ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে খাটো করে দেখে না বিএনপি

প্রকাশিত: ১৮:০৭, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে খাটো করে দেখে না বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণকে বিএনপি খাটো করে দেখে না বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য জিয়াউর রহমানের প্রাপ্ত বীর উত্তম খেতাব ইতিহাস ধারণ করেছে। শনিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিএনপির মিডিয়া কমিটির আয়োজনে সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা জানান। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান পালনে সরকারের সহযোগিতা কামনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতা কারো একার সম্পত্তি নয়, দেশের সকল জনগণের। তাই আমরা আশা রাখি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে সরকার বিএনপিকে সহযোগিতা করবে। আমাদের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নিমন্ত্রণ করবো। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, কারো খেতাব কেড়ে নেওয়া, না নেওয়াতে জিয়াউর রহমান, বিএনপি বা দেশের জনগণের কিছু আসে যায় না। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব কারো দয়ায় নয়, তিনি এটা অর্জন করেছিলেন তার মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান সরকার এ খেতাব দিয়েছিলেন। তাই এই খেতাবকে তুলে নেয়ার যে অপচেষ্টা তা জনগন কোনোদিনই মেনে নেবে না। ফখরুল বলেন, একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষন অবশ্যই ইতিহাস। অবশ্যই তাঁর সম্মান, তাঁর মর্যাদা তাঁকে দিতে হবে। তার অর্থ এই নয় যে, ৭ মার্চ আপনি যখন পালন করবেন তখন এই কথা বলবেন ৭ই মাচের্র ডাকে সব হয়ে গিয়েছিলো। তবে তা হয়েছিল কি না তা আলোচনার মধ্যে আসবে, ইতিহাস থেকে আসবে, ইতিহাসের সমস্ত বই থেকে আসবে। কাউকেই খাটো করার কোনো রকম ইচ্ছা আমাদের নেই্ এবং আমরা বিশ্বাস করি সেটা উচিতও না। বিশেষ করে স্বাধীনতার ব্যাপারে প্রকৃত সত্য সকলকে উতঘাটিত করতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আমরা শুধূ ৭ মার্চ নয়, আমরা ২রা মার্চ এবং ৩রা মার্চও পালন করছি। অমরা ২রা মার্চ করছি, কারণ সেদিন প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন তখনকার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা আসম আবদুর রব। এটা ইতিহাসের অংশ। আর ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছেন শাহজাহান সিরাজ। এটাকে অস্বীকার করবো কি করে? আজকে একেক জনের রাজনৈতিক ধারা ভিন্ন হতে পারে কিন্তু ইতিহাসের অংশ কখনও অস্বীকার করা যাবে না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় জাতিকে দুভাগে ভাগ করে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ। অথচ স্বাধীনতার মূল চেতনা ছিল গণতন্ত্র। কিন্তু আওয়ামী লীগ এখন মূল চেতনার কথা ভুলে গেছে। স্বাধীনতার চেতনা কি গণতন্ত্র হত্যা করা, দিনের ভোট রাতে করে ক্ষমতা দখল করা? এ জন্য তো আমরা স্বাধীনতা চাইনি। আমরা স্বাধীনতা চেয়েছি গণতন্ত্রের জন্য। কোনো ব্যাক্তি বা পরিবারের জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে দলটি স্বাধীনতার পর ক্ষমতায় ছিল, তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। মুক্তিযুদ্ধে বিএনপির অনেক নেতাই অংশ নিয়েছিল। এ দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জেড ফোর্সের অধিনায়ক ও সম্মুখ সাড়ির মুক্তিযুদ্ধা। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাঁর অবদানকে স্বীকার করতে চায় না। তারা জিয়াউর রহমানের বীরউত্তম খেতাব কেড়ে নিতে চায়। আমরা মনে করি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার জন্য যার যে অবদান, সেটাকে সম্মান দিতে হবে। ফখরুল বলেন, আমরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছি। ওই সময়ের প্রতিটি মুহুর্ত, প্রতিটি সময় আমাদের সামনে জ্বল জ্বল হয়ে আছে। শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চে কি বলেছিলেন, পরবর্তীকালে ৯ মার্চ মওলানা ভাসানী কি বলেছিলেন পল্টন ময়দানে-এগুলো ইতিহাস। একই সঙ্গে ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমানের যে ঘোষণা জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিলো সেটাও ইতিহাস। বিএনপি মহাসচিব বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতেই বিএনপি বছরব্যাপী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর ফলে কেউ আর ইতিহাস বিকৃত করতে পারবে না। জাতিকে বিভক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে জাতি হিসেবে আমরা বিভক্ত হয়ে পড়েছি। সেটার জন্য কৃতিত্ব আওয়ামী লীগেরই। জাতিকে প্রথম থেকে তারা স্বাধীনতার পক্ষে, স্বাধীনতার বিপক্ষে, চেতনার পক্ষে, চেতনার বিপক্ষে নিয়ে গেছে। কিন্তু ওই চেতনা নিয়ে কি দেশ স্বাধীন হয়েছিলো? ডিজিটাল আইনের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, এই যে আইন তৈরি করা হয়েছে তাতে সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। এতে প্রায় ৪শ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে ভুক্তভোগী, কয়েকজনকে জেলও খাটতে হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী কর্মসূচি পালন করার একটাই উদ্দেশ্য যে, আমরা কোনো একজন ব্যক্তি, কোনো একটা পরিবার, কোনো একটা দলের একান্ত ব্যক্তিগত পারিবারিক সম্পত্তি করার জন্য এদেশ স্বাধীন করিনি। দেশের মালিক জনগন-এটা মূল কথা আমাদের। ফখরুল বলেন, বিএনপিতে একাত্তরের রনাঙ্গনে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহনকারী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা অনেক বেশি। আমাদের দলের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন জিয়াউর রহমান। এর পর যিনি চেয়ারপার্সন হয়েছেন জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া তিনিও স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন অংশগ্রহনকারী এবং ওই সময় নির্যাতিত নেত্রী। তিনি কারাবরণ করেছেন একাত্তর সালে এবং এখনো কারাবন্দী আছেন। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য আমরা ৬ মাস আগে এ কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবো। আমরা ইতিমধ্যেই এক মাসের কর্মসূচি ঘোষণা শেষ করেছি। মাস শুরুর আগে প্রতিমাসের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান প্রথম পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে সরাসররি সম্মুখ যুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। তিনিই প্রথম সেক্টার কমান্ডার, জেড ফোর্সেরঅধিনায়ক। তাঁর নামের প্রথম অক্ষর জেড অনুসারে জেড ফোর্স নামকরণ করা হয়। ড. মোশাররফ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের জন্য সরকার যে উদ্যোগ গ্রহন করেছে তা অত্যন্ত দূঃখজনক। আমরা বিশ্বাস করি, জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল করার অর্থ মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা। তাই তাঁর খেতাব বাতিলের বিষয়টি দেশের মানুষ মেনে নেবে না। বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে গঠিত মিডিয়া কমিটির আহবায়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ প্রমুখ।
×