ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীর খালের দু’পাশের সকল অবৈধ অবকাঠামো উচ্ছেদ করা হবে ॥ তাজুল

প্রকাশিত: ২২:১২, ৪ মার্চ ২০২১

রাজধানীর খালের দু’পাশের সকল অবৈধ অবকাঠামো উচ্ছেদ করা হবে ॥ তাজুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর খালসমূহের দুই পাশ অবৈধভাবে দখল করে নির্মিত সকল ধরনের অবকাঠামো উচ্ছেদ করা হবে। একই সঙ্গে খালেদ ভেতর থাকা সকল ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম। আর এসব কাজ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলর, প্রশাসনসহ সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সম্পন্ন করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। বুধবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র (এসটিএস) এর উদ্বোধন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এর আগে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের অধীন নন্দীপাড়া ব্রিজ (জিরানী খাল), সুখনগর ব্রিজ (খিলগাঁও-বাসাবো খাল, জিরানী খাল, মাণ্ডা খাল ও সেগুনবাগিচা খালের সংযোগস্থল), পাম্প স্টেশন, কমলাপুর (টিটিপাড়া) বহির্গমন বিশ্বরোড কমলাপুর খাল, শ্যামপুর খাল এবং পান্থকুঞ্জ পার্ক বক্সকালভার্ট পরিদর্শন করেন মন্ত্রী। এ সময় অন্যদের মধ্যে ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মোঃ বদরুল আমিন, প্রধান প্রকৌশলী রেজাউর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামান, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ জাফর আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুন্সী মোঃ আবুল হাশেম, কাজী মোঃ বোরহান উদ্দিনসহ স্থানীয় সরকার বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ওয়াসার কাছ থেকে খাল হস্তান্তরের পর থেকেই ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দুই মেয়র খালসমূহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছেন। শুধু তাই নয় যারা এসব খাল দখল করে দুই পাশে ভবন নির্মাণসহ অন্য অবকাঠামো নির্মাণ করেছেন সেগুলো অপসারণ করছেন। তাজুল ইসলাম বলেন, নগরীর সকল খাল রক্ষণাবেক্ষণ ও সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে দুই মেয়রকে নিয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণে অনেকগুলো সভা করে কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে। এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, এডিস মশা নিধনে তার মন্ত্রণালয় থেকে দুই সিটি কর্পোরেশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ায় এ মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। এখন এ্যানোফিলিস ও কিউলেক্স মশা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই মশাগুলো খুব বিপজ্জনক নয়। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। আমরা সবাই মিলে এই সমস্যা থেকে নগরবাসীকে পরিত্রাণ দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তবে মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি ঢাকা শহরের খাল-নালা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে পারলে এসব মশার অতিষ্ঠ থেকে নগরবাসী অনেকাংশে মুক্তি দেয়া সম্ভব। জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে যে ভাবে কাজ করছে তাতে করে এবছর নগরীতে জলাবদ্ধতার যে প্রতিচ্ছবি তৈরি এবারে তার প্রতিফলন ঘটবে না বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, আমি একটি পাম্প স্টেশনও পরিদর্শন করেছি। ডিএসসসি মেয়র উদ্যোগ নিয়ে মেনটেনেন্স করেছেন এবং সেটি সচল করার ব্যবস্থা করেছেন। আমরা আশা করি, এখন যেভাবে কাজ চলছে, মার্চ-এপ্রিল- মে মাসের মধ্যে অনেক কাজে অগ্রগতি সাধিত হবে। ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, কৌশল পরিবর্তন করেছি, দুই সপ্তাহ পর হতে কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়ে আমি আশাবাদী। পান্থপথের পান্থকুঞ্জ বক্স কালভার্ট ও পান্থকুঞ্জ সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন-এসটিএস) উদ্বোধনের পর মেয়র বলেন, ঢাকাবাসীকে আমরা একটু ধৈর্য ধারণ করতে অনুরোধ করছি। আমরা কৌশল পরিবর্তন করেছি। এখন আমরা যে কার্যক্রম নিচ্ছি, আমাদের সকালের কার্যক্রম ৪ ঘণ্টায় চলছে, বিকেলের কার্যক্রম আমরা আরও বৃদ্ধি করেছি। সুতরাং আমরা আশাবাদী, আগামী দুই সপ্তাহ পর হতে কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তবে ডেঙ্গুর জন্য আমাদের কৌশল পরিবর্তন করে আবার এপ্রিল থেকে আমরা কার্যক্রম আরম্ভ করব। নতুন কৌশল ও কীটনাশক কেন আগে পরিবর্তন করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, আমি একটি বিষয়ে আপনাদেরকে পরিষ্কার করতে চাই। আমাদের বিশেষজ্ঞ যারা আছেন, তারা ঘটনা ঘটে গেলে অনেক বড় বড় পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু ঘটনা ঘটার আগে আমাদের কি করণীয়, আমাদের কি পদক্ষেপ নিতে হবে, সে রকম পরামর্শ আমরা পাইনা। আমাদেরকে বলা হয়েছিল, ডেঙ্গুর প্রকোপটা যেহেতু আছে, তাই এই কার্যক্রম ডিসেম্বর পর্যন্ত চালিয়ে নিতে হবে। কিন্তু সেই কার্যক্রমটা ভুল ছিল। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদেরকে কিউলেক্স মশার বিরুদ্ধে কার্যক্রম নেয়া উচিত ছিল। কারণ, পানিবদ্ধ হয়ে যাচ্ছিল। শেখ তাপস বলেন, আমরা যদি খালগুলো আরও দুমাস আগে পেতাম তাহলে হয়তোবা আমরা বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম আরও বেগবান করতে পারতাম। তাহলে ধীরে ধীরে কিউলেক্স মশার প্রভাব কমে যেত আমরা কীটনাশক পরিবর্তন করলে ফল পেতাম। তিনি বলেন, গত জানুয়ারি থেকে আমরা খালগুলো হতে যে বর্জ্য অপসারণ ও চ্যানেল পরিষ্কারকরণ কার্যক্রম শুরু করেছি, সেই কার্যক্রমের মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রায় ২০ কিলোমিটার খাল হতে বর্জ্য-পলি অপসারণ করা হয়েছে। এই সময়ে আমরা প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন বর্জ্য-পলি অপসারণ করেছি।
×