ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা

প্রকাশিত: ০০:৩৩, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

কবিতা

একলব্য গাথা ফরিদ আহমদ দুলাল তোমাদের অভিধানে পাতায় পাতায় অর্জুন-কৃষ্ণের নাম আমি লিখি একলব্যের সম্মানে গভীর প্রণাম! খেরোখাতা ভরে আমি আঁকি শোভন পুষ্পের ছবি আর্য মূর্তির পূজারি নই অনার্যের ব্রাত্য কবি। একলব্য আমার আদর্শ নয়, একলব্য আরণ্যক যীশু সাধন-ধ্যান-মন্ত্রের গুণে সে পবিত্র-শুদ্ধ শিশু, মগ্ন তীরন্দাজ স্বয়ম্ভু সে সাহসী দ্রাবিড় বীর নিম্নবর্ণ দোষে প্রত্যাখ্যাত বটে নয় সে অধীর, দ্রোনাচার্য ফিরিয়ে দিলেও গুরুজ্ঞানে তাঁকে করেছে সাধন অতঃপর একলব্য ধনুর্বিদ্যায় শ্রেষ্ঠত্ব করেছে অর্জন। গুরু-ঘোষণায় ধনুর্বিদ্যায় শ্রেষ্ঠত্বে যার নাম সে-ই তো অর্জুন একলব্যের কীর্তিতে বুকে তার তুষের আগুন; দু’জনের এক গুরু দ্রোনাচার্য মুনি আর্য-অর্জুনে পক্ষপাতিত্ব তাঁর ভারত পুরাণে শুনি গুরু-নির্দেশে অনার্য বীর বৃদ্ধাঙ্গুলি দক্ষিণা দিয়েছে তার ধনুর্বিদ্যায় অর্জুন শ্রেষ্ঠ হলো- অবাক বিচার! অনার্য-দ্রাবিড় বঞ্চিত আর্যের প্রতারণা দোষে উচ্চবর্ণ-অভিজাত যুগে-যুগে-মহাকালে দরিদ্রের রক্ত চোষে! আমরা অনার্য শৌর্যের অর্জন গুরুদক্ষিণায় করি নিবেদন তোমরা বহিরাগত আশরাফ-আর্য-উচ্চবর্ণ অনায়াস-দুঃশাসন। ০৪.০২.২০২১ ** মারুফ রায়হান সন্ত-ভাষার বর্ণমালায় খুনীও স্বপ্ন দ্যাখে, যে নিজেকে খুন করতে চায় সে দ্যাখে বরং বেশি। কবিতা লিখেই তবে কবি হতে হবে! সে যে আজন্ম কবিতাজাতক, কবি। সদ্যযৌবনে কোনো মানবী নয়, উদভ্রান্ত করেছে তাকে মেঘমালা। বিজ্ঞান বলেছে তাকে মেঘের বাড়ি পেরিয়ে যেতে হয় অনন্ত মেঘলোকে। তবু জোছনা তাকে মন্ত্রণা দেয় আত্মহননের। বজ্রবিদ্যুৎ যদিও সমীহ করে, আর বৃষ্টিকে সে-ই ভেজায়, সন্ত-ভাষার বর্ণমালায়। বিবমিষা জাগে তবু, সত্তায় কাঁটা হয়ে বেঁধে জগতের নামী বেনামী নষ্টামি। বিরক্তি বিরক্তি, অলৌকিক রক্তারক্তি! তবু রক্তিম ইচ্ছেরা ডানা পায়। মহুয়া না গিলেও সে মহুয়ামাতাল। মহুয়ার ফুল কখনো কি ফুটেছে পাথরের জঙ্গলে? অচেনা মানবী আসে স্বপ্নলোকে, নিজেকে পরিচয় দেয় মহুয়া বলে। যে কখনোই মহুয়া ছিল না সে নিজেকে দ্যাখে মহুয়ারূপে, এই উষর মহানগরীতে। এখন মানাবে বটে তাকে মহুয়ামাতাল অভিধা। প্রেম। পৃথিবীর হিসেবী বৈষয়িক নর-নারীর চক্ষুশূল। কিংবা তারা অস্বীকার করে এই অদৃশ্য অভিশাপকে। কারো কাছে প্রেমই শ্বাসের বাতাস, প্রত্যাশিত পরম পানীয়, মৃত্যুকূপে এক-আকাশ-ভরা আলো। বিষণ্নসম্রাট মজে তাতে। মানবী ও কবিতা সামর্থক হয়ে ওঠে। আবার অসম ব্যর্থতাও