বরাদ্দ হওয়া সরকারের প্রণোদনার প্রায় পৌনে ৩ কেটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জন্য বরাদ্দ হওয়া এ অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের না দিয়ে বিতরণ করা হয়েছে মসজিদের খাদেম, দৌলতপুর প্রাণিসম্পদ অফিসের গেট সংলগ্ন ওষুধ ব্যবসায়ী ও দালাল চক্র, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং খামার নেই এমন ব্যক্তিদের মাঝে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ও বঞ্চিত দুগ্ধ খামারিরা। প্রণোদনার অর্থ বঞ্চিত ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৌলতপুরে করোনাকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ছোটবড় দুগ্ধ খামারিদের জন্য বরাদ্দ হওয়া সরকারের প্রণোদনার ২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক দুগ্ধ খামারিদের না দিয়ে খামার নেই এমন ব্যক্তিদের দেয়া হয়েছে। দুই তিন শ্রেণীতে ভাগ করে জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২০ হাজার এবং সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা করে এ অর্থ দেয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনার আওতায় আনতে গত আগস্ট মাসে দৌলতপুরের বিভিন্ন এলাকার ২৪৬৬ জনের নামের তালিকা প্রেরণ করে দৌলতপুর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আব্দুল মালেক। এ তালিকায় বাদ পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক দুগ্ধ খামারিসহ বিভিন্ন খামারের নাম। আর এ তালিকা প্রস্তুত করতে সহায়তা নেয়া হয় দৌলতপুর প্রাণিসম্পদ অফিসের সামনে গড়ে ওঠা দালাল চক্রের। তালিকা প্রস্তুত করার সময়ও ওই দালাল চক্র বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ হাতিয়ে নিয়ে খামার নেই এমন সব ব্যক্তিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রেরণ করেছে এমন অভিযোগও রয়েছে। আর অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বুধবার সরজমিনে দৌলতপুর প্রাণিসম্পদ অফিসের গেট সংলগ্ন ওষুধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে। তারা জানান, পশু হাসপাতাল গেট সংলগ্ন ওষুধ ব্যবসায়ী নুরু, নাহারুল, মসজিদের খাদেম তারিকসহ চা বিক্রেতা থেকে শুরু করে প্রতিটি দোকানদার খামারিদের জন্য বরাদ্দ হওয়া প্রণোদনার অর্থ পেয়েছেন। দৌলতপুরের তেলিগাংদিয়া গ্রামের দুগ্ধ খামারি আব্দুস সামাদ খান জানান, করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও সরকারের দেয়া প্রণোদনার অর্থ তিনি পাননি। দৌলতপুরের ২৫টির বেশি ছোট বড় দুগ্ধ খামার রয়েছে যারা সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত। অথচ সরকারের প্রণোদনার টাকা তারা না পেয়ে যাদের খামার নেই, গরু, ছাগল, মুরগি কিছুই নেই তারা পেয়েছেন টাকা। তিনি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল মালেক সরকারের এই অর্থ লুটপাটের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেন। একই অভিযোগ রয়েছে হরনিগাছী গ্রামের দুগ্ধ খামারি লালন, কায়ামারী গ্রামের দুলাল সরকার ও হোসেনাবাদ এলাকার মাসুম আলীসহ অনেকের। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে দৌলতপুর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল মালেক বলেছেন, এখানে কোন অনিয়মের সুযোগ নেই, ভোটার আইডি কার্ড দেখে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আগস্ট মাসে তালিকা যখন প্রস্তুত করা হয় তখন অনেকের খামারে গরু ছিল এখন নাও থাকতে পারে। যারা এ অর্থ পাইনি তারা অভিযোগ করতেই পারে। তিনি বলেন, এখান থেকে আমরা সাড়ে ৭ হাজার জনের নামের তালিকা করে পাঠিয়েছিলাম তার মধ্য থেকে বাছাই করে ২৪৬৬ জন সরকারের প্রণোদনার আওতায় আসে। সরকারের প্রণোদনার ২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঢাকা থেকে মোবাইলে বিকাশে জিটুপির মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকদের হাতে আসে। এ প্রণোদনার অর্থ আগামী ৭ দিন পর্যন্ত দেয়া হবে। এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক খামারিরা সরকারী প্রণোদনার অর্থ পয়নি এমন লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×