ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাংবাদিক শাহীন রেজা নূরকে শেষ শ্রদ্ধা

প্রকাশিত: ১৯:০৬, ৩ মার্চ ২০২১

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাংবাদিক শাহীন রেজা নূরকে শেষ শ্রদ্ধা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সেজন্য তিনি কলম ধরেছেন, কাজ করেছেন। প্রজন্ম একাত্তর গড়ে তোলায় নেতৃত্বদাতা সাংবাদিক শাহীন রেজা নূর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি কানাডার ভ্যাংকুভারের একটি হাসপাতালে মারা যান। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রয়াত এ সাংবাদিকের কফিনে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। সেখানে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সরকারের মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতা, লেখক, কবি-সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরা তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এর আগে বুধবার ভোরে তার মরদেহ দেশে এসে পৌঁছায়। বিমানবন্দর থেকে প্রথমেই কফিন নিয়ে যাওয়া হয় মোহাম্মদপুরের আসাদ এভিনিউয়ে তার পৈতৃক বাড়িতে। সেখানে জানাজা শেষে মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। পৌনে ১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে আরেক দফা জানাজা হয় তার। পরে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শাহীন রেজা নূরের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা একজন নক্ষত্র হারালাম। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পক্ষের লোক। আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য প্রচণ্ড রকমের আবেগ নিয়ে কাজ করতেন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, শাহীন মৃত্যুর কদিন আগে লিখেছিল, জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে বাধা কোথায়? বঙ্গবন্ধুর সহযোগী শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দীনের ছেলে আক্ষেপ রেখে গেছেন-বাধা কোথায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের, ত্রিশ লক্ষ শহীদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে। এই প্রশ্ন আমাদেরও। আমরা আশা করি, অচিরেই ধর্মের নামে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, শাহীন রেজা নূর তার পিতা শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের আদর্শে উজ্জীবিত ছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী অপশক্তিকে প্রতিরোধ, জামায়াত ইসলামকে নিষিদ্ধ করার দাবিসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি সাহসের সাথে লড়াই করেছেন। তিনি স্পষ্টভাষী ছিলেন। শাহীন রেজা নূরের স্ত্রী খুরশিদ জাহান শাহীন বলেন, তিন বছর ধরে কানাডায় থাকলেও তার মন সবসময় দেশে পড়ে থাকত। তিনি ছিলেন রতœভাণ্ডার, সকল বিষয়ে তার পদচারণা ছিল। শাহীনের মরদেহ দেহ দেশে এনে শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থা করার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জনান খুরশিদ জাহান। তার বড় ছেলে সৌরভ রেজা বলেন, আব্বু দেশের মানুষকে অনেক ভালোবাসতেন, সবকিছুতেই তা প্রকাশ করতেন কোনো না কোনোভাবে। বাবা হিসেবে তিনি কী রকম ছিলেন, সেটা বলতে গেলে বলা যায়, তিনি ছিলেন আমার চোখে শ্রেষ্ঠ বাবা। এছাড়া শ্রদ্ধা জানতে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একে আজাদ, গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর, রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী ড. মকবুল হোসেন, কবি শাহানা আক্তার মহুয়া, ঊদীচীর সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম, প্রজন্ম’৭১ এর পক্ষে আসিফ মুনির তন্ময়, গৌরব একাত্তরের সাধারণ সম্পাদক এফএম শাহীন, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান (আমুস) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন। এছাড়া জাসদ, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট, কেন্দ্রীয় খেলাঘর, বাংলাদেশ আবৃতি শিল্পী সংসদ, র‌্যামন পাবলিশার্স, কণ্ঠশীলনসহ বিভিন্ন সামিাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় প্রয়াত এই সাংবাদিকের কফিনে। শাহীন রেজা নূরের জন্ম ১৯৫৫ সালে মাগুরা জেলার শালিখা থানার শরশুনা গ্রামে। তার বাবা সিরাজুদ্দীন হোসেনের আট সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করেন শাহীন রেজা। তিনি ১৯৭২ সালে ঢাকা বেতার কেন্দ্রে বার্তা বিভাগে অনুলিপিকারের চাকরি নিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন, পরে অনুবাদকের ভূমিকাও পালন করেন। ১৯৭৩ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের শিক্ষানবিশ সহ-সম্পাদক পদে যোগ দেন। একটানা ১৬ বছর ইত্তেফাকে সাংবাদিকতা করার পর ১৯৮৮ সালে তিনি কানাডা যান। সেখানে মন্ট্রিয়লে থেকে বাংলা সাপ্তাহিক প্রবাস বাংলা প্রকাশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। কানাডা থেকে দেশে ফিরে আবারও তিনি দৈনিক ইত্তেফাকে যোগ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের বার্তা বিভাগে অনুবাদক হিসেবে কিছুকাল কাজ করেছেন শাহীন রেজা নূর। তিনি জাতীয় রাজনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে লেখালেখি করতেন।
×