ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

প্রকাশিত: ২০:১৭, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

করোনাভাইরাস আমাদের একেকটি বাতিঘর নিভিয়ে দিচ্ছে, আমরা হারাচ্ছি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের অভিভাবক। অভিশপ্ত বছর ২০২০ বিদায় নেয়ার পরে আমাদের মনের ভেতর ক্ষীণ আশার আলো জ্বলেছিল এই ভেবে যে করোনা আর আমাদের মাঝ থেকে পরম শ্রদ্ধেয় গুণীজনদের কেড়ে নিতে পারবে না। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতে আমরা একের পর এক ধাক্কা খাচ্ছি। আমরা সদ্য হারালাম খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের মতো অর্থনীতি অঙ্গনের একজন কৃতী অভিভাবককে। তিনি কেবল তার কর্মক্ষত্রেই প্রসিদ্ধি অর্জন করেননি, হৃদয়বান সৎ মানুষের প্রতিকৃতিসম হয়ে উঠেছিলেন। তার বিদায় অবশ্যই আমাদের সমাজের জন্য দেশের জন্য বিরাট ক্ষতি। কর্মজীবনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর ছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সোনালী, অগ্রণী ও পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। অর্থসংক্রান্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারের পতনের কারণ অনুসন্ধানে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন তিনি। রাষ্ট্রপতি তাঁর শোকবার্তায় বলেছেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সুষ্ঠু বিকাশে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যে মেধা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন তা এদেশের মানুষ আজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের বিকাশে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এতে কোন সংশয় নেই যে ব্যাংকিং ও অর্থনীতি খাতে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের অনবদ্য অবদান রয়েছে, তার কর্মের মধ্য দিয়ে তিনি দীর্ঘকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ব্যাংকিং সেক্টরের বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে তিনি নির্ভীক চিত্তে তার মতামত, পরামর্শ প্রদান করতেন। প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং সততার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী প্রথিতযশা এই ব্যাংকার ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে এক অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হলো যা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। ব্যাংকিং ও অর্থনীতি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে ২০০৯ সালে ‘খান বাহাদুর আহছানউল্লা স্বর্ণপদক’ ও ২০১৩ সালে ‘খান বাহাদুর নওয়াব আলী চৌধুরী’ জাতীয় পুরস্কার দেয়া হয়। নীতির প্রশ্নে সব সময় ছিলেন আপোসহীন। নিঃসংকোচে সত্য বলার সাহস ও গুণের কারণে তিনি অনন্য উচ্চতায় উঠে গেছেন। তিনি পূবালী ব্যাংকের দায়িত্ব নেয়ার সময় ব্যাংকটির অবস্থা ভাল ছিল না। ছয় বছরে তিনি ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন সাধন করেন। যা তার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বাড়িয়ে দেয়। সততাই তাকে সাহসী করেছে। কোন ব্যক্তি, দল বিবেচনা করে বক্তব্য দিতেন না। এ জন্যই তিনি সবার কাছে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। ব্যক্তিজীবনে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ছিলেন সাহিত্যপ্রেমী সংস্কৃতিবান পড়ুয়া মানুষ। নিজেও তিনি লিখতেন। লেখকদের প্রেরণা দিতেন। যে গুণটি বড়দের ভেতর থেকে অনেকটা অনুপস্থিত হয়ে গেছে। দাদা ভাইয়ের মৃত্যুর পর শিশুকিশোরদের সংগঠনের হাল ধরেন তিনি। কচিকাঁচার মেলার পরিচালক ছিলেন। তার সততা ও প্রজ্ঞা পুরো আর্থিক খাতে তাকে স্মরণীয় করে রাখবে। তার মৃত্যুতে আমরা শোকগ্রস্ত। তাকে জানাই সশ্রদ্ধ বিদায় অভিবাদন। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা।
×