ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দীসকলের মুক্তির দাবি সেলিমের

প্রকাশিত: ১৭:৩৯, ১ মার্চ ২০২১

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দীসকলের মুক্তির দাবি সেলিমের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শহীদ তাজুল শ্রমিকশ্রেণির মুক্তিকে চূড়ান্ত লক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে তৎকালীন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রামে নিয়োজিত হয়েছিলেন। এ সংগ্রামে তিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আজ তাজুলের আত্মত্যাগের ৩৭ বছর পরেও দেশের মানুষের ভোটের অধিকার এবং মতপ্রকাশের অধিকার হরণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে দেশের মানুষের সংগ্রামে শহীদ তাজুল সর্বদাই অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। সোমবার ৩৭তম শহীদ তাজুল দিবসে পুরানা পল্টনে মুক্তিভবনের সামনে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদেনের পর অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গণসংগঠন, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ শহীদ তাজুলের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাগারে বন্দী লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুকে হত্যাকা- উল্লেখ করে প্রবীণ এই বাম নেতা বলেন, এই সকল নিবর্তনমূলক আইন জনগণের নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং বিনা ভোটে ক্ষমতায় থেকে অবাধ লুটপাটকে নিরাপদ রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে কারাবন্দী ৭ ছাত্রনেতার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। একইসঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী সকলের মুক্তির দাবি জানান। সেলিম বলেন, তাজুলের মত এক ঝাঁক শিক্ষিত তরুণ নিজের ব্যক্তিগত জীবন তুচ্ছ জ্ঞান করে সমষ্টির মুক্তির জন্যে ঝাঁপিয়ে পরবে এটাই যুগের দাবি। একটা শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লড়াইকে এগিয়ে নিতে তিনি তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। দলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, শহীদ তাজুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়েও ব্যক্তিগত আরাম-আয়েশ পরিত্যাগ করে এদেশের শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির জন্য নিজেকে নিবেদিত রেখেছিলেন। বদলি শ্রমিকের কাজ নিয়ে আদমজী পাটকলে শ্রমিকদের সংগঠিত করেছিলেন। এরশাদ স্বৈরাচারের গুন্ডারা তাঁকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। তাজুল নিজের মতাদর্শগত চেতনায় এবং পার্টির নির্দেশে স্বৈরাচারবিরোধী হরতাল সফল করতে গিয়ে জীবন দিয়েছিলেন। তাঁর আজ মালিকদের দ্বারা শ্রমিক শোষণের নির্মমতা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। তিনি তাজুলের ন্যায় মালিকশ্রেণির শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পার্টি সদস্য-সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, তাজুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পাঠ শেষে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সিদ্ধান্তে আদমজী মিলে বদলি শ্রমিকের চাকরি নেন। সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন ও সংগঠন গড়ে তোলার কাজে তিনি আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ছিলেন সিপিবি’র আদমজী শাখার সম্পাদক ও আদমজী মজদুর ট্রেড ইউনিয়নের নেতা। ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ দেশব্যাপী আহূত শিল্প ধর্মঘট ও হরতালের সমর্থনে আগের দিন মধ্যরাতে আদমজী জুটমিল এলাকায় তাজুলের নেতৃত্বে শ্রমিকরা প্রচার মিছিল বের করলে, তৎকালীন স্বৈরশাসক এরশাদ সরকারের গু-াবাহিনীর হামলায় তিনি সহ কয়েকজন শ্রমিক মারাত্মক আহত হন। এক মার্চ ভোরবেলা গুরুতর আহত অবস্থায় তাজুলকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর তিনি মারা যান।
×