ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আশরাফুল ইসলাম রাকিব

প্রকৃতি হারাচ্ছে জীববৈচিত্র্য

প্রকাশিত: ২২:২২, ৪ মার্চ ২০২১

প্রকৃতি হারাচ্ছে জীববৈচিত্র্য

দখলদারদের দৌরাত্ম্য এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, দখলদারদের উৎখাত এখন সময়ের শ্রেষ্ঠ দাবি। দখলবাজদের কালো হাত আজ সর্বত্র বিরাজমান। তাদের কালো হাতের থাবা এতটাই বিস্তৃত হয়েছে যে, নদী গবেষকদের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশে শহরে প্রবাহিত ২৮টি নদ-নদী এখন দখলের কবলে পড়ে মৃতপ্রায়। রাজধানী ঢাকা শহরের বুড়িগঙ্গার কথা না বললেই নয়। এক সময়ের প্রাণ প্রাচুর্য ভরপুর এই নদীটির আর্তনাদ শোনার আজ যেন কেউ নেই। তুরাগসহ সারা দেশে দখলকৃত নদীগুলোর একই অবস্থা। এই অবস্থা আমলে নিয়ে এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ হাইকোর্ট ২০১৯ সালে নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করে। অর্থাৎ আমাদের দেশের মুনাফালোভী এই হিংস্র দখলবাজরা নদীকে গলাটিপে হত্যা করছে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় রাস্তাগুলোর ফুটপাথ দখলের অবস্থা বড়ই নাজুক। এখানকার ফুটপাথ দেখলে বোঝার উপায় নেই এগুলো ফুটপাথ নাকি ব্যবসাকেন্দ্র। যা মানুষের চলাচলে নিয়ে এসেছে চরম ভোগান্তি। কখনও আবার ঘটছে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা। খাল, বিল, পুকুর ইত্যাদি দখল করেও গড়ে তোলা হচ্ছে শিল্প-কারখানা, বাণিজ্যিক এবং আবাসিক ভবন। যার অধিকাংশই বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড এবং ইমারত বিধিমালা (১৯৯৬) ব্যতিরেকেই নির্মাণ করা হচ্ছে। বন-জঙ্গল উজারকরণ এবং পাহাড় কাটাও চলছে একই হারে। জনজীবনে দখলের প্রভাবও সুদূরপ্রসারী এবং হুমকিস্বরূপ। যত্রতত্র এবং অপরিকল্পিত পাহাড় কাটা হচ্ছে বলে আমরা প্রায়শই পাহাড় ধসের খবর পাই। যা ঝরাচ্ছে বহু মূল্যবান তাজা প্রাণের। বন উজাড়করণের ফলে প্রকৃতি হারাচ্ছে তার জীববৈচিত্র্য। ফলে বহু পশু পাখি বিলুপ্তির পথে। দেশের অর্থনীতির প্রাণ বলা যায় নদী পথকে। কিন্তু দখলের আগ্রাসনের ফলে দেশের প্রধান নদী পথগুলো শুষ্ককালে নৌযান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। যা সামগ্রিকভাবে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্তরায়। অন্যদিকে দেশ ও জাতির শত্রু এই দখলদারদের উৎখাত দেশে এখনও আশানুরূপ হয়নি। সাধারণত দেখা যায় কোন এলাকার দখলবাজ লোকটি কোন না কোন রাজনৈতিক শক্তির অংশ এবং রয়েছে শক্তিশালী বলয়। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আঁতাত করে দখলবাজি করার খবরও আমাদের কানে কম আসে না। রক্ষকই যখন ভক্ষক-এই কথাটিরই যেন বাস্তবায়ন করছেন তারা। আবার দেখা যায় উচ্ছেদের পরেও জমি পুনরায় দখল হয়ে যাচ্ছে। সেখানেও প্রশাসনের রুগ্ন অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। তবে আশার কথা হচ্ছে বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশন জেলা প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে সারাদেশে ৫৭ হাজার ৩৯০ জন নদী দখলদার চিহ্নিত করেছে। ইতোমধ্যে ৩২.৩৭ শতাংশ দখলদার উচ্ছেদ করা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক কিছু অভিযানও জনমনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। কিন্তু অতীতের ন্যায় এ অভিযানগুলো যেন ঝিমিয়ে না পড়ে। কেননা বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে জাতির কল্যাণার্থে এখন আর কালক্ষেপণ করার সুযোগ নেই। সকলের সমন্বয়ে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করে জাতিকে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে হবে। আমরা এদেশের জনগণ এই প্রত্যাশা রাখি যে, বাংলাদেশ সমস্ত দখলদারদের কালো হাত গুঁড়িয়ে দিয়ে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনে সক্ষম হবে। ময়মনসিংহ থেকে
×