মেলে ডালপালা। নিভুনিভু-প্রাণ অকস্মাৎ পায় প্রাণ শুদ্ধ অম্লজানে, সামান্য ধুলোও সেসময় জলরঙে আঁকা সোনা; শ্রুতি ভরে উঠতে থাকে প্রণয়ের ভায়োলিনে। দিনভর তেঁতে থাকা রোদ্দুরও তাকে যত্ন করে, ছায়ারা হেসে বলে: মেঘের ভালোবাসা নাও কবি। চলা থামিও না, হাঁটো, তাতেই উত্থিত হতে থাকবে পথ। চারপাশের মনুষ্যদঙ্গলে তুমিই যে একমাত্র দেবদূত! দ্যাখো কুকুরছানাটিও স্মিতমুখে দ্যাখে তোমার অবাক দৃষ্টি, আর কুর্নিশ করে বন্ধ্য গাছেরা। রাত জাগা যাযাবর পাখি হয়ে ওঠে মহুয়ামাতাল, শূন্যতায় বোনে মহুয়ামাতাল... ** স্বল্পদৈর্ঘ্য অনুভূতি বদরুল হায়দার স্বল্পদৈর্ঘ্য অনুভূতির হৃদয়ে ঘুমে থাকে মন। বিলাসবহুল স্বপ্ন ডিজিটাল ঋণে মনের কিনারে বাসা বাঁধে। দেশ প্রেমের মিনারে ওড়ে লাল সবুজের অজয় পাতাকা। তুমি মধ্য আয়ের ভঙ্গিতে মেলে ধরো পাখা। আন্তঃনির্বাসনের আবেগ জড়ো হয় প্রাণে। মায়াজালে প্রেমের শাসনে তুমি উড়ে বেড়াও স্বপ্নের উজানে। হোসিয়ারি মনে প্রেম কিনে বেলা ডুবে হয় দুর্বিপাক। ত্যাগ তিতিক্ষার ঝড় ওঠে নিরাবেগ স্মৃতির বিষাদে। আমি পাষাণের মন্ত্রধ্যানে চির অভিমানে ভাসাই দুঃখ। দোল খাওয়া রাত্রির এলোমেলো বিপত্তিতে নামে প্রেম সংকট। ব্যর্থতা গোগ্রাসে বহুমনে ছড়ায় ব্যাকুলতা। আনন্দ বেদনা যুগপদ সন্ধি করে বাসনাকে ঘিরে। ট্রেকিং হ্যাকিংয়ের মহোৎসব চলে তত্ত্বজ্ঞানে। আমি বেদনার জ্যামে ব্যাপকতার প্রাণে হারাই উদাসে। উদারতার বাক্সে চালান দিয়েছি আকুলতা। বদান্যতায় বোধের অনুকূলে ফোটে অনন্যার তোষামদ। ** পর হয়ে যাবে গোলাম কিবরিয়া পিনু বহুজন কাছে ছিল ধরে রেখেছিল পিতা ও মা! এখন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না! হায়, ভেংচি কাটে দেখি ভূতের আয়না! আমাকে দেখবে কেন? আমি তো এখন মূল্যহীন! লাভের মুখ দেখবে না কেউ- আমাকে নিয়ে, আমি তো এখন রেসের দুর্বল ঘোড়া! উঁকি দেয় না কেউ- আস্তাবলে গিয়ে! হতচ্ছাড়া হয়ে- দুর্বল হয়েছে আমার পা জোড়া! হয় তো ক’দিন পর! পর হয়ে যাবে- কাছের জনও, বসার থাকবে না কোনো মোড়া! ** রাত্রি আলমগীর রেজা চৌধুরী তোমাকে আকীর্ণ ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি বিকেলের ঝিমিয়ে পরা নিরুত্তাপ নিসর্গ পথের বাঁকে হারিয়ে যাওয়া গোধূলির রঙ, প্রাক-সন্ধ্যায় স্বপ্ন ও আলোর পার্থক্য খোঁজে না পরিব্রাজক কুমারী রাত্রি বেগম। দায় ও দায়িত্বে সারারাত মৈথুনের চিহ্ন নিয়ে দেখে কেউ নেই, ধূপহীন আয়নামহল জুড়ে দীর্ঘশ্বাস.. কেউ নেই, তুমিও নেই। রাত্রি বেগমের গাত্রজুড়ে ঝালরকাড়া অপার মহিমা আমি জন্ম থেকে ঘর-গেরস্থির সঙ্গী করেছি খুঁজে দেখ, আমি