ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভ্যাকসিন নিয়ে অবশেষে ভুল ভাঙল

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ভ্যাকসিন নিয়ে অবশেষে ভুল ভাঙল

শরীফুল ইসলাম ॥ এক সময় করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে কঠোর সমালোচনা করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করলেও এখন ভুল ভেঙ্গেছে বিএনপির। ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে সাধারণ মানুষের তোপের মুখে পড়ে অবস্থা বেগতিক দেখে এখন এ বিষয়ে ইউটার্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। আর এ সিদ্ধান্তের পর একে একে দলের সিনিয়র নেতারাও করোনা ভ্যাকসিন নিচ্ছেন। উল্লেখ্য, সরকার করোনা ভ্যাকসিন দেয়া শুরুর আগে দেশের মানুষের কাছে এর কাল্পনিক ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে তা না নেয়ার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। কিন্তু করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিষয়ে সরকার সারাবিশ্বের প্রশংসা অর্জনের পর বিএনপি তাদের এ অবস্থান পরিবর্তন করে। তাই দলের মান বাঁচাতে এখন দলটির সিনিয়র নেতারা নিজেরাই একে একে ভ্যাকসিন নিয়ে বলছেন করোনা ভ্যাকসিন নিরাপদ এবং এ নিয়ে কোন রাজনীতি নেই। এভাবে ভ্যাকসিনের বিষয়ে বিএনপির নেতিবাচক মনোভাব ইতিবাচক হওয়ায় দলটির সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন তৃণমূল নেতা জনকণ্ঠকে জানান, করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের নেতিবাচক বক্তব্যে অধিকাংশ নেতাকর্মী ত্যক্ত-বিরক্ত। তাদের নেতিবাচক বক্তব্য উপেক্ষা করেই সাধারণ নেতাকর্মীরা করোনা টিকা নিয়েছেন। তবে এখন দলের সিনিয়র নেতারা এ বিষয়ে ইতিবাচক হওয়ায় এবং নিজেরাই টিকা নেয়ায় সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চিকিৎসা শেষে একমাস পর সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, করোনা টিকা নেব। আমি অনেকদিন সিঙ্গাপুরে ছিলাম। তবে সিঙ্গাপুরে বিদেশীদের করোনা টিকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। আমরা দেশেই দেখব কিভাবে টিকা নেয়া যায়। রেজিস্ট্রেশন করে করোনা টিকা নেয়ার চেষ্টা করব। এদিকে জনরোষ থেকে রক্ষা পেতে ভ্যাকসিন নিয়ে বিএনপির কোন রাজনীতি নেই বলে দলের নেতারা এখন এমন কথা বললেও অভিজ্ঞ মহল মনে করছে এ নিয়ে দলের অবস্থান ভুল প্রমাণ হওয়ায় তারা এখন পিছুটান দিয়েছে। সাধারণ মানুষ বিএনপির নেতিবাচক এ অবস্থানে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে হঠাৎ করোনা ভ্যাকসিনবিরোধী বক্তব্যে ইউটার্ন নিয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যেই দলটির কয়েক সিনিয়র নেতা ভ্যাকসিন নিয়েছেন এবং শীঘ্রই বিএনপির মহাসচিবসহ আরও সিনিয়র নেতা করোনা ভ্যাকসিন নেবেন বলে জানা গেছে। তবে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার করোনা ভ্যাকসিন নেবেন কিনা তা এখনও কেউ বলতে পারছেন না। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বোর্ড শারীরিক যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সিদ্ধান্ত দিলে তারপর পারিবারিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে তাঁর টিকা নেয়ার বিষয়টি। তাই তাঁর করোনা টিকা নেয়ার বিষয়ে দলের নেতা কিংবা স্বজনরা এখনও স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না। ভারত থেকে করোনা ভ্যাকসিন আসার আগে থেকেই বিএনপির সিনিয়র নেতারা এ নিয়ে চরম সমালোচনা শুরু করে। দেশের ক্ষতি করতেই ভারত বাংলাদেশে টিকা পাঠাচ্ছে বলে চরম বিরূপ মন্তব্য করে তারা। এ ছাড়া ভারত থেকে আসা টিকা দেশের মানুষের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হবে বলেও তারা বলে বেড়ান। এ পরিস্থিতিতে দেশের এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে করোনা ভ্যাকসিন সম্পর্কে ভীতি সৃষ্টি হলেও সরকারের সঠিক অবস্থানের কারণে মানুষের মধ্যে সেই ভীতি কেটে যায়। ২৭ জানুয়ারি দেশে করোনা ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার সম্মুখ সারির করোনাযোদ্ধাদের দিয়ে ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হলেও এক পর্যায়ে চল্লিশোর্ধ সবার জন্য এ ভ্যাকসিন উন্মুক্ত করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাসহ সর্বস্তরের মানুষ করোনা ভ্যাকসিন নেয়া শুরুর পরও বিএনপি নেতারা এ নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য দিতে থাকে। তবে সরকারী দলসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ বিএনপির এ অবস্থানের চরম সমালোচনা করে। বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীরাও এতে বিব্রত হন। তবে দলটির সাধারণ নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতিবাচক অবস্থানের বিপক্ষে গিয়ে চুপে চুপে ভ্যাকসিন নিতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে প্রকাশ্যেই বিএনপি নেতাকর্মীরা ভ্যাকসিন নেয়া শুরু করেন। দেশের সর্বস্তরের মানুষ যখন উৎসবমুখর পরিবেশে হাসপাতালসহ সরকার নির্ধারিত বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে থাকে তখন রাজনৈতিকভাবে বিএনপি বেকায়দায় পড়ে। এ পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে সবার আগে ৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ্যে করোনা ভ্যাকসিন নেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন। এর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে কোন রাজনীতি নেই। তিনি সবাইকে ভ্যাকসিন নেয়ার আহ্বান জানান। এর পর একে একে বিএনপি নেতারা করোনা ভ্যাকসিন নিতে থাকেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সস্ত্রীক করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেন। ২০ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক করোনা ভ্যাকসিন নেন। এর পর তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে কোন রাজনীতি নেই। এভাবে বিএনপি নেতারা একে একে প্রকাশ্যে ভ্যাকসিন নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করায় দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা তাদের এই অবস্থানে সন্তুষ্ট হন। প্রসঙ্গত, দেশে করোনা ভ্যাকসিন আসার আগে থেকেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ সিনিয়র নেতারা মন্তব্য করেন করোনা ভ্যাকসিনের প্রতি তাদের আস্থা নেই। ভারত থেকে আনা ভ্যাকসিন ক্ষতিকর বলেও দলটির নেতারা মন্তব্য করেছিলেন। এক পর্যায়ে তারা দেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিকে আগে টিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তা না হলে কেউ টিকা নেবে না। কিন্তু টিকা দেয়া শুরুর পর সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হলে তারা প্রথমে বিব্রত হয়ে এ নিয়ে বক্তব্য দেয়া বন্ধ করে দেন। এর পর দলটির সিনিয়র নেতারা অবস্থান পরিবর্তন করে একে একে ভ্যাকসিন নিতে শুরু করেন। এখন আর বিএনপি নেতাদের ভ্যাকসিনবিরোধী বক্তব্য দিতে দেখা যায় না।
×