ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

খাশোগি হত্যাকাণ্ডে ৭৬ সৌদি নাগরিককে শাস্তি, বাদ পড়লেন যুবরাজ

বাইডেন প্রশাসনের দ্বৈতনীতি

প্রকাশিত: ০০:২৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বাইডেন প্রশাসনের দ্বৈতনীতি

জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে দ্বৈতনীতি গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন পোস্টের সাবেক এ কলামিস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সৌদি রাজপরিবারের ভবিষ্যত উত্তরাধিকার মোহাম্মাদ বিন সালমানের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনার পরও বাইডেন প্রশাসন তাকে শাস্তির আওতায় আনেনি। তবে সৌদি আরবের সাবেক এক কর্মকর্তা ও রাজকীয় একটি বাহিনীর ওপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি দেশটির ৭৬ নাগরিকের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। শুক্রবার মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, মোহাম্মাদ বিন সালমানের সরাসরি হস্তক্ষেপে তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে খাশোগিকে হত্যা করা হয়। এ মিশনে অংশগ্রহণকারীরা যুবরাজ সালমানের নির্দেশেই তুরস্ক যায়। এদিকে শুক্রবার প্রকাশিত মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে সৌদি সরকার। শনিবার সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খাশোগি হত্যাকাণ্ডে যুবরাজের জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট নয়। মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও তার জড়িত থাকার বিষয়টি সরাসরি বলা হয়নি। মার্কিন প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথাও বলেনি। -আলজাজিরা, এপি ও বিবিসি। সৌদি প্রিন্সের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নেয়া প্রসঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, রিয়াদের সঙ্গে কাজের সম্পর্ক বজায় রাখতেই তার ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেয়া পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন, ফাটল ধরানো নয়। গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারের সময় বাইডেন সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এ ধারাবাহিকতায় খাশোগি হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ এবং সৌদি নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞার এসব পদক্ষেপ এলো। ২০১৮ সালে ইস্তান্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর ৫৯ বছর বয়সী সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার পর তার লাশ গুম করা হয়। সৌদি প্রিন্সের নির্দেশেই এ হামলা হয়েছিল বলে গুঞ্জন ওঠে। অবশ্য যুবরাজ সালমান শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। ৭৬ সৌদি নাগরিকের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, তারাই নন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের পরিবারের সদস্যরাও বিধিনিষেধের আওতায় পড়বে। প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগের দিন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন জো বাইডেন। বৃহস্পতিবার উভয় নেতার মধ্যে এ বহুল প্রত্যাশিত ফোনালাপ হয়। খাশোগি হত্যার গোয়েন্দা প্রতিবেদন পুঙ্খানুপুঙ্খ পড়ার পর সৌদি বাদশাহকে ফোন করেন বাইডেন। সালমান বিন আব্দুল আজিজের সঙ্গে কথা বলার সময় সৌদি আরবে সার্বজনীন মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বাইডেন। তবে খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাদের কথা হয়েছে কিনা তা খবরে উল্লেখ করা হয়নি। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠমিত্র সৌদি আরব-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের গুরুত্ব নিয়ে উভয়ে আলোচনা করেন। বাইডেনের পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেন। সৌদি বাদশাহকে বাইডেন বলেন, ইরানের হুমকি থেকে সৌদি আরবকে রক্ষা করা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। একই সঙ্গে ইয়েমেন যুদ্ধবন্ধে উভয় দেশের মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখার কথা বলেন বাইডেন। ফোনালাপের পর হোয়াইট হাউস একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। বিবৃতিতে খাশোগির বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, সার্বজনীন মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র যে গুরুত্ব দেয়, সে বিষয়টি সৌদির বাদশাহ সালমানের কাছে তুলে ধরেছেন বাইডেন।
×