ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ৮০ ভাগ তরুণ জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ২ মার্চ ২০২১

সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ৮০ ভাগ তরুণ জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে

শংকর কুমার দে ॥ দেশে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়া তরুণ-যুবকদের ৮২ শতাংশই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। জঙ্গীবাদ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এই মাধ্যম ব্যবহার করছে তারা। এর মধ্যে বাংলা ও ইংরেজী থেকে আসা তরুণ-যুবক ৫৬ শতাংশ। মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে আসা ২২ শতাংশ। এছাড়া নানা জায়গা থেকে এসেছে অন্যরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জঙ্গীবাদ বা সন্ত্রাস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। ভবিষ্যতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা অপরাধ (সাইবার অপরাধ) মোকাবেলার জন্য। দেশে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গীদের ওপর এক সমীক্ষার ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে পুলিশ। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গী তৎপরতায় এখন এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। উচ্চবিত্তের সন্তানরাও খুব অল্প সময়ে জঙ্গীতে রূপ নিচ্ছে এবং ধর্মের নামে মানুষ খুন করতে গিয়ে নিজের জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিতে কার্পণ্য করছে না। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা প্রতিদিনই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কিছু না কিছু তথ্য যোগ করেন। স্মার্টফোনের বিভিন্ন এ্যাপ্লিকেশনগুলোও ব্যবহারকারীদের ধারণার চেয়ে বেশি তথ্য নিয়ে থাকে। তরুণ-তরুণীদের মগজ ধোলাইয়ে জঙ্গী গোষ্ঠীগুলো ব্যবহার করছে বিভিন্ন ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্ম। আর এই কাজটা জঙ্গীদের নিয়োগদাতারা করছে খুবই সুনিপুণভাবে। তাদের সেই কাজের কিছু নমুনা পাওয়া যায় সন্দেহভাজন জঙ্গীদের ফেসবুক কর্মকাণ্ড ঘাটলে। ফেসবুকের একটি পাতার মাধ্যমে বাংলা ভাষায় বোমা তৈরির কৌশলসহ, কাকে, কেন, কিভাবে হত্যা করা উচিত কিংবা কেন তথাকথিত ‘ইসলাম প্রতিষ্ঠায়’ নিজের জীবন উৎসর্গ করে জিহাদ করা উচিত সেই জ্ঞান দেয়া হয় প্রকাশ্যে। অনলাইনে নিয়মিত বয়ানেরও ব্যবস্থা করা হয় পাতাটি থেকে, যেখানে তাদের সঙ্গে লাইভ আড্ডায় অংশ নিতে পারে যে কেউ। ফেসবুক যদিও তাদের অপতৎপরতা রোধে সক্রিয়, কিন্তু দেখা যাচ্ছে জঙ্গীদের গতি ফেসবুকের গতির চেয়ে অনেক বেশি। জঙ্গীদের একটি পাতা বন্ধ হলে আরেকটি চালু হয়ে যাচ্ছে। নতুন পাতা বন্ধ করতে ফেসবুক কয়েকদিন সময় নিচ্ছে। আর সেই সময়ের মধ্যে জঙ্গীদের তৎপরতা অনেকটাই এগিয়ে যাচ্ছে। আবার ফেসবুক পাতা বন্ধ হলেও ওয়ার্ডপ্রেসে তাদের ওয়েবসাইট ঠিকই সক্রিয় থাকছে। ফলে তরুণদের জঙ্গী বানানোর প্রক্রিয়া ঠিক থামছে না। বাংলাদেশসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে সাম্প্রতিক জঙ্গী হামলাগুলোর পর একটি বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মগুলো জঙ্গী তৎপরতা কমাতে কতটা ভূমিকা রাখতে পারে? আর বাড়াতেই বা কেমন ভূমিকা রাখছে? এটাও এখন প্রশ্নবিদ্ধ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন সহকারী মহাপরিদর্শক (গোপনীয়) মোঃ মনিরুজ্জামান। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৫০ জন জঙ্গীর ধরন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তাদের ৮০ শতাংশ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগে থ্রিমা, উইচ্যাট, মেসেঞ্জারের মতো এ্যাপস ব্যবহার করেছে। কেউ কেউ পৃথক অ্যাপও তৈরি করে নিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব জঙ্গী শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ভুয়া পরিচয় দিয়ে তৈরি আইডি ব্যবহার করা। এছাড়া প্রয়োজন শেষে দ্রুত তথ্য মুছে ফেলার প্রবণতা, দ্রুত প্রযুক্তি পরিবর্তন ও সরকারের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ না থাকা বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলেন, অনলাইন জগতের নিয়ন্ত্রণ নিতে জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা বিনিয়োগ করছে। জঙ্গীরা এখন অনলাইন বা ইন্টারনেটকে তাদের যোগাযোগ ও সাংগঠনিক কার্যক্রম বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। পারস্পরিক যোগাযোগ থেকে শুরু করে উগ্র ধর্মীয় মতবাদও প্রচার করছে অনলাইনে। পুলিশের কথায়, এ সব পেজের অ্যাডমিন বা ব্যবহারকারীরা বেশিরভাগই বিদেশে অবস্থান করে। ফলে তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা সম্ভব হয় না। কিন্তু একটি বন্ধ করা হলে জঙ্গীরা নতুন নামে আরেকটি পেজ বা আইডি খুলে একই কাজ শুরু করছে।
×