ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রিপন চন্দ্র পাল

বন্ধ করুন পাহাড় কাটা

প্রকাশিত: ২২:২৩, ৪ মার্চ ২০২১

বন্ধ করুন পাহাড় কাটা

প্রযুক্তির উৎকর্ষে মানুষ এখন নানামুখী চিন্তা-ভাবনা করতে পারে, জানতে পারে ও দেখতে পারে। সেভাবে এখন সবাই নতুন নতুন জায়গা খুঁজে বের করে ও সেসব অন্বেষণ করতে চায়। সেই অন্বেষণের পাল্লায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। এর প্রভাব ভোগ করতে হচ্ছে পরিবেশের প্রতিটা স্তরের প্রাণীকে বিশেষত চট্টগ্রাম অঞ্চলের। চট্টগ্রাম অঞ্চল পুরোটাই কম-বেশি পাহাড়ে ঘেরা। সেই ১৭৬০ সাল থেকেই এ শহর তৈরি করার জন্য পাহাড় কাটা শুরু হয়। এখন অকারণে পাহাড় কাটা চলছে। বর্ষাকাল এলেই দেশে পাহাড় ধসে অনেক হতাহতের খবর পাওয়া যায়। তাছাড়া রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ছত্রছায়ায় অনেকে এখন পাহাড় দখল করে ইটভাটাসহ নানা রকম স্থাপনা তৈরিতে ব্যস্ত। এমনকি বেআইনীভাবে পাহাড় দখল করে কেটে সমান করে গ্যাস, বিদ্যুত, পানি সংযোগ পেয়ে বাসা ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করে নিচ্ছে কুচক্রী মহল। পাহাড় নিয়ে গবেষণা করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যাপক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, গত তিন দশকে চট্টগ্রাম নগরীতে শতাধিক পাহাড় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এসব পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হয়েছে আবাসন। নগরীতে বর্তমানে টিকে রয়েছে মাত্র ৮৬টি পাহাড়। তবে এগুলোর অস্তিত্বও বিপন্ন। এই ৮৬টি পাহাড়ের মধ্যে অক্ষত রয়েছে মাত্র ১৩টি। অবশিষ্ট ৭৩টি পাহাড় কেটে আবাসনসহ বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের পাঁয়তারা চলছে। এই ৭৩টি পাহাড়ের মধ্যে কিছু পাহাড়ের এক-তৃতীয়াংশ ও কিছু পাহাড়ের দুই-তৃতীয়াংশ ইতোমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। প্রায় ৫০টি পাহাড়ের ওপরে-নিচে ও আশপাশে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে গড়ে তোলা হয়েছে ৯০৭টি বস্তি। তাছাড়া প্রতিনিয়ত পাহাড় নিঃশেষের ফলে ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্র পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। অনেক রকমের গাছ-পালা, পশু-পাখি আজ বিলুপ্তির মুখে। এর প্রভাব খোদ মানুষকেই ভোগাবে। শুধু তাই নয় পাহাড়ে বসবাস করে পাহাড়ের পরিবেশকে আরও সুন্দর করে তোলা জনগোষ্ঠীও অস্তিত্বের সংকটে ধুঁকছে। এসব অপকর্ম থেকে আমাদেও বেরিয়ে আসতে হবে। প্রচলিত যেসব আইন আছে সেসব আইনে যে সাজা বর্ণিত আছে তা আরও বৃদ্ধি করে এর সুপ্রয়োগ জোরদার করতে হবে। পাহাড় দখলবারীদের উচ্ছেদ করতে হলে যতটুকু জনবল বন বিভাগের থাকা উচিত সেসব বৃদ্ধিতেও সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। পাহাড়ে যাতে নিরাপত্তা বাড়ে এবং কেউ দখলদারিত্ব করতে না পারে সেজন্য দেশের নিরাপত্তা বাহিনীসমূহের সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি। দেশ প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে, সে উন্নতির ধারাবাহিকতায় একটা সময় আমরা আমাদের সবকিছু বিনির্মাণের পর একটা ভাল পরিবেশ খুঁজতে থাকব। তাই এখনই যদি এসব মহাক্ষতিকর কাজ করা থেকে বিরত থাকি তাহলে ভবিষ্যতে আমরা অনেক সুন্দর একটা পরিবেশের প্রত্যয় ব্যক্ত করতে পারব। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×