ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ৫০ ভাগের বেশি কাজ সম্পন্ন

এবার বর্ষায় চট্টগ্রামে জলজট থাকছে না

প্রকাশিত: ২৩:২১, ৩ মার্চ ২০২১

এবার বর্ষায় চট্টগ্রামে জলজট থাকছে না

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বর্ষা মৌসুম আসন্ন। এ মৌসুম এলেই অতীতে পুরো চট্টগ্রাম মহানগর ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে থাকত। এবার সে আশঙ্কা আর নেই। নগরবাসীর এ অভিশাপ থেকে সমূহ রক্ষা পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্টভাবে ৩৬টি খালে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা খালের দুপাড়ে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ব্রিজ, কালভার্ট পুনঃসংস্কার ইত্যাদি নিয়ে এ বিষয়ে গৃহীত চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের ৫০ শতাংশেরও বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মহানগরীর খাল, নালার যাবতীয় কার্যক্রম মূলত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় থাকলেও কাজের গতি বাড়াতে সরকারী নির্দেশে এ কাজ দেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (চউক)। চউক এ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য এমওইউ স্বাক্ষরের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর হাতে অর্পণ করেছে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর কুইক রেন্সপন্স টিম গঠন করে জলাবদ্ধতার মূল কারণ চিহ্নিত করে ৩৬টি খালের সংস্কার কাজ শুরু করে। শুরুতে খালের দুপাশে উচ্ছেদ কার্যক্রম চলেছে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে। যা এখনও চলমান। খালের দুপাশে যানবাহন চলাচলের রাস্তা এবং হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে করে দেয়া হচ্ছে। অতীতে নগরীর অধিকাংশ খালের দুপাশ অবৈধভাবে দখল হয়ে যায়। বিভিন্ন খালের ওপর অবৈধ স্থাপনা নির্মিত হয়। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান অনেকাংশে সম্পন্ন হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনও চলমান আছে। অবৈধ দখলদারদের অনেকে নিজ উদ্যোগে জায়গা ছেড়ে দিয়েছে, সরিয়ে নিয়েছে স্থাপনা। সেনাবাহিনীর ৩৪ ইসিবি প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোঃ শাহ আলী কাজের অগ্রগতি নিয়ে মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে জানান, ইতোমধ্যে পুরো কাজের ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এরমধ্যে সম্পন্ন হওয়া কিছু কার্যক্রম চউকের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তরের প্রস্তুতি নিয়েছে। বর্তমানে যেসব খালের সংস্কারসহ যাবতীয় কাজ পুরোদমে চলছে সেগুলো হচ্ছে মির্জা খাল, ত্রিপুরা খাল, গুপ্তা খাল, রুবি সিমেন্ট খাল, নয়ারহাট খাল, ফিরিঙ্গীবাজার খাল, টেকপাড়া খাল, মোগলটুলি খাল, গয়নাছড়া খাল (১ ও ২), ডোমখালি খাল, মহেশখাল, রামপুরা খাল, নাসির খাল, আজব বাহার খাল, রাজাখালি খাল (১, ২, ৩), চাক্তাই ডাইভারশন খাল, চাক্তাই খাল, বাকলিয়া খাল, মরিয়ম বিবি খাল, হিজড়া খাল, কলাবাগিচা খাল, জামালখান খাল, বদরখালি খাল, মহেশখালী খাল, নোয়া খাল, ব্রাহ্মণশাহী খাল, শীতল ঝর্ণা খাল, উত্তরা খাল, সদরঘাট খাল (১ ও ২), বির্জা খাল, পাকিজা খাল, খন্দকিয়া খাল। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার ৫ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার পর এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক দফতর সূত্রে জানা গেছে, ৩৬ খালের মধ্যে ১৭টি খালে রিটেইনিং ওয়ালের নির্মাণ কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এসব রিটেইনিং ওয়ালের দূরত্ব ১৭৬ কিলোমিটার। ৫৪টি ব্রিজ, কালভার্টের ৮৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জোয়ারের পানি প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্মাণ করা হচ্ছে ৫টি স্লুইচগেট, যার ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নগরীর ২২টি স্পটে অতীতে বর্ষার পানি আটকে থাকত। সেই পানি যাতে দ্রুত বের হয়ে যেতে পারে তার সংস্কার কাজও সম্পন্ন হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় এগারো কিলোমিটার নতুন ড্রেন। এছাড়া প্রায় ষোল কিলোমিটারজুড়ে রাস্তাসংলগ্ন ড্রেন নির্মাণের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। ১৭৬ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়ালের মধ্যে ৪৮ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০ কিলোমিটারজুড়ে কাজ বর্তমান চলমান, যার ৪০ শতাংশ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
×