ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নের আহ্বান

প্রকাশিত: ২৩:২০, ৩ মার্চ ২০২১

ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নের আহ্বান

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ টানা তৃতীয় মেয়াদে অর্থাৎ এক যুগ ধরে টানা ক্ষমতায় থাকলেও আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার বলে খ্যাত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি ততটা মজবুত হয়নি। অনেক নগর নেতাদের বক্তব্যেও উঠে এসেছে যে, কিছু নেতার ভাগ্যের উন্নতি হলেও দলের সাংগঠনিক উন্নতি হয়নি গত এক যুগে। মহানগরের ওয়ার্ড-থানা-ইউনিয়নে পকেট কমিটি আর নিজস্ব বলয় সৃষ্টির প্রচেষ্টার কারণে পুরো ঢাকা মহানগরে দুঃসময়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বদলে সুবিধাবাদীরাই রয়েছে সুবিধাজনক অবস্থানে। বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় অতিদ্রুত তৃণমূলে সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে দলটির হাইকমান্ড থেকে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পর সোমবার অনেক রাত পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভাতেও বিষয়টি নিয়ে সরব ছিলেন নগর নেতারা। গত ১৫-১৬ বছরেও ঢাকা মহানগরে কোন ইউনিট সম্মেলন করতে না পারার ব্যর্থতায় তীব্র অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন বর্ধিত সভায় থাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারাও। বৈঠকে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, শুধুমাত্র সিভি (জীবন বৃত্তান্ত) নিয়ে কমিটি গঠন করা আর চলবে না। এখন থেকে গঠনতন্ত্র মেনেই তৃণমূল সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে অতীতের মতো সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ও সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে তুলতে হবে। সুবিধাবাদী ও দলের সুনাম ক্ষুণ্ন্নকারীদের বাদ দিয়ে দলের ত্যাগী, আদর্শিক ও পরীক্ষিত নেতাদের নিয়ে আসতে হবে মহানগরের থানা-ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের নেতৃত্বে। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের বর্ধিত সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, দলের অভ্যন্তরে সুবিধাবাদী অনেক বসন্তের কোকিল ঢুকে পড়েছে। এই সুবিধাবাদী বসন্তের কোকিলরা দুঃসময় এলে দলের সঙ্গে থাকবে না। তাই এই সুবিধাবাদীদের হাত থেকে, বসন্তের কোকিলদের হাত থেকে আওয়ামী লীগকে রক্ষা করতে হবে। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ইতোমধ্যেই সম্মেলন শুরু হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন নেত্রী (শেখ হাসিনা)। আমরা এই বর্ধিত সভায় সুস্পষ্টভাবে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে গঠনতন্ত্র অনুসরণে একটা গাইডলাইন দিতে চাই। পাশাপাশি কমিটি গঠন করার ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান ভারি করার জন্য নিজের লোক দিয়ে কমিটি গঠন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সোমবারের বর্ধিত সভায় ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে পদ্ধতিতে সম্মেলন করে নেতা নির্বাচন করার কথা, সেই পদ্ধতি থেকে কিন্তু আমরা সরে এসেছি। আমরা সিভি নেই, তা যাচাই-বাছাই করে নগরের বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করি। কিন্তু আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য, আমাদের গঠনতন্ত্র এইভাবে কমিটি করার প্রক্রিয়াকে অনুমোদন দেয় না। দীর্ঘদিন যাবত নগরে আমরা ইউনিট কমিটির সম্মেলন করতে পারিনি। অনেকদিন ধরেই নগরের বেশিরভাগ জায়গায় (উত্তর-দক্ষিণে) সভাপতি-সাধারণ সর্বস্ব একটা কমিটি আছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। সভায় বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা তুলে ধরে মির্জা আজম আরও বলেন, আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিন্তু লক্ষ্য স্থির করে দিয়েছেন। এই বিশেষ বর্ধিত সভার টার্গেট হচ্ছে যে, আমাদের ইউনিট গঠনের কাজ শুরু করতে হবে। নগর আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। আজ আওয়ামী লীগ ১২ বছর যাবত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও সাহসী নেতৃত্বের কারণেই আমরা কিন্তু টানা তিনবার ক্ষমতায় আছি। এ সময়ে দেশের প্রত্যেকটা মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। শুধু মানুষের উন্নয়ন নয়, আমাদের নেতাকর্মীদেরও কিছু না কিছু উন্নতি হয়েছে। তাই এবার দলের জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হলে নগর আওয়ামী লীগকেও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হবে। বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেন, সংগঠনকে প্রতিটি পর্যায়ে একেবারে ইউনিট থেকে ওয়ার্ড, থানা মহানগর প্রতিটি পর্যায়ে সুশৃঙ্খল এবং সুসংগঠিত করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যে বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রতিদিন নিরলস পরিশ্রম করছেন, তার সুযোগ্য কর্মী হিসেবে আমরা যেন প্রতিটি কাজের স্বাক্ষর রাখতে পারি। আমাদের প্রত্যেকের এই অনুপ্রেরণা জোরদার করতে হবে। বৈঠক সূত্র জানায়, বিশেষ বর্ধিত সভায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও দুর্দিনের ত্যাগী নিবেদিত নেতাকর্মীদের বঞ্চিত হওয়ার কথাও কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আছি। আজকে আমাদের সংগঠন যেভাবে মজবুত থাকার কথা ছিল, সেভাবে কিন্তু সংগঠন নেই। সংগঠন অনেক দুর্বল হয়ে গেছে, সুবিধাবাদীরা দলের মধ্যে ঢুকে গেছে। এসব সুবিধাবাদীদের ও দলের সুনাম ক্ষুণ্ন্নকারীদের বাদ দিতে হবে। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন করে সংগঠনকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে চাই। তিনি মহানগরের এমপি, কাউন্সিলরসহ জনপ্রতিনিধিদের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করার আহ্বান জানান।
×