ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মালদ্বীপে বৈধ হওয়ার জন্য ৪০ হাজার বাংলাদেশীর আবেদন

প্রকাশিত: ২২:১১, ৪ মার্চ ২০২১

মালদ্বীপে বৈধ হওয়ার জন্য ৪০ হাজার বাংলাদেশীর আবেদন

ফিরোজ মান্না ॥ মালদ্বীপে অবৈধ কর্মীদের বৈধতা দেয়ার ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যে দেশটিতে অবস্থানকারী ৪০ হাজার কর্মী আবেদন করেছেন। সরকারী হিসাবে মালদ্বীপে বর্তমানে বাংলাদেশের ৮৫ থেকে ৯০ হাজার কর্মী কাজ করছেন। এদের বেশিরভাগই অবৈধ হয়ে পড়েছেন। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ১৫ হাজারের মতো কর্মী দেশে ফিরে এসেছেন। সম্প্রতি মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের মধ্যে নতুন করে কর্মী নিয়োগ ও অবৈধদের বৈধতা দিতে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওই চুক্তির পর থেকেই দেশটিতে অবৈধ কর্মীরা বৈধ হওয়ার জন্য আবেদন জমা দেয়া শুরু করেছেন। যারা আবেদন করার যোগ্যতা হারিয়েছেন তাদের দেশে ফিরে আসতে হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, মালদ্বীপ সরকার অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ ঘোষণা করেছে। দেশটি নতুন করে বাংলাদেশ থেকে নতুন করে কর্মী নিয়োগ ও অবৈধদের বৈধতা দেয়ার জন্য সম্প্রতি ‘ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ শহিদের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফরে আসেন। ওই সফরের সময় প্র্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের পরই মালদ্বীপে অবস্থানকারী বাংলাদেশী কর্মীরা বৈধ হওয়ার জন্য আবেদন দিতে শুরু করেছেন। মালদ্বীপ সরকার আবেদন গ্রহণ করছে। তবে ঠিক কবে নাগাদ তাদের বৈধতা দেয়া হবে এ বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করেনি। মালদ্বীপ এর আগেও সাধারণ ক্ষমার আওতায় কর্মীদের বৈধতা দিয়েছে। এবারও কর্মীদের বৈধতা দেয়া হবে বলে জানিয়েছে মালদ্বীপে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন। হাইকমিশন মালদ্বীপ সরকারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছে বলে খবর মিলেছে। ভারত মহাসাগরে অবস্থিত ছোট দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে নির্মাণ ও মাছ ধরার কাজ করছেন বাংলাদেশের কর্মীরা। পার্শ্ববর্তী দেশের কর্মীরা ট্যুরিজমসহ ভাল কাজ করছে। তাদের বেতন অনেক ভাল। তারা দক্ষ হিসেবে দেশটিতে তাদের অবস্থান অনেক বেশি ভাল। মালদ্বীপে এত দিন বৈধভাবে যাওয়ার কোন সুযোগ ছিল না। দালালের মাধ্যমে অথবা টুরিষ্ট ভিসা নিয়ে দেশটিতে কাজ করতো। লুকিয়ে কাজ করতে গিয়ে অনেকেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দেশে ফিরে এসেছেন। গত মাসের শুরুর দিকে চুক্তি হওয়ার পর থেকে পুলিশি অভিযান বন্ধ হয়েছে। এখন অবৈধ কর্মীরা বৈধ হওয়ার আবেদন জমা দিতে পারছেন। মালদ্বীপে অবস্থান করা বাংলাদেশী কয়েকজন কর্মী টেলিফোনে জানিয়েছেন, অবৈধভাবে যারা দেশটিতে এসেছেন তারা নানা বিপদের মুখে পড়ছেন। অনেকের কাজ জুটছে না। অনেকে কাজ পেলেও নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না। আবার গ্রেফতার আতঙ্কেও থাকতে হয়েছে। তবে অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার সুযোগের ঘোষণার পর থেকে ধরপাকড় থেমে গেছে। বর্তমানে বৈধ হওয়ার অপেক্ষায় আছেন প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশী কর্মী। মালদ্বীপের অভিবাসন বিভাগ এর আগে জানিয়েছিল তাদের দেশে বিভিন্ন দেশের এক লাখ ৪৪ হাজার ৬০৭ জন কর্মী কাজ করেন। এর মধ্যে ৬৩ হাজার কর্মীই অবৈধ। মালদ্বীপ প্রবাসীরা জানান, দালালের প্রলোভনে পড়ে অনেকেই ‘ফ্রি ভিসার’ নামে এসে এখনও কোন কাজ পান না। কেউ কেউ এক বছরের ভিসা নিয়ে আসার পর আর নবায়ন করতে না পারায় অবৈধ হয়ে যান। আবার কেউ কেউ ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে পালিয়ে থেকে যান। অবৈধ কর্মীদের দুর্দশার শেষ নেই। অবকাঠামো নির্মাণ খাতেই তাঁরা বেশি কাজ করেন। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আছে। মারা গেলেও কোন ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেই। দালালের প্রলোভনে পড়ে অবৈধভাবে মালদ্বীপে যাতে কেউ না আসেন, সে উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা। সরকার বিষয়টি নিয়ে মালদ্বীপ সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। বৈঠকের পর গত মাসের শুরুর দিকে একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তির আলোকে মালদ্বীপ বাংলাদেশ থেকে নতুন করে কর্মী নিয়োগ দেয়ার জন্য একটি চুক্তি করেছে। ওই চুক্তিতেই অবৈধদের বৈধ করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পর থেকে দুই দেশ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। ছোট দেশ মালদ্বীপে প্রায় এক লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী রয়েছে। যা দেশটিতে কর্মরত মোট প্রবাসী কর্মীর ৭০ শতাংশ। প্রবাসী বাংলাদেশীরা এখানে নির্মাণ, পর্যটন, বিপণন, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য খাতসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই কাজ করছেন। সম্প্রতি মালদ্বীপে বেশকিছু প্রবাসী বাংলাদেশী আনডকুমেন্টেড হয়ে পড়েছেন, যার মধ্যে অনেকে ২০১৯ সালে মালদ্বীপ সরকারের গৃহীত নিয়মিতকরণ কার্যক্রমের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন। এছাড়া নতুন কর্মী নিয়োগের বিষয়টি মালদ্বীপ সরকারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হিসাবে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
×