ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লালদিয়ার চরে উচ্ছেদ অভিযান, স্বেচ্ছায় সরে গেল বহু পরিবার

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ২ মার্চ ২০২১

লালদিয়ার চরে উচ্ছেদ অভিযান, স্বেচ্ছায় সরে গেল বহু পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আদালতের আদেশ মেনে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকার লালদিয়ার চরে অবৈধ স্থাপনা অপসারণে অভিযান শুরু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় সোমবার সকালে এই কার্যক্রম শুরু হয়। আশঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত কোন ধরনের বল প্রয়োগ করতে হয়নি সেখানে বসবাসকারীদের ওপর। বরং তারা নিজেরা স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়ে চলে যান। শান্তিপূর্ণ প্রস্থানে এই ঘটনা একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে, এমনই বলছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। উদ্ধার হওয়া ৫২ একর ভূমিতে যেন আবারও স্থাপনা গড়ে না ওঠে সেজন্য কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান। একইসঙ্গে তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করায় বাসিন্দাদের প্রশংসাও করেন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান পতেঙ্গা বোট ক্লাব এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় তিনি বলেন, বাসিন্দাদের স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার বিষয়টি অবহিত করেন। তিনি জানান, আমরা আগেই তাদের উদ্বুদ্ধ করেছি এবং বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। ফলে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৯০ ভাগ বাসিন্দা এমনিতেই চলে গেছে। বাকিরাও সরে যাওয়ার জন্য নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছে। এতে করে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হয়ে গেছে। ফলে সেখানে বুলডোজার বা এস্কেভেটর দিয়ে ভাঙচুর করার প্রয়োজন নেই। বাসিন্দাদের প্রশংসা করে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, তারা আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন। একটা ঢিলও ছুড়েনি। শুধু জিনিসপত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য একটু সময় চেয়েছে। তিনি জানান, এই জায়গার মালিক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, যা বন্দরের কাজে লাগবে। তাছাড়া স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করতে আদালতের আদেশ ছিল। বন্দর সূত্র জানায়, লালদিয়ার চর এলাকায় মসজিদ, কবরস্থান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্থাপনাগুলোকে উচ্ছেদের আওতার বাইরে রাখা হচ্ছে। দখলমুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেয়া হচ্ছে কাঁটাতারের বেড়া। সার্বক্ষণিক পাহারায় থাকবে আনসার সদস্যরাও। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হলে সরকার তৃণমূলদের পুনর্বাসনের জন্য জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। সে সহায়তার জন্য একটি তালিকা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ ওমর ফারুক জানান, কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বাসিন্দারা নিজেরাই মালপত্র নিয়ে সরে গেছেন। নিজেদের স্থাপনা নিজেরাই অপসারণ করছেন। কিছু বাকি থাকলে সেগুলো বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ করবে। উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গেই হয়ে যাচ্ছে কাঁটাতারের বেড়া। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার সকালেই উচ্ছেদ অভিযানে যায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের ম্যাজিস্ট্রেটে নেতৃত্বাধীন টিম। এ সময় ছিল র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর বিপুল পরিমাণ সদস্য। বন্দর কর্তৃপক্ষের উর্ধতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সেখানে বসবাসকারীরা নিজ উদ্যোগে সরে যেতে থাকায় কোন ধরনের জোর খাটাতে হয়নি। আগের দিন থেকেই দেখা যায়, বাসিন্দারা তাদের আসবাবপত্র ও গৃহস্থালীর সামগ্রীগুলো বের করে ভ্যানযোগে সরিয়ে নেয়ার কাজে নেমে পড়েছেন। স্থাপনার মালিকরাও চেষ্টা করছেন কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি যেন না হয় সেজন্য নিজ উদ্যোগে ঘরগুলো খুলে নিয়ে যেতে। সোমবারের এই উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা ছিল। কেননা, সেখানে বসবাসকারীরা পুনর্বাসন বা বিকল্প আবাসনের দাবিতে নানা কর্মসূচী পালন করে আসছিলেন। শুধু তাই নয়, অভিযান প্রতিহত করার হুঁশিয়ারিও এসেছিল। চট্টগ্রামে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বেশ ক’জন নেতাও বাসিন্দাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন।
×