ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাদকাসক্তি ও বিষণ্নতাই মূল কারণ

হঠাৎ বেড়েছে আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ২ মার্চ ২০২১

হঠাৎ বেড়েছে আত্মহত্যা

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ হঠাৎ করেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বেড়ে গেছে আত্মহত্যার প্রবণতা। করোনা মহামারীর গত ১০ মাসে আত্মহত্যা করেছেন ১১ হাজার নারী-পুরুষ। এ সময় অবশ্য কমেছে নারী ও শিশুর প্রতি সহিসংতা। গত বছরের তুলনায় এবার আত্মহত্যার হার বেড়েছে ১৩ শতাংশ। আবেগজনিত রোগ যেমন মাদকাসক্তি এবং বিষণ্নতাই আত্মহত্যার মূল কারণ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, আত্মহত্যার ক্ষেত্রে নারীদের সংখ্যা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। আগের তুলনায় এর সংখ্যা বেড়েছে ২০ দশমিক ৭১ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটিরও বেশি মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছেন। আর বাংলাদেশে বিষণ্নতায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৪ দশমিক ৬ শতাংশ অর্থাৎ ৭৪ লাখেরও বেশি। গত দশবছরে বিশ্বব্যাপী এ রোগের ব্যাপকতা বেড়েছে ১৮ শতাংশ। শুধু বিষণ্নতার কারণে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, নানা কারণে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতা সৃষ্টি হতে পারে। পরীক্ষায় অকৃতকার্যতা, প্রেমে ব্যর্থতা, অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া, বাবা-মায়ের ওপর অভিমান এবং পারিবারিক কলহের কারণেই বেশির ভাগ মানুষ বিষণ্নতা, একাকীত্ব কিংবা মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। পারিবারিক কলহের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি হওয়া, অবিশ্বাস, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কেউ অন্য কোন নারী-পুরুষে সংযুক্তিতে মানসিক অশান্তি থেকে রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ধরনের পরিবারের ছেলে-মেয়েরাও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এদের বেশিরভাগই হঠাৎ করে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। এমনকি যারা আগে থেকেই অন্য কোন মানসিক রোগে আক্রান্ত অথবা মানসিক চাপে মানিয়ে নেয়ার দক্ষতা কম, তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটার ঝুঁকি বেশি। অবিবাহিত, ডিভোর্সি বা বিপত্নীক/বিধবা, বেকার, দীর্ঘমেয়াদী বা দুরারোগ্য শারীরিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও আত্মহত্যার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশি। প্রিয় কারও মৃত্যুশোক আত্মহত্যা প্রবণ করে তুলতে পারে কোন ব্যক্তিকে। শারীরিক-মানসিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরাও আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে থাকেন বেশি। বিশেষ করে দেশীয় শোবিজ অঙ্গনে আত্মহত্যা ক্রমশ বাড়ছে। গত ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারা এলাকার নিজ বাসায় জনপ্রিয় মডেল সাদিয়া নাজ আত্মহত্যা করেন। গত বছর অক্টোবরে চট্টগ্রামের হালি শহরে মাহি নামের ১৯ বছরের এক মডেল আত্মহত্যা করেন। গত বছরের আগস্টে তরুণ উঠতি মডেল লোরেন মেন্ডেস আত্মহত্যা করেন। জনপ্রিয় এই মডেলের এই আত্মহত্যা কেউ মেনে নিতে পারেননি। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জেরিয়াট্রিক ও অর্গানিক সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মুনতাসীর মারুফ জনকণ্ঠকে জানান, আবেগজনিত রোগ যেমন, বিষণ্নতা এবং মাদকাসক্তি আত্মহত্যার পেছনে অন্যতম কারণ। যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে এ ঝুঁকি কমিয়ে আনা যায়। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) অডিটরিয়ামে ‘স্টেকহোল্ডার (মিডিয়া) কনসালটেশন ওয়ার্কশপে’ পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী জানান, কোভিডকালীন ১০ মাসে ১১ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। যা করোনায় মৃত্যুর চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। এ সময় করোনায় ৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সচিব ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, আমরা সবকিছুতে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। এটা হওয়া উচিত নয়। একটা বিষয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে যেন অন্য কিছুতে বেশি ক্ষতি না করি। যেমন কোভিড নিয়ে আমরা খুব বেশি উদ্বিগ্ন ছিলাম অথচ অন্য কারণে বেশি মানুষ মারা গেছে। এটা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল যা সার্ভে করার পর বের হয়ে এসেছে। একই সময়ে হার্ট এ্যাটাকে এক লাখ মানুষ মারা গেছেন। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় বাংলাদেশ বেতারের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল এ এস এম জাহিদ উপস্থিত ছিলন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি সেন্টার ফর গবর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) এক ভার্চুয়াল সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিন জানান, করোনার নয় মাসে দেশে নারী ও শিশুর প্রতি সহিসংতা কমলেও বেড়েছে আত্মহত্যার হার। গত বছর মার্চ থেকে নবেম্বর পর্যন্ত আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন ১ হাজার ৫৮ জন। অন্যদিকে ২০১৯ সালের জুন থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নয় মাসে এ সংখ্যা ছিল ৯৪০ জন। অর্থাৎ করোনার নয় মাসে আত্মহত্যার হার ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে করোনাকালীন নয় মাসে নারীদের আত্মহত্যার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। পূর্বের সময়ের তুলনায় যা বেড়েছে ২০ দশমিক ৭১ শতাংশ। ‘সার্ভিং ওয়েস, ফরোয়ার্ড ফর বাংলাদেশ ইন দ্য টাইমস অব প্যানডেমিক: কোভিড ১৯ এ্যান্ড গবর্নেন্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সভায় করোনার আগে পরে সহিংসতার পরিস্থিতি এক প্রতিবেদনে তিনি তথ্য উপস্থাপন করেন। সূত্রগুলো জানায়, চলতি বছরের দেশীয় শোবিজ অঙ্গনের মডেল ও শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন আত্মহত্যা করেছেন। গত ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারা এলাকার নিজ বাসা থেকে মডেল সাদিয়া নাজের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সাদিয়ার মৃত্যুতে মর্মাহত হয়েছেন কাছের মানুষ ও শুভাকাক্সক্ষীরা। বারিশ হক ফেসবুকে সাদিয়ার মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে লেখেন, বিদায় জানালো আরও একটি সম্ভাবনাময়ী তাজা প্রাণ। তরুণ মডেল আমার খুব প্রিয় নাজ। শাওন নামে আরেকজন বলেন, আজকের সকাল বেলার সংবাদ খুবই কষ্টদায়ক আমার জন্য। আমার ফ্যাশন হাউসের প্রথম ফটোশূট করেছিলাম এই মেয়েটাকে নিয়ে। এখনও ছবিগুলো প্রকাশ করিনি। আজ একটা করলাম। দেশীয় শোবিজ অঙ্গনে আত্মহত্যা ক্রমশ আশঙ্কাজনকভাবেই বেড়ে চলেছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলায় গণধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় আজমেরী আক্তার মিম (১৩) নামে এক কিশোরী। বাসার সামনে থেকে নিখোঁজের একদিন পর বাসায় ফিরে সে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় দুই থানায় মামলা হয়েছে। পরে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ বলেছে, ধর্ষণের শিকার হয়ে ওই কিশোরী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এই কারণে সে আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর হাজারীবাগে বাংলাদেশ আনসার টিমের তায়কোয়ান্দো (জুডো) জাতীয় দলের খেলোয়ার কামরুল ইসলাম (২৪) আত্মহত্যা করেছেন। তার বান্ধবীর বাসা থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তিন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এদিন রাজধানীর বনশ্রীতে মতিঝিল সেন্টাল গবর্নমেন্ট কলেজের বিজনেস ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী নাদিয়া আক্তার (২১) নামে এক কলেজছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। একই সময় বনানী কড়াইল বস্তির বউবাজার এলাকায় স্থানীয় ইরান কনসেপ্ট একাডেমির ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী পপি খাতুন (১৩) নামে আরেক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। একইদিন রাজধানীর রমনার মগবাজারে মোঃ নাঈম (২৫) নামে আরেক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন। নিহতের বড়ভাই কাইয়ুম ও বোন মেহেরুন্নেসা জানান, দশদিন আগে প্রেম করে বিয়ে করেন নাঈম। প্রায় সময় স্ত্রী বিভিন্ন বিষয়ে তাকে সন্দেহ করতেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে নাঈম আত্মহত্যা করেছেন। গত ১৭ জানুয়ারি দুই নারী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নার্সিং হোস্টেল থেকে লাইজু আক্তার (২৭) নামে এক নার্সের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ জানায়, পরিবার ও স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ভাল ছিল না। এরই জের ধরে ওই নারী গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। একইদিন ভোরে রাজধানীর বড় মগবাজারে ইরা আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। নিহতের আত্মীয় মুক্তি বেগম জানান, ইরার স্বামী মেহেদী হাসান প্রতিরাতে দেরি করে বাসায় ফেরেন। এ কারণে অভিমান করে ইরা আত্মহত্যা করেছেন। গত ১৬ জানুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ১৮ তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আসিফুল হক বিজয় (২৬) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মইনুল ইসলাম জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে বিজয় ওই ১৮ তলা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করতে পারেন। গত ১৩ জানুয়ারি রাজধানীর নিউপল্টন এলাকায় নিজ বাড়িতে জুলহাস মুন্সি (৭০) নামে এক বৃদ্ধ আত্মহত্যা করেছেন। নিঃসন্তান জুলহাস স্ত্রী মারা যাওয়ার পর নিউপল্টন এলাকার খালেক লেনের ৪৯/২ নম্বর বাড়ির নিচতলায় থাকতেন। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশ জানায়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর হাজারীবাগের বারৈইখালি এলাকায় সুমাইয়া আক্তার মিম (১৮) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছে। নিহতের স্বামী ইয়াসিন জানান, ওইদিন স্ত্রী মিমকে কল করে তার প্রাক্তন প্রেমিক। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে বাথরুমে দরজা বন্ধ করে মিম আত্মহত্যা করে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে তাসনিমা আক্তার (২২) নামে এক নববধূ আত্মহত্যা করেছেন। নিহতের পরিবার জানায়, একমাস আগেই মাহফুজ হাসান মিজানের সঙ্গে তাসনিমার বিয়ে হয়। ওইদিন সকালে তাসনিমা গ্রামে বাবার বাড়িতে যেতে চান। কয়েকদিন পরে স্বামী মিজান তাকে বাবার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন। এতে জেদ করে রুমে ঢুকে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাসনিম আত্মহত্যা করেন। গত ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে আল আমিন (২৬) নামে এক রিক্সাচালক আত্মহত্যা করেছেন। গত ২৪ জানুয়ারি রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে নিশানী (২০) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। গত ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর আদাবরে নিজ রুমে বন্দনা রানী (২৪) নামে এক নার্স আত্মহত্যা করেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৪ বছরে আত্মহত্যা করেছেন ২৩ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে গত তিন বছরেই আত্মহত্যা করেছেন ১১ জন। বিষণ্নতা, শিক্ষাজীবন নিয়ে হতাশা, সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে তারা আত্মহননের পথ বেছে নেন। বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায় পারিবারিক সমস্যা (৪১.২ শতাংশ), পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া (১১.৮ শতাংশ), বৈবাহিক সমস্যা (১১.৮ শতাংশ), ভালবাসায় কষ্ট পাওয়া (১১.৮ শতাংশ), বিবাহবহির্ভূত গর্ভধারণ ও যৌন সম্পর্ক (১১.৮ শতাংশ), স্বামীর নির্যাতন (৫.৯ শতাংশ) এবং অর্থকষ্ট (৫.৯ শতাংশ) থেকে রেহাই পেতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া হয়। বিষণ্নতা ও মানসিক রোগ ॥ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটিরও বেশি মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছেন। আর বাংলাদেশে বিষণ্নতায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৪ দশমিক ৬ শতাংশ অর্থাৎ ৭৪ লাখেরও বেশি। বিগত দশ বছরে বিশ্বব্যাপী এ রোগের ব্যাপকতা বেড়েছে ১৮ শতাংশ। শুধু বিষণ্নতার কারণে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন। নানা কারণে একজন মানুষের মধ্যে বিষণ্নতা সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক কলহের কারণেই সবচেয়ে বেশি মানুষ বিষণ্নতা, একাকীত্ব কিংবা মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। আত্মহত্যার ওপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চল, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো এবং জাপানে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি (লাখে পঁচিশের ওপরে)। গত ৫০ বছরে সারা পৃথিবীতে, মূলত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আত্মহত্যার হার ৬০ শতাংশ বেড়েছে। সারা পৃথিবীর যত মানুষ আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করে, তার মধ্যে ২.০৬ শতাংশ বাংলাদেশী। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রতি লাখে ১২৮.০৮ জন আত্মহত্যা করে। প্রতিবছর এ সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন আত্মহত্যা করে। মানসিক রোগী দুই কোটি ॥ মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, প্রত্যেক আত্মহত্যাকারীই মৃত্যুর আগে একজন মানসিক রোগী হন। জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিভিন্ন মানসিক রোগে আক্রান্ত মানুষ শতকরা ১৬ শতাংশ। আমাদের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি হিসাব করলে সেই সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ২ কোটি ১৫ লাখ। ডাঃ মোহাম্মদ ফারুক আলম বলেন, দুই কোটিরও বেশি মানসিক রোগে আক্রান্তের চিকিৎসার জন্য মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন মাত্র ৩০০-এর কিছু বেশি। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ফলে সবার চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করাটা বেশ দুরূহ। ডাক্তারের সংখ্যা এবং আক্রান্তের সংখ্যা হিসাব করলে পাওয়া যায়, প্রায় ৭০ হাজার রোগীর চিকিৎসার জন্য রয়েছেন মাত্র একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ডাঃ ফারুক বলেন, সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধি বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। ক্লিনিক্যাল সাইক্লোজিস্টসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়াতে হবে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট মোঃ জহির উদ্দিন জানান, মানসিক রোগীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে, যেমন- বিষণ্নতা, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, পার্সোন্যালিটি ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি, উদ্বেগে আক্রান্ত ইত্যাদি রোগীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার উচ্চ।
×