ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পরিত্যক্ত নর্দমায় লাল শাপলায় বিশাল বানিজ্যিক সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ১৬:০৮, ১ মার্চ ২০২১

পরিত্যক্ত নর্দমায় লাল শাপলায় বিশাল বানিজ্যিক সম্ভাবনা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা ॥ চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের পরিত্যাক্ত নর্দমা এখন সৌন্দর্য বর্ধন করছে রঙিন বা লাল শাপলায়। হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোজদার হোসেনের সৃষ্টিশীল চিন্তা ও নতুন উদ্যোগের ফলে পরিত্যক্ত নালা, ডোবা, পুকুরে এখন শোভা পাচ্ছে লাল শাপলা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে একদিকে যেমন অবহেলিত ও পরিত্যক্ত জায়গার সৌন্দর্য বাড়বে, তেমনি অন্যদিকে দেশব্যাপী এর বিশাল বানিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের বিভিন্ন পরিত্যক্ত পুকুর, নালা, ডোবা ও নর্দমায় ৫'শ তোড়ে হাজারের বেশি লাল শাপলায় মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। অথচ কয়েকদিন আগেও পঁচা পানির দুর্গন্ধে এসব ডোবা-নালার পাশ দিয়ে হাঁটাই যেতো না। হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোজদার হোসেন বলেন, আমাদের দেশের সকল শহরেই কিছু নোংরা জায়গা দেখা যায়। এসব পরিত্যক্ত জায়গার পরিবেশ কিভাবে ভালো করা যায়, সেই চিন্তা থেকে জাতীয় ফুল শাপলার কথা মাথায় আসে। অন্যদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের সামনে রাস্তার ধারের বিশাল অংশ জুড়েই এমন পরিত্যক্ত নর্দমা ছিলো। যা দর্শনার্থী ও হর্টিকালচার সেন্টার কর্তৃপক্ষ উভয়ের জন্যই অস্থিতিকর। এছাড়াও দেশের বাজারে লাল শাপলার ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। সবদিক বিবেচনায় মাসখানেক আগে শুরু হয় পরিত্যক্ত নর্দমায় রঙিন বা লাল শাপলা দিয়ে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। জেলার বিভিন্ন পুকুর, বিল এবং নাটোর ও পাবনা থেকে সংগ্রহ করে হর্টিকালচার সেন্টারের দুটি পরিত্যক্ত ডোবা ও ১টি নর্দমায় ৫'শ রঙিন শাপলার তোড়া দেয়া হয়েছে। সর্বমোট প্রায় ৩ বিঘা ডোবা-নর্দমায় হাজারের বেশি লাল শাপলা ফুটেছে। এমনকি হর্টিকালচার সেন্টারের ভেতরের ডোবায় ফুটে থাকা শাপলা দর্শনার্থীরাও খুব পছন্দ করছেন। পরিত্যক্ত নর্দমাগুলো কয়েকদিন ধরে শ্রমিক দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হয়েছে। এরপর পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করতে আবাসিক এলাকার ব্যবহৃত পানি রাস্তার নিচ দিয়ে নিয়ে আসা হয়। লাল শাপলায় আকৃষ্ট হয়ে অনেককেই তুলে নিবে, তাই কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। রঙিন বা লাল শাপলার বানিজ্যিক সম্ভাবনা নিয়ে উপ-পরিচালক আরো বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি, ঢাকায় লাল শাপলার একটি তোড়ার দাম ধরা হয় এক হাজার টাকা। তবে দেশে বানিজ্যিকভাবে তেমন কোথাও এটি চাষ করা হয় না। অন্যদিকে এর একটি তোড়া থেকে প্রায় ২০ হাজার চারা উৎপাদন করা সম্ভব। তাই আগামী বছর আমাদের এখানেই লক্ষ লক্ষ চারা উৎপাদন করা হবে। দেশের যতো নোংরা নালা-ডোবা রয়েছে, সকলের সাথে যোগাযোগ করে তা সরবরাহ করা হবে এবং আশা করি, দেশের প্রথম লাল শাপলার চারা বাজারজাত করে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় করবে। এমনকি অনেকেই বাড়ির ছাদ, টব ও বেলকুনিতে লাল শাপলা রাখার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। এছাড়াও অনেকেই ঔষধী কাজে লাল শাপলা ব্যবহার করতে আমাদের কাছে এটি কিনে নিয়ে চাই। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের সাথে পরিত্যক্ত নর্দমায় রঙিন শাপলার চারা সরবরাহের বিষয়ে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন ও জেলার সকল নর্দমায় এটি করতে পারলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান, শহর, রাস্তার মোড় ও স্থাপনার সৌন্দর্য বাড়বে। আগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত বছরের অধিকাংশ সময় ফুটে থাকবে অপরূপ সৌন্দর্য্যের জাতীয় ফুল শাপলা। কথা হয় কয়েকজন দর্শনার্থীর সাথে। সদর উপজেলার বারোঘরিয়ার নবদম্পতি শাহেদ ও মেরাতুন নেসা ঘুরতে এসেছেন হর্টিকালচার সেন্টার। মূল ফটকে ঢোকার মুখেই তাদের চোখ পড়েছে লাল শাপলায়। যথারীতি লাল শাপলায় মুগ্ধ এই নবদম্পতি। মেরাতুন নেসা জানান, যদিও এখন খুব বেশি ফুটে নেই, তবুও অসম্ভব সুন্দর লাগছে ফুলগুলো। এটি এই জায়গায় সৌন্দর্য কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। শাহেদ বলছেন, কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগে কৃতজ্ঞ তিনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের মূল ফটকের পাশেই পরিত্যক্ত নর্দমায় লাল শাপলা রয়েছে। মূল ফটকের পাশে দিনের বেশিরভাগ সময় অবস্থান করেন একজন দারোয়ান। তিনি জানান, আগে এখানে পঁচা পানিতে পরিপূর্ণ থাকতো এবং অনেক দুর্গন্ধ ছড়াতো। কিন্তু নর্দমাটি সংস্কার করে পরিস্কার পানি ভর্তি করে লাল শাপলা দেয়ায় এখানকার পরিবেশ পাল্টে গেছে। হর্টিকালচারে আসার শুরুতেই এখন সবাই আগে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে লাল শাপলা দেখে।
×