ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদল বিএনপির সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টাধাওয়া

প্রকাশিত: ২১:৫৩, ১ মার্চ ২০২১

পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদল বিএনপির সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টাধাওয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। রবিবার বেলা ১১টায় পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি ও পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনায় জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় ওই এলাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় কয়েকজন আহত হন। পুলিশ বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করে। এ সংঘর্ষের ঘটনার জন্য পুলিশ ও বিএনপি পরস্পরকে দায়ী করেছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বীরউত্তম খেতাব কেড়ে নেয়া, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করতে চায় ছাত্রদল। এ জন্য সকাল ১০টা থেকেই সেখানে জড়ো হতে থাকে ছাত্রদল ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। কিন্তু সমাবেশ শুরুর আগেই পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। বেলা ১১টার দিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের বাধা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে কয়েকজন নেতাকর্মী প্রেসক্লাব থেকে বের হয়ে সামনের সড়কে বসে পড়েন। এ সময় সমাবেশ করার পূর্ব অনুমতি না থাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় সেখানে সমাবেশ করা যাবে না। এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে তুলে দেয়। আবারও শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে সমাবেশ করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সরে যেতে বলে। এ পর্যায়ে কয়েকজন নেতাকর্মী পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ধর ধর স্লোগান দিলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। এরপর শুরু হয় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। এ ঘটনায় জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ছাত্রদলের সমাবেশে বক্তব্য রাখতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের কিছু নেতা জাতীয় প্রেসক্লাব ও আশপাশের এলাকায় গিয়েছিলেন। পুলিশের বাধার মুখে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সমাবেশের জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করতে না পারলে এক পর্যায়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল প্রেসক্লাব চত্বরে এসে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলও ছিলেন। পুলিশ তাদের জানায়, অনুমতি ছাড়া সেখানে সমাবেশ করা যাবে না। পুলিশের সঙ্গে কথা বলার পরপরই হাবিব-উন-নবী খান সোহেল জাতীয় প্রেসক্লাবের মূল গেটের বাইরের ফুটপাথে নেতাকর্মীদের নিয়ে সমবেত হন। তখন পুলিশ এ্যাকশনে যায়। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। বিএনপি নেতাকর্মীরা দৌড়ে প্রেসক্লাব চত্বরে আশ্রয় নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। সেখান থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়ে। পুলিশও পাল্টা ইটপাটকেল ছুড়ে এবং লাঠিপেটা করে। এক পর্যায়ে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এ সময় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর দ্বিতীয় দফায় আবারও বিএনপি নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ জানানোর চেষ্টা করলে পুলিশ আবারও লাঠিপেটা করে তাদের তাড়িয়ে দেয়। তারা আবারও প্রেসক্লাবের ভেতরে গিয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত হয়। সকাল থেকেই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং জলকামান প্রিজন ভ্যান মোতায়েন করা হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া সাংবাদিকদের জানান, ৫-৬ জন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন হাসপাতালে আহত অবস্থায় আসেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেয়া হয়। বিএনপির দেয়া তথ্য অনুসারে আহতদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সহ-সভাপতি মামুন খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এজাজ শাহ, ইডেন কলেজ ছাত্রদল সদস্য সচিব সানজিদা ইয়াসমিন তুলি, ছাত্রদল ঢাকা মহানগর পূর্ব সহ-সভাপতি শাকিল চৌধুরী প্রমুখ। এ ঘটনার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করার জন্য ছাত্রদল কোন অনুমতি নেয়নি। তারা অনুমতি না নিয়ে প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ জন কর্মীসহ সড়কে নেমে পুলিশের ওপর হামলা করেছে। প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের সাত থেকে আটজন সদস্য আহত হয়েছেন। এ হামলাকে পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি করেন সাজ্জাদুর রহমান। তিনি বলেন, প্রেসক্লাবের ভেতরে এত ইট নেই। এত ইট এল কীভাবে? এ ঘটনার বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে অন্য পুলিশ কর্মকর্র্তারা বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশের কোন অনুমতি নেই। সাধারণ মানুষ ও যান চলাচলের নিরাপত্তা বিধানে তারা কাজ করেছেন। উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে মেরেছে ও লাঠি নিয়ে আক্রমণ করেছে। জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আপনারা দেখেছেন কীভাবে সাধারণ ছাত্রদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশ করতে না দিয়ে পুলিশ অন্যায়ভাবে মারপিট করেছে। এটা যদি হয় তাহলে আওয়ামী লীগ কেন বলে এদেশ গণতান্ত্রিক দেশ? তিনি বলেন, পুলিশ নির্দয়ভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিপেটা করেছে এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। এ ঘটনায় অনেকে আহত হয়েছেন। আমরা এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, একটি স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার ৫০ বছর যখন আমরা পালন করতে যাচ্ছি, তখন একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে না দেয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। আজ যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানাই। আর যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের মুক্তি কামনা করি। বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন জাতীয় প্রেসক্লাবে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদলের সংঘর্ষের জন্য পুলিশই দায়ী। তিনি বলেন, পুলিশ ইচ্ছা করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশের অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, প্রেসক্লাবের সামনে তো সবসময় এ ধরনের সভা-সমাবেশ হয়। কে কখন অনুমতি নেয়। আমরা তো অন্য সমাবেশ অনুমতি নিয়েই করি।
×