ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কলাবাগানে মৌমিতার মৃত্যু রহস্যের জট এখনও খোলেনি

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ৩ মার্চ ২০২১

কলাবাগানে মৌমিতার মৃত্যু রহস্যের জট এখনও খোলেনি

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ রাজধানীর কলাবাগানে বহুতল ভবন থেকে নিচে পড়ে বিদেশপড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী তাজরিন মোস্তফা মৌমিতার (১৯) মৃত্যুর রহস্যের জট এখনও খুলেনি। ঘটনার তিনদিন পর সোমবার রাতে নিহত মৌমিতার বাবা মোঃ কামাল মোস্তফা খান শামীম বাদী হয়ে ওই বাড়ির মালিকের ছেলে ফাইজারসহ পাঁচজনকে আসামি করে কলাবাগান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ তরুণ ফাইজার ও তার বন্ধুদের খুঁজছে। এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্র ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জনকণ্ঠকে জানান, বাড়ির মালিকের ছেলে ফাইজারসহ ৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে। ফাইজারকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে আসল ঘটনা জানা যাবে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি আত্মহত্যা না হত্যাকাণ্ড। ওসি জানান, ঘটনার দিন মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে বাড়ির মূল আসামি ফাইজারের বন্ধু আদনানকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তা যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, আদনানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে তথ্য মেলেনি। রিমান্ড নিয়ে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অপরদিকে নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছেন, মৌমিতাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এতে বাড়ির মালিকের ছেলে ফাইজার ও তার বন্ধুরা জড়িত থাকতে পারেন। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে। অন্যদিকে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ সোহেল মাহমুদ জানান, প্রাথমিকভাবে মৃত মৌমিতার শরীরে ধস্তাধস্তির চিহ্ন বা যৌন হয়রানির শিকার হয়ে মারা যাওয়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে তার শরীরের যেই আঘাতগুলো রয়েছে। তা ভবন থেকে পড়ে যাওয়ার কারণে হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। নিহতের স্বজনেরা জানায়, মৌমিতা ও তার পরিবার কলাবাগান ৮ নম্বর রোডের ২ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে। গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মৌমিতা সাততলা ভবনটির ছাদে ওঠেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে পরিবার জানতে পারে, মৌমিতা ছাদ থেকে পড়ে গেছেন। ভবনের পেছনের গলিতে তার দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাকে উদ্ধার করে গ্রীন রোড গ্রীনলাইফ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শনিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে রাতে রাজধানীর রায়ের বাজার কবরস্থানে মৌমিতাকে দাফন করা হয়। স্বজনদের অভিযোগ, ফাইজার দীর্ঘদিন ধরে মৌমিতাকে উত্ত্যক্ত করছিলেন। ফাইজার বাসার ছাদে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতেন। মৌমিতা পড়ালেখা শেষে মাঝেমধ্যে বিকেলে ছাদে উঠলেও তাকে উত্ত্যক্ত করতেন ফাইজার। মৌমিতার পরিবার বিষয়টি ফাইজারের পরিবারকে জানালে তারা ছেলের পক্ষ নেয়। নিহত মৌমিতার ফুপা মোঃ মোসাব্বির হোসেন বলেন, বাড়ির মালিকের ছেলে ফাইজারসহ ৫জনকে আসামি করে কলাবাগান থানায় সোমবার রাতেই আমরা মামলা করেছি। তিনি জানান, মৌমিতা ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর মালয়েশিয়ায় পড়ালেখা করার জন্য মা-বাবাসহ চলে যায়। নিহত ছাত্রীর বাবা কামাল মোস্তফা শামীম জানান, তাদের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ভুয়াপুর ঘাটানদি গ্রামে। তিন মেয়ের মধ্যে মৌমিতা মেজো। তারা সপরিবারে মালয়েশিয়াতে থাকতেন। মেয়ে মৌমিতা মালয়েশিয়ার এশিয়ান প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির বিএসসি ইঞ্জিনিয়িরিং ২য় বর্ষে পড়তো। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে গত বছরের ১৮ জুলাই তারা ঢাকায় ফিরে আসেন। এরপর থেকে কলাবাগান ৮ নম্বর রোডের ২ নম্বর ৭ তলা ভবনের ৪র্থ তলাতে থাকেন। ঢাকায় আসার পর থেকে মেয়ে মৌমিতা অনলাইনে ক্লাস করতো। তিনি জানান, কলাবাগানের ওই বাড়ির মালিকের ছেলে ফাইজার তাকে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করত। ফাইজারের বন্ধু আদনানও তার সঙ্গে মিলে মৌমিতাকে উত্ত্যক্ত করত। বাসার বাড়িওয়ালার একটিই ছেলে। সে বাইরে থেকে বিভিন্ন ছেলেদের বাসায় নিয়ে আসত। গত সপ্তাহে মৌমিতার মা ফাইজারের মাকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তবে তিনি উল্টা প্রতিক্রিয়া করেছেন মৌমিতার মায়ের ওপর। ফাইজারের বাবা জানান, আমার ছেলে যা মনে চায় তাই করবে। আপনার মেয়েকে বের হতে না দিলেইতো হয়। আমার ছেলেকে কেন থ্রেট দিতে আসছেন। মৌমিতার বাবা কামাল মোস্তফা জানান, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মৌমিতা ছাদে উঠে। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে শুনি সে পড়ে গেছে ছাদ থেকে। সেখানে আমার বাসার কাজের ছেলেও দেখেছে অনেকে ক্রিকেট খেলছে, হৈচৈ করছে। আমি মৌমিতাকে মেসেজ দিয়েছিলাম সে বলল আসতেছি। এরপর আমি গ্রীন রোডে আমার অফিসে চলে যাই তখন আমার ছোট মেয়ে ফোনে বলে, আব্বু তাড়াতাড়ি গ্রীনলাইফ হাসপাতালে আস। মৌমিতার ফুপু শাহনেওয়াজ খানম বলেন, ঘটনার সময় ছাদে ফাইজার ছিল। বিকেলে ছাদের দরজা লাগিয়ে দিয়েছিল। আমাদের ধারণা মৌমিতাকে ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই সে মৌমিতাকে উত্ত্যক্ত করছিল।
×