ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাহাড়ে শান্তি-শৃঙ্খলা

প্রকাশিত: ২০:৫২, ৩ মার্চ ২০২১

পাহাড়ে শান্তি-শৃঙ্খলা

পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা তিন পার্বত্য জেলা প্রায়ই অশান্ত হয়ে ওঠে। একাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে দলাদলি, অন্তর্কলহ, দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পাশাপাশি গোলাগুলিতে নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে প্রায়ই। অপহরণ ও জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের খবরও সহজলভ্য। এর ওপর স্থানীয় বাঙালী বসতির ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে থাকে প্রায়ই। ১৯৯৭ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হলেও চূড়ান্ত পরিণামে সেখানে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে অবিলম্বে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠাসহ ব্যাপক উন্নয়নের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তা নিশ্চিত করার জন্য রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) সভাপতি শান্তি চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরদাতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার সঙ্গে এক আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। অতঃপর পার্বত্য তিন জেলায় শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য সেনাবাহিনীর পরিত্যক্ত ক্যাম্পগুলোতে আধুনিক পুলিশ বাহিনী মোতায়েন তথা ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর পাশাপাশি চলবে উন্নয়নের কাজও, যাতে সেখানে কর্মসংস্থানসহ পর্যটনের পথ উন্মুক্ত হয়। বর্তমান সরকার কর্তৃক পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার পর ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে বিবদমান আঞ্চলিক গ্রুপগুলো সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, যার জেরে এ পর্যন্ত প্রাণ দিতে হয়েছে শতাধিক ব্যক্তিকে। সত্যি বলতে কি, খুনের বদলে খুন সেখানে যেন একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক সব গ্রুপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কয়েকটি গ্রুপের পারস্পরিক সংঘাত-সংঘর্ষ, গোলাগুলি, রক্তপাত ও হানাহানির ঘটনায় সর্বাধিক বিপর্যস্ত হয়েছে পাহাড়ী জনপদের জনজীবন। ফলে অনেক তরুণ-তরুণীকে নিরাপত্তার জন্য ইতোমধ্যে এলাকা ছাড়া হতে হয়েছে। সর্বাধিক আতঙ্কে বসবাস করতে হচ্ছে সেখানে বসবাসরত বিপুল সংখ্যক বাঙালীকে। সবচেয়ে যা দুঃখজনক, তা হলো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাইরে পাহাড়ী জনপদে শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য স্থাপনের জন্য স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নেতৃস্থানীয়দের আদৌ কোন উদ্যোগ-আয়োজন নেই বললেই চলে। শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার বরাবরই আন্তরিক ও সচেষ্ট। তবে পার্বত্য অঞ্চলের সর্বাপেক্ষা জটিল সমস্যা ভূমি জরিপ ও বণ্টনের কাজটি এখনও অসম্পন্ন রয়ে গেছে। বিষয়টি সময়সাপেক্ষ এবং জটিলও বটে। আইনী জটিলতাও আছে বৈকি। ক্ষুদ্র-নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলোর বুঝতে হবে যে, নিজেদের মধ্যে যে সন্দেহ অবিশ্বাস অনৈক্য বজায় রেখে, এমনকি সশস্ত্র সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়ে কিছু করা যাবে না। বরং তাদের উচিত হবে বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পারস্পরিক শান্তিপর্ণ সহাবস্থান সুনিশ্চিত করা। সম্প্রীতি, শান্তি ও সহাবস্থানের এই দেশ। সেখানে অবস্থানরত বাঙালীদেরও বুঝতে হবে যে, পাহাড়ীরা তাদের শত্রু নয়, বরং ভাই। সংখ্যাগুরুদের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেয়া অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। সে অবস্থায় উভয়কেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। আগামীতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের এবং রাজনৈতিক নেতাদের। প্রয়োজনে এ বিষয়ে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।
×