ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৫ লাখ টন চাল আমদানির সময় ১০ দিন করার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন

উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতিতে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ হবে : অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১৮:৪৬, ৩ মার্চ ২০২১

উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতিতে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ হবে : অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ স্বল্পোন্নত (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাওয়ায় বিদেশী বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ হবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণে আরও বড় সুযোগ সৃষ্টি হবে-আমরা যা হারাবো তার চেয়ে অনেক বেশি পাবো। মহান স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে এই অর্জন দেশকে গৌরান্বিত করেছে। রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে সাড়ে ৫ লাখ টন চাল আমদানির সময় ১০ দিন করার একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আগে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ থেকে ৪২ দিনের মধ্যে চাল আমদানি করতে হতো। ওই হিসাবে সময়সীমা ৩২ দিন কমানো হয়েছে। বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ৩টি এবং ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য ২টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। ক্রয় কমিটির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ১টি এবং বিদ্যুৎ বিভাগের ১টি প্রস্তাব ছিল। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ২টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১৯৯ কোটি ২৬ লাখ ৭৬ হাজার ৮৯৯ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে সম্পূর্ণ অর্থই জিওবি থেকে ব্যয় হবে। অর্থমন্ত্রী মহান স্বাধীনতা দিবস স্মরণ করে বলেন, এই মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সবাই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দেশের জন্য ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং ২ লাখ মা- বোন ইজ্জত হারিয়েছেন। তাদের সেই ত্যাগের বিনিময়ে আজ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। এই দেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। এতে কিছু সুযোগ-সুবিধা হারালেও আরও কিছু সুযোগ সুবিধা বাড়বে। যা দেশকে আরও এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এফডিআই বা বিদেশী বিনিয়োগ তেমন নেই। এর একটি কারণ ক্রেডিট রেটিংয়ে আমরা পিছিয়ে ছিলাম। এখন বিদেশী উদ্যোক্তারা এখানে স্বাচ্ছন্দে বিনিয়োগ করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, অবকাঠামো উন্নয়নে বড় বড় ঋণ সুবিধা পাওয়া যাবে। যা দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, তিনি যথার্থই বলেছেন, বাংলাদেশের এই অর্জন দেশের প্রতিটি মানুষের। দেশের সকলে দেশে উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন। এলডিসি গ্রাজুয়েশনে দুই বছর সময় বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা প্রয়োজন ছিল। এলডিসি উত্তরণের পর বেশকিছু সুযোগ সুবিধা কেড়ে নেয়া হয়। এটার জন্য প্রস্তুতি না থাকলে ঝুঁকির পরিমাণ বেড়ে যায়। আর এ কারণে দুই বছর সময় বাড়িয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সুযোগ-সুবিধা চাওয়া হয়েছে। করোনা ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দেশের সবাই টিকা পাবেন। এ কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। অর্থায়নে কোন সমস্যা নেই। আমাদের হাতে টিকা আমদানির টাকা আছে। খাদ্যশষ্য আমদানি করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বন্যার কারণে এ বছর ধান ও গমের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। আর এ কারণে খাদ্যশস্য আমদানি করা হচ্ছে। এটা সাময়িক। এবছর ফসল ভাল হলে আর আমদানির প্রয়োজন হবে না। ১০ দিনে সাড়ে ৫ লাখ টন চাল আমদানি হবে ॥ রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির সময় ১০ দিন করার একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। আগে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ থেকে ৪২ দিনের মধ্যে চাল আমদানি করতে হতো, সেই হিসাবে সময়সীমা ৩২ দিন কমানো হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার। তিনি বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির লক্ষ্যে দরপত্র দাখিলের সময়সীমা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ থেকে ৪২ দিনের পরিবর্তে ১০ দিন করার প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে নীতিগত অনুমোদিত অন্যান্য প্রস্তাবগুলো হলো—প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতায় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে ‘বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার জন্য বেজা ও বেপজা’র মধ্যে স্বাক্ষরিতব্য ডেভেলপমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কতৃক পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষে আন্তর্জাতিক মানের বেসরকারি অপারেটর নিয়োগের লক্ষ্যে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে ‘ইক্যুইপ, অপারেট অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স অব পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল অন পিপিপি মডেল’ প্রকল্পেরর নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
×