ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লিচুর মুকুলে ছেঁয়ে গেছে দিনাজপুর

প্রকাশিত: ১৮:১১, ৩ মার্চ ২০২১

লিচুর মুকুলে ছেঁয়ে গেছে দিনাজপুর

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ মুকুলে ভরে উঠেছে দিনাজপুরের লিচু বাগানগুলো। গাছগুলোতে সদ্য ফোঁটা মুকুল নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে চাষিদের। তাদের আশা আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও প্রকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবার লিচুর বাম্পার ফলন হবে। বলা হয়, লিচুর জেলা দিনাজপুর। দেশব্যাপী লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুরে দিন দিন লিচু চাষ বেড়েই চলেছে। ক্রমান্বয়ে লিচুর ফলন বাড়তে থাকা এই জেলায় এবারও লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জেলার প্রতিটি লিচু গাছের শাখায় শাখায় শোভা পাচ্ছে থোকায় থোকায় মুকুল। গাছে মুকুল আসার সাথে সাথে চাষীরা গাছ পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এখন সারা দেশে কম বেশী লিচু চাষ হলেও দিনাজপুরের লিচু সুস্বাদু হওয়ায় এর কদরই আলাদা। রসালো ফল লিচু অনেকের কাছে রসগোল্লা হিসেবে পরিচিত। লিচু চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর দিনাজপুরের লিচু দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবারও দিনাজপুরে রেকর্ড পরিমাণ লিচুর ফলন হবে বলে তাদের আশা। দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রমতে, ২০০৯ সালে দিনাজপুরে লিচু চাষের জমির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫শ’ হেক্টর। ২০১০ সালে তা এসে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭শ’ ৮০ হেক্টরে, ২০১১ সালে ১ হাজার ৯শ’ ৫৬ হেক্টর এবং ২০১২ সালে ২ হাজার ৫শ’ হেক্টর এবং২০১৩ সালে চাষ হয় ২ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমিতে। এর পর থেকে লিচু চাষ বাড়লেও দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তালিকায় ২০২০ সাল পর্যন্তু লিচু চাষের জন্য কোন জমির পরিমাণ বাড়েনি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. তৌহিদুল ইকবাল বলেন, ‘চলতি বছরে দিনাজপুরে চার হাজার ১শ’ ৮০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দিনাজপুরের লিচু সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় দেশব্যাপী এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই অঞ্চলের লিচুর মধ্যে চায়না থ্রি, বেদেনা, বোম্বাই ও মাদ্রাজি উল্লেখয্যেগ্য। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে এবার সকল প্রজাতির লিচুর বাম্পার ফলনের আশা প্রকাশ করেন তিনি। প্রতিবছর দিনাজপুরের লিচু দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। লিচু লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় প্রতিবছরই লিচু চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবারও দিনাজপুরে রেকর্ড পরিমাণ লিচুর ফলন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, দিনাজপুরের লিচু সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় দেশব্যাপী এর চাহিদা রয়েছে। দিনাজপুর থেকে অনেক আগে একবার মধ্যপ্রাচ্যের লিচু রফতানি হয়েছিল। লিচুর মান ও উৎপাদনের পরিমাণসহ নানাদিক বিবেচনা করে দিনাজপুরে লিচু সংরক্ষণাগার, পক্রিয়াজাতকরণ ও লিচু গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। যাতে করে লিচু দিয়ে বিভিন্ন প্রকার খাদ্য তৈরি করে দেশ-বিদেশে পাঠানো যায়। উপ-পরিচালক বলেন, ইতোমধ্যে লিচু গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। আশা করা হচ্ছে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার ফলন ভাল হবে। কোন সময়ে কোনো কীটনাশক, বালাইনাশক ব্যবহার করা উচিত সে পরামর্শ কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের নিয়মিত দিয়ে আসছেন।’ দিনাজপুর সদর, বিরল, বোচাগঞ্জ, কাহারোল, চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ, খানসামায় চায়না থ্রি, বেদেনা, বোম্বাই ও মাদ্রাজি, কাঠালী নামে লিচু চাষ হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে এবার এসব প্রজাতির লিচুর বাম্পার ফলনের আশা করছে চাষিরা। দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাড়ির বসতভিটায় বা আঙ্গিনা ও এর আশপাশে লিচু গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। মুকুলের সঙ্গে ফুলে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন আর ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাকে এলাকা মুখড়িত হয়ে উঠেছে। লিচু বাগানগুলোতে ফুল আসা থেকে লিচু আহরণ পর্যন্তু ৩-৪ মাস লিচু বাগানের সঙ্গে সম্পৃক্তদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়। ফুল আসার ১৫ দিন আগে এবং ফুল আসার ১৫ দিন পরে সেচ দিতে হয়। সে অনুযায়ী গাছে মুকুল আসার সঙ্গে সঙ্গেই মুকুলকে টিকিয়ে রাখতে লিচু চাষী ও ব্যবসায়ীরা স্প্রে করতে শুরু করেছেন। এছাড়া মুকুল গাছ থেকে যেন ঝড়ে না পড়ে, সে জন্য গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি ও সার ব্যবহার করছেন। দিনাজপুর সদর উপজেলার মাসিমপুর এলাকার লিচু চাষী ইমতিয়াজ আলী জানান, লিচুর মুকুল আসার ১৫ দিন আগে থেকেই পরিচর্যা করা শুরু হয়েছে। নিয়মিত স্প্রে ও সেচ দিতে হচ্ছে। লিচু গাছ গুলোতে মুকুল আসতেই রাজশাহী, রংপুর, চট্রগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার লিচু ব্যবসায়ীরা দিনাজপুরে আসতে শুরু করেছেন। তারা আগাম লিচু বাগান কিনছেন বেশি লাভের আশায়।
×