ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর ভর করে সূচকের বড় উত্থান

প্রকাশিত: ১৭:১৪, ২ মার্চ ২০২১

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর ভর করে সূচকের বড় উত্থান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে এমন আশাবাদ ছড়িয়ে পড়ায় ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। করোনার কারণে মূলধন ঘাটতি থাকলেও বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশা মতো লভ্যাংশ পাবেন এমন আশাবাদেই খাত দুইটির ক্রেতা বেড়েছে। এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নগদ লভ্যাংশের হার ১৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে লভ্যাংশ ঘোষণায় নতুন নীতিমালা সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারবে না বলেও নির্দেশনা ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। কিন্তু টানা পতনের কারণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিতে পড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করছে বলেও শেয়ারবাজারে গুঞ্জন রয়েছে মূলত সেই কারণে মঙ্গলবারে উভয় ব্যাংক ও আর্থিক খাতের এই দরবৃদ্ধি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংরক্ষিত সম্পদ না রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঘাটতি সমন্বয়ে ডেফারেল সুবিধা ভোগ করছে, সেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ সম্পদ সংরক্ষণের পূর্বে কোনো ধরনের নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করবে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে। এতে আরও বলা হয়, যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকৃত ঋণের হার ১০ শতাংশের বেশি রয়েছে, সেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ব্যতীত কোনো ধরনের লভ্যাংশ ঘোষণা করবে না। এ ছাড়া যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত (সিএআর) ১০ শতাংশের কম এবং শ্রেণীকৃত ঋণের হার ১০ শতাংশের বেশি রয়েছে, সেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে না। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের নগদ লভ্যাংশের হার ১৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। এই নির্দেশনার পরেই শেয়ারবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শেয়ার বিক্রির চাপ পড়ে যায়। নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যায় শেয়ারবাজারে। কিন্তু মঙ্গলবারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বেড়ে যায়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ২৩ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০টিরই শেয়ার দাম বেড়েছে। বাকি ৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অপরদিকে তালিকাভ্ক্তু ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ২৪টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ৩টির দাম কমেছে এবং ৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মধ্য দিয়ে। লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বেড়েছে ২৩৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের। এর বিপরীতে কমেছে ৪২টির দর। আর ৪৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৫০৮ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ৩৮ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১০৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ১৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৪৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৮৩৩ কোটি ৯৪ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৬১৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে লেনেদেন বেড়েছে ২১৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ১০৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকোর ৯৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৬৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩২৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৩ কোটি ৬ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৩৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৭টির এবং ৪৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
×