ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চিকিৎসকের বাসায় শিশু গৃহকর্মীকে অমানুষিক নির্যাতন

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

চিকিৎসকের বাসায় শিশু গৃহকর্মীকে অমানুষিক নির্যাতন

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ বাবা ননী বাড়ৈ শারীরিক প্রতিবন্ধী। জন্মের পরই ফেলে চলে গেছেন মা। জেঠিমা ও বাবার কাছে থেকে বড় হয়েছে নিপা বাড়ৈ (১১)। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার পর করোনার কারণে অচল বিশ্বে সংসারের অভাব আরও প্রকট হয়। পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের বাসিন্দা ডাঃ সিএইচ রবিনের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে নেয়া হয়েছিল শিশু নিপা বাড়ৈকে। ডাঃ সিএইচ রবিন রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) অর্থোপেডিক ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ এবং বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ওটরা ইউনিয়নের গজালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। যেখানে ভাল থাকার কথা ছিল নিপা বাড়ৈর কিন্তু তিনদিনের মধ্যেই সেখানে তার ভাগ্যে নেমে আসে নির্যাতন। ডাঃ সিএইচ রবিন এবং তার স্ত্রী রাখি দাস মিলে মারধর করতেন শিশুটিকে। তার (নিপা) শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের গভীর ক্ষত। ঢাকায় বিষয়টি জানাজানি হলে অতিগোপনে ডাঃ সিএইচ রবিন তার চেম্বারের সহকারী বাসু হালদারকে দিয়ে গ্রামের বাড়ি জেলার উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের জামবাড়ি গ্রামে পাঠিয়ে দেয় নিপাকে। বাসু হালদার নির্যাতিতা নিপা বাড়ৈকে অসুস্থ অবস্থায় তার বাবার কাছে পৌঁছে না দিয়ে বাড়ির পাশে ফেলে রেখে চলে যায়। শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের কাছে এমন তথ্য জানিয়ে উজিরপুর মডেল থানার ওসি জিয়াউল আহসান বলেন, গত বুধবার সন্ধ্যার পরে ঢাকা থেকে শিশু নিপাকে নিয়ে এসে বাড়ির পাশে ফেলে চলে যাওয়ার খবর পেয়ে রাতেই শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকায় ওই চিকিৎসকের বাড়ির ঠিকানা খুঁজছি। জিয়াউল আহসান বলেন, ঘটনাটি অমানবিক। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্মম নির্যাতনে গুরুত্বর আহত শিশু নিপা বর্তমানে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ শামসুদ্দোহা তৌহিদ বলেন, শিশুটির শরীরের ক্ষত সারলেও মানসিক ক্ষত ঠিক হতে অনেকদিন লাগবে। তার শরীরের আঘাত দেখে মনে হচ্ছে তাকে নানাভাবে আঘাত করা হয়েছে। মাথায়ও আঘাত রয়েছে। শিশু নিপার জেঠিমা মুক্তি বাড়ৈ বলেন, ডাঃ সিএইচ রবিনের বাসায় কাজে দিয়েছি ছয় মাস হয়েছে। সেখানে দেয়ার তিনদিন পরেই নির্যাতন শুরু করে রবিনের স্ত্রী রাখি দাস। নিপার শরীরে আঘাতের চিহ্নের অভাব নেই। শরীরে খুন্তির ছ্যাঁকা ও আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। আমরা এ নির্মম নির্যাতনের বিচার চাই। শিশু নিপা বাড়ৈ জানায়, কাজের শুরু থেকেই সামান্য ভুলত্রুটি হলেই তার শরীরে কখনও খুন্তি দিয়ে আঘাত, কখনও বা ধারালো চাকু দিয়ে কোপ মারত। এমনকি চিৎকার দিলে গলা চেঁপে ধরে দেয়ালের সঙ্গে মাথায় আঘাত করত। শিশু নিপার কাকা তপন বাড়ৈ জানান, নিপার কাছে সব কিছু শুনে মোবাইল ফোনে বিষয়টি ডাক্তারের স্ত্রী রাখি দাসের কাছে জিজ্ঞাসা করা হলে সে আমাদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদর্শন করেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য নওয়াব আলী বাড়ৈ বলেন, শিশু নিপার মুখে নির্যাতনের বর্ননা শুনে যতোটুকু বুঝতে পেরেছি, তাতে বিষয়টি অত্যন্ত নির্মম ঘটনা। নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে ডাঃ সিএইচ রবিন মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের জানান, নির্যাতনের কোন ঘটনা ঘটেনি, বিষয়টি সাজানো।
×