ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মূলধন সঙ্কটে ১০ ব্যাংক

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ৩ মার্চ ২০২১

মূলধন সঙ্কটে ১০ ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মহামারীতে বিশেষ সুবিধা এবং নানা ছাড়ের কারণে কাগজে-কলমে খেলাপী ঋণের পরিমাণ কমেছে। তারপরও মূলধন সংরক্ষণ পরিস্থিতির তেমন উন্নতি করতে পারেনি বেশকিছু ব্যাংক। ডিসেম্বর শেষে দেশের সরকারী-বেসরকারী ১০টি ব্যাংক ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ করতে পারেনি। ফলে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে এসব ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত নিয়ে ঋণ দেয়। সেই ঋণ খারাপ হয়ে পড়লে সেই অনুপাতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। আবার খারাপ ঋণের ওপর অতিরিক্ত মূলধন রাখার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রীতি ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী ঝুঁকি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বর্তমান নিয়মে ব্যাংকগুলোকে ৪০০ কোটি টাকা অথবা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশের মধ্যে যা বেশি সেই পরিমাণ অর্থ ন্যূনতম মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। এ শর্ত পূরণে ডিসেম্বর শেষে ব্যর্থ হয়েছে ১০টি ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে মূলধন সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো হলো রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বেসরকারী খাতের এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। এছাড়া বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। সব মিলিয়ে এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। এরমধ্যে দুই বিশেষায়িত ব্যাংকসহ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৭ ব্যাংকের ঘাটতি ২৫ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, খেলাপী ঋণসহ নানা কারণে ব্যাংক খাত ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এটিকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন। এতে করে দেশী ও বৈদেশিক বিনিয়োগের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত যত দ্রুত সম্ভব এ সঙ্কট উত্তরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিভিন্ন সুবিধার পরও রাষ্ট্রীয় মালিকানার ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পাঁচটি এখন মূলধন সঙ্কটে আছে। ডিসেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৭০৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এরমধ্যে মূলধন ঘাটতি সবচেয়ে বেশি রয়েছে জনতার। ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি পাঁচ হাজার ৪৭৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। এছাড়া সোনালীর তিন হাজার ৬৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের তিন হাজার দুই কোটি ২০ লাখ টাকা, বেসিক ব্যাংক ১ হাজার ৪৯২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা এবং রূপালী ব্যাংকের ৬৭১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঘাটতি ১০ হাজার ৮১৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) ১ হাজার ৪৫৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। বেসরকারী খাতের তিনটি ব্যাংকের মোট মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৬৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতি রয়েছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের এক হাজার ৬২২ কোটি টাকা। ঘাটতিতে থাকা অন্য দুই ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের এক হাজার ৩৫ কোটি টাকা এবং পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স) ৩১০ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ বিবেচনায় ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর মূলধন রাখার কথা এক লাখ ১৫ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। তবে আপদকালীন সুরক্ষা সঞ্চয়সহ ব্যাংক খাতে মূলধন রয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। এতে করে সব মিলিয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে ১৫ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে খেলাপীতে পরিণত হয়েছে ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি ৬ লাখ টাকা; যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
×