ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাজনীন বেগম

ছোট কাগজ ॥ পাতাদের সংসার

প্রকাশিত: ০০:৩১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ছোট কাগজ ॥ পাতাদের সংসার

ছোট কাগজ ‘পাতাদের সংসার’ ভিন্নমাত্রার এক ক্ষুদ্র সাময়িকী। দেশের বিজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠিত লেখক ছাড়াও উদীয়মান ও সময়ের প্রজন্মের নান্দনিক চৈতন্যের শিল্প সত্তাকে তুলে ধরতে প্রতিনিয়ত কর্মপ্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে যাচ্ছে। আলোচিত কাগজটিও তেমন সম্ভাবনার দিক নির্দেশক। সম্পাদক হারুন পাশা এই অনন্য সাময়িকীটির গুরুদায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এই আলাদা মাত্রার ছোট কাগজটির বিষয় সম্ভার সজ্জিত থাকে নির্ধারিত কিছু বৈশিষ্ট্যে যা সাংস্কৃতিক বোধের এক অনবদ্য চর্চা। এবারের বিষয় ‘পাতাদের সংসারকে যে মাত্রায় নিয়ে যায় তা যেন প্রবীণ ও নবীন সাহিত্যিকদের এক নান্দনিক মিলন সৌধ। খ্যাতিমান বয়োজ্যেষ্ঠ লেখকরা যেমন তাদের মর্যাদায় সমাসীন হয়েছেন পাশাপাশি কনিষ্ঠরা উদীয়মান যাত্রাপথের নতুন সম্ভাবনায় জায়গা করে নিয়েছেন। সত্যিই মুগ্ধতার বিস্ময় ঐতিহ্য, অভিজ্ঞতা আর সময়ের দীর্ঘ যাত্রাপথের বিদগ্ধ কাণ্ডারিদের সঙ্গে নতুন যুগের আধুনিক জ্ঞানের উৎকর্ষতায় নবীনদের যে শিল্পীত অনুভব অনুভূতি কাগজটির কলেবর সমৃদ্ধ করেছে তাও অতুলনীয়। ‘পাতাদের সংসারের এবারের সংকলন বই আলোচনা। ৮ম বর্ষের ২৫তম সংখ্যাটি বের হয় ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে। সম্পাদকের বক্তব্যে স্পষ্ট হয় ২০২০ সালে প্রকাশের অপেক্ষায় থেকেও করোনার আকালে তা অসম্ভবের পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। আগেই উল্লেখ করা হয় নবীন-প্রবীণের বোদ্ধিক মিলন মেলায় পাতাদের সংসার তার অঙ্গসজ্জায় ঋদ্ধ হয়। ৪৪টি বই আলোচনায় আসে। গ্রন্থ নির্ধারণে সময়ের বিবেচনায় ২০০০ থেকে ২০২০ সালকে গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেয়া হয়। তারপরেও বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকের কবি সাহিত্যিকদের সৃজন দ্যোতনার অংশীদারিত্ব পায় উল্লিখিত কাগজটি। ভাষার মাসের প্রাক্কালে প্রকাশিত কাগজটি সূচনা করা হয় ভাষা সংগ্রামী ও কবি সাহিত্যিক আহমদ রফিককে দিয়ে। স্বনামখ্যাত এই বিদগ্ধ পণ্ডিত ও রবীন্দ্র বোদ্ধা জীবন্ত কিংবদন্তির নতুন করে পরিচয় দেয়ার কিছুই নেই। ভাষা সংগ্রামী মুক্তিযুদ্ধের অস্থির সময়ের সূক্ষè পর্যবেক্ষক হবেন সেটাই তো স্বাভাবিক। ‘একাত্তরের পাক বর্বরতার সংবাদ ভাষ্য’ এর ওপর আলোচনা করেছেন রোবেল পারভেজ। নয় মাসের পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত সাঁড়াশি আক্রমণের ক্ষতবিক্ষত চিহ্ন রয়েছে আহমদ রফিকের লেখায়। তারই যথার্থ আলোচনা পাঠক সমাজকে নিবিষ্ট করে। করোনাকালে প্রয়াত ড. আনিসুজ্জামানের বই ‘স্মরণ-বরণ’ এর ওপর অল্প কথায় সাবলীল বর্ণনায় পাঠকদের মুগ্ধ করেছেন আলোচক ইলিয়াস বাবর। বাংলাদেশের খ্যাতিমান, যশস্বী এই নান্দনিক যোদ্ধা আপন মহিমায় স্বদেশ আর মানুষের জন্য যে আলোকিত ভাণ্ডার উৎসর্গ করেন আলোচ্য গ্রন্থটি সেই সফল জ্ঞানচর্চার সম্মিলন। গুণী ব্যক্তিত্ব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘রাষ্ট্র ও সংস্কৃতি: সমকাল থেকে সম্মুখের ওপর আলোকপাত করেছেন ফারুক সুমন। মুক্ত চিন্তা আর জ্ঞানসাধনার একনিষ্ঠ সৈনিক সিরাজুল ইসলামের মাতৃভাষা আর জন্মভূমি সঙ্গে সাংস্কৃতিক বোধের একাত্মতায় সমকাল যেভাবে চিহ্নিত হয়েছে পাশাপাশি এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশিত আকাক্সক্ষাও নির্দেশিত হয়েছে। আলোচক তাই পাঠক সমাজকে উপহার দিয়েছেন। সেলিনা হোসেন বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য কলমযোদ্ধা। স্বাদেশিকতায় ঋদ্ধ এই খ্যাতিমান লেখক বাংলার মাটি আর মানুষকে নিয়ে সৃষ্টিকল্পের যে অনবদ্য কাহিনী সম্ভার পাঠকদের বিমুগ্ধ করে তারই যথার্থ রূপরেখা দিয়েছেন আলোচক রুদ্র মোস্তফা। স্বল্প সময়ে সব লেখা নিয়ে বলা না হলেও এটা দ্বিধাহীনভাবে উল্লেখ্য যে প্রত্যেকেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে পরিচিত এবং পাঠকনন্দিত। বর্তমান সময়ের আর এক কবি মিলু শামস। তাঁর বই ‘দীর্ঘায়িত দুঃখগুলো।’ আলোচক ফরিদ হাসান। বয়সে নবীণ গিরীশ গৈরিক। শৈল্পিক সুষমায় পথচলা এই উদীয়মান কবি তার ছন্দোবদ্ধ কবিতার মধ্যে মাতৃবন্দনা করেন, ধ্যানমগ্ন অনুভব অনুরণনে কাব্যিক আবহকে অন্য মাত্রায় পরিশীলিত করেন। আধুনিকতায় নির্মাল্য কবির নান্দনিক পরিক্রমাকে সৃজন শৌর্যের অপরূপ মহিমায় অনবদ্য করে তোলে। ক্ষুদ্র এই সাময়িকীর বহুল প্রচার এবং পাঠক প্রিয়তার প্রত্যাশা করছি।
×