ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিয়ার যুদ্ধে বন্দি লাখো মানুষ এখনও নিখোঁজ ॥ জাতিসংঘ

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ২ মার্চ ২০২১

সিরিয়ার যুদ্ধে বন্দি লাখো মানুষ এখনও নিখোঁজ ॥ জাতিসংঘ

অনলাইন ডেস্ক ॥ সিরিয়ায় ১০ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে বন্দি হওয়া লাখো বেসামরিক লোক এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বলে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। তাদের দেওয়া নতুন একটি প্রতিবেদনে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সব দলের মাধ্যমে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিস্তারিত অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে, কয়েক হাজার বন্দিকে নির্যাতন করা হয়েছে বা হত্যা করা হয়েছে বলে এতে বলা হয়েছে। নির্যাতিত ও প্রত্যক্ষদর্শীরা অকল্পনীয় দুর্ভোগের বর্ণনা দিয়েছেন, এসবের মধ্যে ১১ বছর বয়সী পর্যন্ত বালক ও বালিকাদের ধর্ষণের মতো ঘটনাও আছে। এসব ঘটনা জাতীয় মানসিক আঘাত হয়ে আছে এবং এগুলোকে অবশ্যই চিহ্নিত করতে হবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানিয়েছে বিবিসি। মার্চ, ২০১১ এ সরকারবিরোধী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমাতে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকার মারাত্মক শক্তি প্রয়োগ করলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, তাতে সিরিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এই লড়াইয়ে অন্তত তিন লাখ ৮০ হাজার লোকের মৃত্যু হয় এবং দেশটির জনসংখ্যার অর্ধেক বাড়ি ছেড়ে পালতে বাধ্য হয়, এদের মধ্যে প্রায় ৬০ লাখ বিদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেন। জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সিরিয়া সংক্রান্ত তদন্তের জন্য গঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিশন শতাধিক কারাগারের চালানো তদন্ত ও ২৬৫০ জনেরও বেশি লোকের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। এতে যুদ্ধে জড়িত প্রায় সবগুলো বড় দলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নথিবদ্ধ করা হয়েছে। সম্ভাব্য বিরোধীদের ভয় দেখাতে ও শাস্তি দেওয়ার অভিপ্রায় থেকে এমন ঘটনাগুলো ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান পাওলো পিনহেরো বলেন, সরকারি বাহিনীগুলো নির্বিচারে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের, সাংবাদিকদের, মানবাধিকার আন্দোলনকারীদের ও বিক্ষোভকারীদের আটক করে, এ থেকেই সংঘাত শুরু হয় এবং এটাই সংঘাত শুরু হওয়ার মূল কারণ। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ও জাতিসংঘ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো যেমন, হায়াত তাহরির আল শাম ও ইসলামিক স্টেটের মতো গোষ্ঠীগুলো লোকজনের স্বাধীনতা হরণ করতে শুরু করে, চরমভাবে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে শুরু করে যার সঙ্গে সাম্প্রদায়িক মনোভাবও জড়িয়ে ছিল। সাবেক বন্দিরা মাসের পর মাস ধরে দিনের আলো না দেখার কথা, অপরিষ্কার পানি পান করার ও বাসী খাবার খেতে বাধ্য হওয়ার কথা জানিয়েছেন। পায়খানাবিহীন অতিরিক্ত বন্দিতে পূর্ণ সেলে তাদের থাকতে হয়েছে এবং কোনো চিকিৎসাও দেওয়া হয়নি। স্বীকারোক্তি আদায় ও অন্যান্য উদ্দেশ্য পূরণে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়েছে এসব বন্দির ওপর। কোনও বিচার ছাড়াই বন্দিদের মেরে ফেলা হয়েছে অথবা যে ধরনের বিচারে বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে সেগুলো পক্ষপাতদুষ্ট ছিল বলে কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আটক অবস্থায় কতোজন বন্দি মারা গেছেন তার সঠিক সংখ্যা অজ্ঞাতই রয়ে গেছে। তবে প্রতিবেদনের রক্ষণশীল হিসাবগুলো বলছে, সরকারি হেফাজতে লাখো মানুষ নিহত হয়েছেন। সিরিয়ার সরকার ও জঙ্গি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শাম বন্দিদের নির্যাতন করার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। সংঘটিত অপরাধের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের সিরিয়া বিষয়ক তদন্ত কমিশন।
×