ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সেনাবিরোধী বক্তব্যের পর জাতিসংঘে নিযুক্ত দূতকে বরখাস্ত করেছে জান্তা

মিয়ানমারে বিক্ষোভে পুলিশের গুলি, নিহত ১৮

প্রকাশিত: ২১:৫৪, ১ মার্চ ২০২১

মিয়ানমারে বিক্ষোভে পুলিশের গুলি, নিহত ১৮

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভ বন্ধে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস, স্টান গ্রেনেড নিয়ে চড়াও হওয়ার পাশাপাশি গুলি ছুড়েছে পুলিশ। রবিবার পুলিশের গুলি ও সংঘর্ষে অন্তত ১৮ জন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে দেশটির এক চিকিৎসক, একজন রাজনীতিক ও গণমাধ্যম জানিয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘে মিয়ানমারের দূত কিয়াও মোয়ে তুন সেনাঅভ্যুত্থানকারীদের হাত থেকে মিয়ানমারকে বাঁচান বলে আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেনাবিরোধী বক্তব্যের পর তাকে বরখাস্ত করেছে জান্তা সরকার। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, রয়টার্স, ইরাবতী ও মিয়ানমার টাইমসের। গণমাধ্যমের পোস্ট করা ছবিতে দেখা গেছে, মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে কয়েকজন লোককে ধরাধরি করে বিক্ষোভ স্থান থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে, তাদের কয়েকজনের দেহ রক্তাক্ত ছিল। তারা কিভাবে আঘাত পেয়েছেন তা স্পষ্ট না হলেও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে তাজা গুলির কথা বলা হয়েছে। মিয়ানমার নাও গণমাধ্যম গোষ্ঠী জানিয়েছে, লোকজনকে ‘গুলি করা’ হচ্ছে, কিন্তু বিস্তারিত আর কিছু জানায়নি তারা। ইয়াঙ্গুনের বিভিন্ন অংশে স্টান গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ গুলি ছোড়ে। বুকে গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে বলে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন। মিজিমা গণমাধ্যমের চ্যানেলও এই মৃত্যুর কথা জানিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পুলিশ স্টান গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করছে এবং গুলি ছুড়ছে। শহরটিতে শিক্ষকদের একটি প্রতিবাদ স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এ সময় এখানে এক নারী মারা যান। তবে তার মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি বলে ওই নারীর কন্যা ও তার সহকর্মীরা জানিয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দাউইয়েও পুলিশ গুলি করেছে। সেখানে তিনজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় রাজনীতিক কিয়াও মিন হটিক জানিয়েছেন। গণমাধ্যম ইরাবতী অনলাইনের প্রতিবেদনে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়েও একজন নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। এখানেও সকাল থেকেই বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। মধ্যাঞ্চলীয় শহর বাগোতে পুলিশের দমনাভিযানের মধ্যে অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন বলে একটি দাতব্য সংস্থা জানিয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাশিও এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মায়িকেও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। টুইটারে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির প্রথম ক্যাথলিক কার্ডিনাল চার্লস মাউং বো বলেছেন, মিয়ানমার যুদ্ধ ক্ষেত্রের মতো হয়ে গেছে। এসব বিষয়ে মন্তব্য নেয়ার জন্য পুলিশ ও ক্ষমতাসীন সামরিক কাউন্সিলের মুখপাত্রকে ফোন করা হলেও কেউ সাড়া দেয়নি। নবেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে আউং সান সুচির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ব্যাপক জয় পেলেও তার স্বীকৃতি না দিয়ে সেনাবাহিনী নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা দখল করে। নির্বাচিত নেত্রী সুচি ও এনএলডির অধিকাংশ নেতাকে গ্রেফতার করে কারবন্দী করে রেখেছে। এরপর থেকেই মিয়ানমারজুড়ে অস্থিরতা চলছে। অভ্যুত্থানের পর থেকে তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে প্রায় প্রতিদিন সামরিক শাসনবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। কোন কোন দিন বিক্ষোভে লাখো মানুষ যোগ দিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশ সীমিত কিছু নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে। দেশটির সামরিক বাহিনী প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেছেন, বিক্ষোভ মোকাবেলায় কর্তৃপক্ষ গণতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করছে এবং পুলিশ রবার বুলেট ব্যবহারের মতো ন্যূনতম শক্তি ব্যবহার করছে। তারপরও বিক্ষোভ সমাবেশগুলোকে ঘিরে সহিংসতায় এই পর্যন্ত অন্তত ১৮ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। একজন পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছেন বলে সেনাবাহিনী জানিয়েছে। জাতিসংঘ দূত বরখাস্ত ॥ সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জাতিসংঘকে আহ্বান জানানোর পর এই বিশ্ব সংস্থায় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে বরখাস্ত করার কথা জানিয়েছে সেনা শাসকরা। এক আবেগময় বক্তৃতায় রাষ্ট্রদূত কিয়াও মোয়ে তুন বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত কারও সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা উচিত নয়। এর প্রতিক্রিয়ায় শনিবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার কথা জানানো হয়। বলা হয়, তিনি দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং সরকার স্বীকৃত নয় এমন একটি সংগঠনের পক্ষে বলেছেন যারা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে না। তিনি রাষ্ট্রদূতের ‘ক্ষমতা ও দায়িত্বের’ অপব্যবহার করেছেন। শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্যে মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যেকোন উদ্যোগ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান কিয়াও মোয়ে তুন। তিনি সুচির ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছেন বলেও জানান। তিনি বলেন, অবিলম্বে সামরিক অভ্যুত্থান বন্ধে আমাদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আরও শক্ত পদক্ষেপ দরকার। নিরীহ মানুষের ওপর নিপীড়ন বন্ধ, রাষ্ট্রক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়া এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য তা দরকার। করতালি দিয়ে তার ওই বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানানো হয়। একে ‘সাহসী’ বক্তব্য অভিহিত করেছেন অনেকে, যাদের মধ্যে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস-গ্রীনফিল্ডও রয়েছেন। শনিবার মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধীদের ওপর দমনাভিযান তীব্রতর করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম অনেককে গ্রেফতার এবং মনয়ি শহরে এক নারী গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর দিয়েছে। ওই নারীর অবস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।
×