তার দূরের কেউ না। শুধু আমাকে রেখে হারিয়ে যায় প্রভাত শিখায়। ** বৃষ্টিসূত্র সোহেল মাজহার বৃষ্টি যেনো আজও দ্রবীভূত করে পুরনো সম্পর্কের মতো। নদী মরে যায় বিলুপ্ত সেই আগ্রাসী ডানার স্পর্শে কত জনপদ, কত নগরের ধ্বংসস্তূপ অতল গহ্বরে হারিয়ে গেলো আজও তবু নদী উপাখ্যানের গান প্রবাহিত হয় বৃষ্টির ফেনিল বুদবুদে মানুষের অন্তর্গত রক্তে জেগে থাকে স্মৃতির পরম্পরা। বৃষ্টির প্রবাহে নয়, থাকো পাখি বেশে হও নতজানু, জানাও শত-সহস্র প্রণতি জানবে কাকে বলে? নিষাদ পালক সংশয় তাড়িত গোপন সম্পর্ক দ্বিধা থরথর কাঁপে স্পর্শের মহিমা। ** রক্তাক্ত শার্ট কথা বলে আবিদ আউয়াল বায়ান্নের ভাষা ছুঁয়ে তোমার রক্তাক্ত শার্ট দীর্ঘ কথা বলে শহীদ আবদুস সালাম একুশের অথই বিকেলে একশ চুয়াল্লিশের ভাঙা দেয়াল ধ্বসে পড়ে তোমার উপর সেদিন তোমার রক্তে লেখা স্বরলিপি অনুবাদ করতে পারেনি; এখন তা করছে সহস্র কোটি চোখের জল স্বজনেরা বুঝতে পারেনি ঘুমপাড়ানো সঙ্গিতে তোমাকে ঘোমাতে ব্যস্ত ছিল ঢাকা মেডিকেলের বারান্দা সেদিন ডাক্তাররা তোমাকে না ছুঁলেও আজ তোমাকে ছুঁয়েছেন ভাস্কর রাসা তুমি বেঁচে আছ আমাদের হৃদয়ে ** নদীর মৃত্যু এনাম রাজু মৃত শকুনের মতো নদীটা অনন্ত নিদ্রায় শুয়ে আছে নদীর এমন উলঙ্গ চেহারা পূর্বে দেখেনি কেউ। ভয় পেয়েছিলাম সেদিন, হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠেছিল নবযৌবনা নদীর যৌবন হারানোর উল্লম্ফনে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাই নদীর বুকে রাখি পা ভুলে যাই প্রয়োজনের তাগিদে জলের অভাব কিছু পেতে কিছু ভুলে যাওয়া মানবস্বভাব... তবু বিবস্ত্র স্মৃতি মনে রাখে ছাপ, কিছু শোকতাপ জীবাশ্মের সন্ধানে জীবন ছোটে, চিঠি হয়ে রানারের হাতে। ** সভ্যতার ক্ষুধা ফখরুল হাসান ছেঁড়া কম্বল মুড়ে দাঁড়িয়ে থাকে শীতের শহর অপেক্ষার প্রহর কাটে সভ্যতা যদি লোকচক্ষুর অন্তরালে ডুব সাঁতারে ছিঁড়তে আসে ঘাসফুল। সামান্য বিনিময়ে কনকনে শীতে ঘাসফুল নিজ অস্তিত্ব বিকিয়ে চালায় উষ্ণ আলিঙ্গনের খেলা। সময় অনুকূল হলে প্লাষ্টিকের কোলবালিশও বঙ্খাটে খেলে গোল্লাছুট খেলা। তখন রেডিমেড ফ্রক পরা শীতের শহরে কেউ কেউ খোঁজে গীজারের উষ্ণতা। ক্ষত-বিক্ষত ঘাসফুল সভ্যতার ক্ষুধা মিটিয়ে আঁধারে স্নান শেষে সভ্যতাকে করে পবিত্র! ** প্রতিজ্ঞা জিনিয়াস মাহমুদ পায়ে ব্যথা; তাই বলে ভেবো না যে- হাঁটতে পারবো না! আমি ঠিকই আমার গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাব, হয়তো একটু সময় লাগবে। না, লাঠি নয়; ওটা তুমিই ব্যবহার করো। আমি নিজের পায়েই দাঁড়াব, ইনশাআল্লাহ।
×