ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চলতি সপ্তাহে ভাসানচরে যাচ্ছে আরও সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

চলতি সপ্তাহে ভাসানচরে যাচ্ছে আরও সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা

গিয়াসউদ্দিন ফরহাদ, নোয়াখালী ॥ চলতি সপ্তাহে পঞ্চম দফায় নোয়াখালীর ভাসানচরে আসছে আরও সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা। উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা শিবির থেকে আরও সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে আনার প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে ওইসব রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর সদস্যদের নাম, ব্লক, শেড, ক্যাম্প নম্বর ও হেড মাঝির নাম ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে জমা দিয়েছে। শনিবার নোয়াখালী পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর হোসেন এবং ভাসানচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মাহে আলম গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন, মার্চের ৩ ও ৪ তারিখে পঞ্চম দফায় আরও সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরে আসছে। তাদের প্রথমে শিবির থেকে চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর জেটিঘাটে, পরে সেখান থেকে ট্রলারে করে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে ভাসানচর কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, রোহিঙ্গারা সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পে দায়িত্বরত সিআইসির কাছে তালিকা জমা দিয়ে ভাসানচরে আসার জন্য তৈরি হচ্ছে। পঞ্চম দফায় আরও সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে আসতে রাজি হয়েছে। খুশি মনে রোহিঙ্গারা ভাসানচরে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট সিআইসির কাছে নাম জমা দিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না। আগে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা ভাসানচরে বা মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি না হওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করত সাধারণ রোহিঙ্গাদের। বর্তমানে সেই পরিস্থিতি ক্যাম্পে আর নেই। বর্তমান সরকারের কঠোর মনোভাব ও উদ্বাস্তুদের যেখানে ইচ্ছা, সরকার সেখানেই রাখবে ঘোষণার পর উস্কানিদাতা স্বার্থান্বেষী মহল দূরে সরে এসেছে। ফলে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে তাদের নাম ঠিকানা জমা দিচ্ছে স্বাভাবিক নিয়মে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়দের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। পরিবেশের যা ক্ষতি হয়েছে, তা কখনও পুষিয়ে দেয়ার মতো নয়। বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে রোহিঙ্গারা ভিনদেশী আশ্রিত জাতিগোষ্ঠী হিসেবে বাস করেনি। কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গত সাড়ে তিন বছরে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শিবিরে নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রির টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে মারামারি খুনাখুনি লেগেই আছে। তাদের এসব কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ, নজরদারি এবং রোহিঙ্গাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক তৎপরতাসহ নানা উদ্যোগ হাতে নিয়ে সরকার এ পর্যন্ত ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান কবে হবে, জানে না কেউ। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের আগে চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ যৌথভাবে মিটিং করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছার সম্ভাবনা দেখা দিলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার চেয়ে ভাসানচর উন্নত বলে দাবি করে ভাসানচরে যেতে রাজি হয়। এ পর্যন্ত চার দফায় ১০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে অপেক্ষায় রয়েছে আরও ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা বর্তমানে চৌদ্দ লাখের বেশি। সরকারী হিসাব মতে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে সাত লাখ ৪১ হাজার ৮৪১ জন রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও আশ্রয়প্রার্থী এতিম শিশু রয়েছে ৩৯ হাজার ৮৪১ জন। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বছরে গড়ে জন্ম নিচ্ছে ৩০ হাজারেরও বেশি শিশু। বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার একর ভূমি ব্যবহার করছে রোহিঙ্গারা। ইতোমধ্যে নোয়াখালীর ভাসানচরে আগত রোহিঙ্গাদের বংশবিস্তারও হয়েছে। তারা স্বাধীনভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
×