স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে এখন ভোটার ১১ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ৬৬৯ জন। তালিকা হালনাগাদের পর নতুন ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে ১৯ লাখ ১৮ হাজার ৫৬ জন। হালনাগাদ শেষে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করে। এদিকে জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ইসিকে হেয় ও অপদস্ত করতে যা করা দরকার সবই করছেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। একই অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে ক্ষমতা হস্তান্তর স্বাভাবিক হতে পারে না। নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত তালিকা অনুসারে মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৯৮ হাজার ৫ জন। আর নারী ভোটার ৫ কোটি ৫১ লাখ ২২ হাজার ২২৩ জন। এ হালনাগাদ তালিকা অনুসারে তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার সংখ্যা ৪৪১ জন। এবার ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় মৃত্যুজনিত কারণে কর্তন করা হয়েছে ১৬ হাজার ৪৯৯ জনের নাম। আর হালনাগাদ তালিকা অনুসারে নতুন ভোটার হয়েছেন ১৯ লাখ ১৮ হাজার ৫৬ জন।
জাতীয় ভোটার দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেন ব্যক্তিগত স্বার্থে ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নির্বাচন কমিশনকে হেয় করে চলেছেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি অভ্যাসগতভাবে আমাদের নির্বাচন কমিশনে যোগ দেয়ার পরদিন থেকে যা কিছু ইসির নিগেটিভ দিক তা পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে পাঠ করতেন। আজও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ভোটার দিবস উপলক্ষে মাহবুব তালুকদার একটা রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন।
সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশনের স্বার্থে মাহবুব তালুকদার কাজ করেন না। ব্যক্তি স্বার্থে ও একটা উদ্দেশ্য সাধনে, এ নির্বাচন কমিশনকে অপদস্ত করার জন্য যখন যা করা দরকার তিনি তাই করেছেন। নির্বাচন কমিশনে তিনি যোগদানের পর যতগুলো সভা হয়েছে সব সময় এটা করতেন। আরও একটা বছর আছে তা তিনি বলতে থাকবেন। ভেবেছিলাম ভোটার দিবস হিসেবে তিনি কিছু বলবেন, কিন্তু তিনি রাজনৈতিক বক্তব্য রাখলেন। ইসিকে কতখানি নিচে নামানো যায়, হেয় করা যায়, অপদস্ত করা যায় তিনি তা করে চলেছেন।
সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশনের ভুলত্রুটি, এখান থেকে একটা, ওখান থেকে একটা, ডাস্টবিন থেকে একটা পুরনো কাগজপত্র বের করে একটা কিছু দাঁড় করানো সম্ভব। ইসির কার কি দায়িত্ব, কি পরামর্শ, কর্মকর্তারা কি কাজ করছেন- এগুলো করেন কিনা, এটা করলে ভাল হতো।
সিইসির বক্তব্যের আগে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ‘আমার বক্তব্য’ শিরোনামে লিখিত বক্তব্যে বলেন, এককেন্দ্রিক স্থানীয় নির্বাচনের তেমন গুরুত্ব নেই। নির্বাচনে মনোনয়ন লাভই এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। স্থানীয় নির্বাচনেও হানাহানি, মারামারী, কেন্দ্র দখল, ইভিএম ভাংচুর ইত্যাদি মিলে এখন অনিয়মের মডেল তৈরি হয়েছে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার না হলে এখন যে ধরনের নির্বাচন হচ্ছে তার মান আরও নিম্নগামী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, একথা ধ্রুব সত্য যে, নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্র উত্তরণের একমাত্র পথ। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশীদারমূলক ও গ্রহণযোগ্য না হলে ক্ষমতা হস্তান্তর স্বাভাবিক হতে পারে না। নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য না হলে দেশের স্থিতিশীলতা, সামাজিক অস্থিরতা ও ব্যক্তির নৈরাজ্য বৃদ্ধি পায়।
মাহবুব তালুকদার বলেন, নৈরাজ্যপ্রবণতা কোন গণতান্ত্রিক দেশের জন্য মোটেও কাম্য নয়। দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আশা-আকাক্সক্ষা রূপদানের জন্য নির্বাচন কমিশনের ওপর সাংবিধানিক দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে না পারলে আমরা গণতন্ত্র অস্তাচলে পাঠানোর দায়ে অভিযুক্ত হব। তিনি বলেন, আমরা দেশব্যাপী পৌরসভা নির্বাচনের প্রায় শেষ পর্যায়ে। এপ্রিল মাস থেকে ধাপে ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় নির্বাচনগুলোর গতিপ্রকৃতি দেখে আমার ধারণা হচ্ছে, বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনের যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও ভারসাম্য রক্ষিত হওয়া প্রয়োজন ছিল তা হচ্ছে না। এককেন্দ্রীয় নির্বাচনে স্থানীয় নির্বাচনের তেমন গুরুত্ব নেই। স্থানীয় নির্বাচনেও এখন একটা অনিয়মের মডেল তৈরি হয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: