ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এবার ইন্দোনেশিয়া ও মালদ্বীপের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করার সিদ্ধান্ত ভারতের সঙ্গে সিপার প্রস্তুতি বাড়বে রফতানি বাণিজ্য

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ॥ পিটিএ এফটিএতে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন দেশ

প্রকাশিত: ২৩:০০, ২ মার্চ ২০২১

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ॥ পিটিএ এফটিএতে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন দেশ

এম শাহজাহান ॥ এলডিসি উত্তরণ সহজ করতে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে (এফটিএ) যুক্ত করা হচ্ছে আরও নতুন নতুন দেশ। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে এবার ইন্দোনেশিয়া ও মালদ্বীপের সঙ্গে পিটিএ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির সফর সামনে রেখে বৃহৎ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির (সিপা) অগ্রগতির বিষয়ে বৈঠক ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের মধ্যে ভারতের সঙ্গে সিপা চুক্তি করা হতে পারে। এসব চুক্তির ফলে স্বল্পোন্নত (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ সহজ হবে বলে জানিয়েছে সরকার। এ কারণে আরও নতুন নতুন দেশের সঙ্গে এফটিএ এবং পিটিএ করা হবে। জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টিসহ বিশ্বের ৫৫টি দেশে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা (জিএসপি) পেয়ে থাকে। আগামী ২০২৬ সালে চূড়ান্তভাবে এলডিসি উত্তরণ হওয়ার পর বাংলাদেশের পক্ষে জিএসপি সুবিধা আর বহাল থাকবে না। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মানুযায়ী ওই সময় জিএসপি প্লাসের আওতায় এই সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বেশকিছু শর্ত পরিপালন করতে হবে। তবে রফতানি বাণিজ্য রয়েছে এমন সব দেশের সঙ্গে এফটিএ এবং পিটিএ করা গেলে খুব সহজে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা নিশ্চিত করতে পারবে বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, এলডিসি উত্তরণ বাংলাদেশের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও বাণিজ্য সক্ষমতা বাড়াতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। বিশ্বের অন্তত ১১টি দেশের সঙ্গে এফটিএ এবং পিটিএ করা হবে। এছাড়া ভারতের সঙ্গে সিপা করার উদ্যোগ রয়েছে। আশা করছি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর মাধ্যমে এলডিসি উত্তরণ সহজ হবে। তিনি বলেন, নতুন নতুন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি করা হবে। এতে বাড়বে রফতানি বাণিজ্য। জানা গেছে, ভুটানের পর নেপালের সঙ্গে পিটিএ করার সব বিষয় চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে। এরপরই দ্বীপ রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া এবং মালদ্বীপের সঙ্গে পিটিএ করা হবে। দুটি দেশই চুক্তির খসড়া একে অপরের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে, যেটি চূড়ান্ত করতে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে জোরেশোরে। এই চুক্তিতে বাংলাদেশের গুরুত্ব দেয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে ইন্দোনেশিয়ার ২৬ কোটি ভোক্তার বাজার। অপরদিকে ইন্দোনেশিয়ার নজর বাংলাদেশের ১৬ কোটি ভোক্তার দিকে। দুই দেশের মধ্যে পিটিএ চুক্তি হলে প্রায় ৪২ কোটি ভোক্তার বাজার তৈরি হবে, যেখানে উভয় দেশ তালিকাভুক্ত পণ্যে অবাধ বাণিজ্য-সুবিধা পাবে। এখন প্রাথমিক পণ্য তালিকা বাছাইয়ের কাজ চলছে। পণ্য তালিকা চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মোঃ শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে একটি সভাও হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ইন্দোনেশিয়া ও মালদ্বীপের সঙ্গে পিটিএ করা হবে। মালদ্বীপের সঙ্গে কোন বাণিজ্য চুক্তিই নেই। তাই এদেশটির বিষয়ে সবকিছু নতুন করে করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি থাকলেও সেটি কম। এবার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া উভয়েই উভয়ের কাছে প্রায় ৩০০ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়ে প্রাথমিক পণ্য তালিকা হস্তান্তর করেছে। বাংলাদেশের তালিকায় তৈরি পোশাক ছাড়াও ওষুধ, ফার্নিচার, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ইলেক্ট্রনিক্স, পাট ও পাটজাত পণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত পণ্যসহ দেশের সম্ভাবনাময় রফতানি খাতগুলো রয়েছে। অপরদিকে ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশের বাজারে ২৭১টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধাসহ আরও ৩৩টি পণ্যে ৫০ শতাংশ এবং ৫টি পণ্যে ৪০ শতাংশ শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে তালের তেল, নারকেল তেল, উদ্ভিজ চর্বি, মাছ, প্রাকৃতিক মধু, কোকো, বালি, পাথর, জিপসাম, চুনাপাথর, কয়লা, পেট্রোলিয়াম তেল, কাঠ ও কাঠের পণ্য, রেল, এ্যালুমিনিয়াম, এয়ার কন্ডিশনার, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, মোবাইল ও মোবাইল আনুষঙ্গিক, কম্পিউটার মনিটর, টেলিভিশন এবং এর যন্ত্রাংশ, এলইডি ল্যাম্প, সৌর মডিউল, প্রিন্টার, বিভিন্ন ধরনের অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ, নারকেল, সুপারি, বাদাম, শুকনো ফল, কফি, চা, চাল এবং বিভিন্ন মশলা। মালদ্বীপে জনশক্তি রফতানি করে বাংলাদেশ। পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কোন বাণিজ্য চুক্তি করা হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে এবার দেশটির সঙ্গে এফটিএ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে যান মালদ্বীপের হাইকমিশনার। তখন এ বিষয়ে তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথা হয়। এছাড়াও ওই বৈঠকে সি-ক্রুজ চালু, রোহিঙ্গা ইস্যু, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, শিক্ষা, করোনা সঙ্কটসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহের কথা জানিয়ে মালদ্বীপের হাইকমিশনার বলেন, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য বাড়াতে চাই। এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর সামনে রেখে সিপা চুক্তির বিষয়ে বৈঠক ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগামী ২২ এবং ২৪ মার্চ ঢাকায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। এই চুক্তি দ্রুত সম্পাদনে বাণিজ্য সচিবকে আহ্বায়ক করে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাই-বাছাইয়ে একটি কমিটি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
×