ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জনগণের যেন খাদ্য সমস্যা না হয় ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ৩ মার্চ ২০২১

জনগণের যেন খাদ্য সমস্যা না হয় ॥ প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা প্রতিরোধে সময়মতো টিকা দেয়ার জন্য প্রয়োজনে আরও টিকা কেনা হবে। আর টিকার জন্য টাকা প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের কৃষি উৎপাদন যাতে বিঘ্নিত এবং মানুষের খাদ্য সমস্যা না হয় সেই নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে সরকারের নেয়া বিভিন্ন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালকদের (পিডি) প্রকল্প এলাকায় থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন সরকারপ্রধান। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এসব নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিবরা রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত থেকে এবং প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এনইসি সভায় অংশ নেন। এনইসি সভায় চলতি অর্থবছরের জন্য এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এর মধ্যে সরকারী তহবিলের ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৬৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। অবশ্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব ১১ হাজার ৬২৮ কোটি ৯০ লাখ টাকাসহ সংশোধিত এডিপি সর্বমোট আকার দাঁড়াবে দুই লাখ ৯ হাজার ২৭১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সংশোধিত এডিপির বা চূড়ান্ত এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা খাতে কমছে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। এছাড়া সভায়, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ প্রণীত ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর জুলাই ২০২০ হতে জানুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) সেক্টর পুনর্বিন্যাস অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সভা শেষে দুপুরে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী সাংবাদিকদের সামনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাসহ আরএডিপির তথ্য তুলে ধরেন। সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আজ (মঙ্গলবার) নির্দেশনা দিয়েছেন যে, নদীভাঙ্গন রোধে যেন শুষ্ক মৌসুমে কাজ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনাকালে সারাবিশ্বে যেখানে অর্থনীতি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে, সেখানে আমরা যেভাবে অর্থনীতি চালু রেখেছি, সেটা বজায় রাখতে হবে। আমাদের এখন গুরুত্ব দিতে হবে যে, খাদ্য উৎপাদন, মানুষকে খাদ্য সরবরাহ, সময়মতো ভ্যাকসিন দেয়ার ওপর। এজন্য প্রয়োজনে আরও ভ্যাকসিন কেনা হবে, সেজন্য অর্থ সংস্থান রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় যে বিষয়গুলো আছে, অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সেখানে গুরুত্ব দিতে হবে। যাতে মানুষের খাদ্য সমস্যা না হয়, কৃষি উৎপাদন বিঘ্নিত না হয় এই নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী যথাসময়ে এবং যথাসম্ভব আইন-কানুন মেনে সব প্রকল্প সমাপ্ত করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। সরকারের নেয়া বিভিন্ন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালকদের প্রকল্প এলাকায় থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। একইসঙ্গে একই ব্যক্তিকে যেন একাধিক প্রকল্পের পিডি হিসেবে দায়িত্ব না দেয়া হয়, সে নির্দেশনাও দিয়েছেন বলে জানান সচিব। এদিকে এনইসি সভায় দারিদ্র্য বিমোচনের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পসমূহের অগ্রাধিকার বিবেচনায় রেখে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) বাজেট চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। সংশোধিত এডিপিতে খাত ভিত্তিক সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে পরিবহন খাত। এছাড়াও স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ১৪ হাজার ৯২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা মূল এডিপির ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। মূলত কোভিড-১৯ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতকে এবারের সংশোধিত এডিপিতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সংশোধিত এডিপির আকার ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। তবে এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী জানান, সংশোধিত এডিপির জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে মোট দুই লাখ তিন হাজার ৮৬৬ কোটি ৭৫ লাখ প্রাথমিক চাহিদা পায় পরিকল্পনা কমিশন। সবকিছু বিবেচনা করে সংশোধিত এডিপির আকার এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়। পরিকল্পনা বিভাগের সচিব বলেন, কোভিডের কারণে স্বাস্থ্য খাত ও দারিদ্র্য বিমোচনকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুত উৎপাদন, আইসিটি শিক্ষার উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাসকরণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, অতিবৃষ্টি ইত্যাদির ক্ষয়ক্ষতি পুনর্বাসন সংক্রান্ত প্রকল্পে অগ্রাধিকার বেশি দেয়া হয়েছে। এবারের সংশোধিত এডিপির দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে সচিব বলেন, অন্য বছর মার্চের মাঝামাঝি বা শেষে এটি অনুমোদন হয় এবার শুরুতেই করতে পেরেছি। আর এবারই প্রথম সফটওয়ারের মাধ্যমে অনলাইনে কপি ইনপুট দেয়া হয়েছে। এবছর ৪৪২টি প্রকল্প সমাপ্তির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এ জন্য বরাদ্দও দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও আছে এ বিষয়ে উল্লেখ করে সচিব বলেন, সে সকল প্রকল্প সমাপ্তির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা সময়মতো শেষ করতে হবে, কোনমতে সময় বৃদ্ধি করা যাবে না। সচিব আরও বলেন, আমরা একটি প্রস্তাব দিয়েছি ভবিষ্যতে প্রতিবছর আরএডিপিতে প্রকল্পের সমাপ্তির জন্য নির্ধারণ করলে তা সমাপ্ত করতে হবে। পরিকল্পনা সচিব বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপিতে সর্বমোট ১৭৮৫টি প্রকল্প। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১৬৪০টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৪৫টি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্পোরেশনের ১০১টি প্রকল্পসহ ২০২০-২১ অর্থবছরে এডিপির সর্বমোট প্রকল্প ১৮৮৬টি। এছাড়া সংশোধিত এডিপিতে ৪৮৯টি প্রকল্প বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বৈদেশিক সাহায্যে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত ১৩০টি নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এবার সংশোধিত এডিপিতে, বৈদেশিক অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিপূরক অভ্যন্তরীণ উৎস বরাদ্দের প্রস্তাবকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষি খাতে ৭ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা মোট এডিপির ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগে ১৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা মোট সংশোধিত এডিপির ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। এছাড়া পানি সম্পদ খাতে ৬ হাজার ৭০৯ কোটি ও শিল্প খাতে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২০২১ সালে ঘরে ঘরে বিদ্যুত সুবিধা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে বিদ্যুত খাতে ২১ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা মোট এডিপি ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। শ্রম ও কর্মসংস্থান খাতে ৫৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দেশজ সম্পদ, বৈদেশিক অর্থায়ন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপি সংশোধন করা হয়েছে। এবার প্রথমবারের মতো অনলাইন পদ্ধতিতে সংশোধিত এডিপি অনুমোদন দেয়া হয়েছে যা বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। মন্ত্রণালয়/ বিভাগের বরাদ্দ চাহিদা, অর্থ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত সম্পদ এবং সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের বিষয়টি আরএডিপি প্রণয়নে বিবেচনা করা হয়েছে। সংশোধিত এডিপিতে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার, অধিক কর্মসংস্থান, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন, মহামারি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, খাদ্য উৎপাদন, খাদ্য নিরাপত্তা ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চয়তাকরণ করা হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন ও দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
×