ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার

রাজধানীতে বালককে গলা কেটে, স্কুলছাত্রকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

রাজধানীতে বালককে গলা কেটে, স্কুলছাত্রকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজন খুন হয়েছে। এদিকে দুজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, পুরান ঢাকার ওয়ারীর একটি বাসা থেকে হাসান (১২) নামে এক বালককে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে স্থানীয় পদ্মনিধি লেনের ৮/১/এ নম্বর ভবনের ছয়তলা একটি ফ্ল্যাটের তালা ভেঙ্গে শিশুটির গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। ওয়ারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান পদ্মনিধি লেনের ওই ভবনের ছয়তলায় খালা আয়শা ও খালু জামাল ভূঁইয়ার সঙ্গে থাকত শিশু হাসান। বুধবার রাত ১টার দিকে খবর পেয়ে পুলিশ ওয়ারীর ওই বাসায় গিয়ে তোষকের ওপর থেকে হাসানের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বাসার লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, হাসান বুধবার বিকেলে বাসায় একাই ছিল। কয়েকজন যুবক চুরি করার উদ্দেশে বাসায় ঢুকে। বাসায় হাসানকে একা পেয়ে হাসানকে গলা কেটে হত্যা করে বাসা থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা পয়সা নিয়ে যায়। এসআই আসাদুজ্জামান জানায়, এ ঘটনায় সোহেল নামের একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। জাহিদ নামের একজন পলাতক রয়েছে। তাদের সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিল। তাদেরকেও আটকের চেষ্টা চলছে। এছাড়া আশপাশের ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এসআই আসাদুজ্জামান জানান, ওই বাসা থেকে আনুমানিক নগদ ৯০ হাজার টাকা ও কিছু স্বর্ণ খোয়া গেছে বলে দাবি করেছেন বাড়ির গৃহকর্ত্রী আয়শা। মৃত হাসানের খালু জামাল ভূঁইয়া জানান, হাসানের ছোটবেলায় তার মা ফাতেমা আক্তার ও বাবা মঞ্জু আলাদা হয়ে যায়। হাসানরা দুই ভাই দুই বোন। বাবা মা আলাদা হওয়ার পর থেকে সবাই নানা-নানির কাছে থাকত। নানা-নানি মারা যাওয়ার পর পাঁচ মাস ধরে তাদের সঙ্গেই বাসায় থাকে। তিনি জানান, ঘটনার সময় হাসান বাসায় একা ছিল। তার খালা আয়শা মার্কেটে গিয়েছিল। খালাত ভাই আজিজুল ইসলাম সন্ধ্যায় বাসায় এসে বাইরে থেকে দরজায় তালা ঝুলতে দেখে বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে। পরে আয়শা বেগম মার্কেট থেকে এসে তালা ভেঙ্গে ভেতরে গিয়ে হাসানকে গলাকাটা অবস্থায় দেখতে পায়। পরে পুলিশকে খবর দেয়। নিহতের খালু জামাল জানান, বাসার ভেতরে সব ভাঙ্গা ছিল। পরে দেখা যায় বাসা থেকে আনুমানিক নগদ ৯০ হাজার টাকা ও আট থেকে নয় ভরি সোনা খোয়া গেছে। তিনি জানান, আমাদের আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টার দিকে সবাই মিলে কক্সবাজার যাওয়ার কথা ছিল। চুরির উদ্দেশে বাসায় হয়তো রাতে কেউ ঢুকেছিল। হাসান তাদেরকে দেখে ফেলায় তাকে জবাই করে হত্যা করতে পারে বলে আমাদের ধারণা। এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি বাড়ির সামনের রাস্তায় অজ্ঞাত (২৪) এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম জানান, বুধবার রাত ১টার দিকে মোহাম্মদপুর তাজমহল রোড ১২/১২ বাড়ির সামনের সড়কে অজ্ঞাত ওই নারীর লাশ দেখে পুলিশ খবর দেয়। পরে সেখান থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সকালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মৃত্যুর কারণও এখন জানা যায়নি। এসআই শফিকুল জানান, নিহত নারী ভবঘুরে নয়। তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে আসল ঘটনা জানা যাবে। তদন্ত চলছে। অন্যদিকে রাজধানীর বনানীতে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে দুর্বৃত্তরা শাকিল (১৪) নামে এক স্কুল শিক্ষার্থীকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করা করেছে। বনানী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ ইয়াসিন হোসেন জানান, শাকিল নামের ওই কিশোর পরিবারের সঙ্গে বনানীর কড়াইল বস্তিতে থাকত। বুধবার গভীর রাতে বনানী স্টার কাবাবের পাশে ৪-৫ জন যুবক শাকিলের বুকে ছুরিকাঘাত করে। খবর পেয়ে স্বজনরা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাত সাড়ে ১১টার দিকে মহাখালী আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে জরুরী বিভাগে নিয়ে যায়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক শাকিলকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি জানান, এই ঘটনায় নিহতের স্বজনরা বনানী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে। পরে তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত শাকিলের বাবা জসিম জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলায়। কড়াইল বস্তিতে নিজেদের বাড়িতে থাকেন তারা। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট শাকিল। সে স্থানীয় একটি স্কুলে পড়ত। তিনি জানান, বুধবার রাতে কয়েকজন যুবক তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ছুরিকাঘাত করে। কারা, কি কারণে তাকে খুন করেছে তা তিনি জানাতে পারেননি। দুজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু ॥ রাজধানীর গুলশানে মোঃ রনি (১৭) এক কিশোর নিরাপত্তাকর্মী আত্মহত্যা করেছে। নিহতের বাবার নাম মোঃ মুক্তার হোসেন। গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট মোরেলগঞ্জ উপজেলায়। তিনি গুলশান নিকেতনের ছয় নম্বর রোডের ২৬ নম্বর বাড়িতে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। নিহতের ভাই আরিফ বলেন, রনি গত দুই বছর ধরে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন। এর আগে অন্য কোম্পানিতে থাকলেও ১২ দিন হলো ল্যান্সার কোম্পানিতে যোগ দিয়েছেন। আমার ভাইকে বাথরুমের ভেতর থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার করে তার সহকর্মীরা। এদিকে রনির সহকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী নিরাপত্তা কর্মী ইমন জানান, বুধবার রাতে ডিউটি শেষ করে আমি আর রনি এক সঙ্গেই ঘুমাই। প্রতিদিনের ন্যায় ঘুমানোর সময় রাত ১১টার দিকে রনি টয়লেটে যায়। যাওয়ার আগে আমাকে বিছানা ঝাড়তে বলে যায়। অনেকক্ষণ কেটে গেলেও রনি টয়লেট থেকে বের হয় না। এতে আমি তাকে ডাকতে টয়লেটে দরজায় নক করতে থাকি। কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে টয়লেটের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি ভেতরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে রনি ঝুলছে। পরে শাবল দিয়ে টয়লেটের দরজা ভেঙ্গে রনিকে উদ্ধার করি। এরপর পুলিশকে ফোন করে বিষয়টি জানালে তারা এসে রনিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে রাত ১টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলের জরুরী বিভাগে আনা হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে বুধবার রাত সাড়ে ১২ টার দিকে পুরান ঢাকার লালবাগের মিনা বাজার সোডা শহীদ মাজার এলাকার একটি বাসায় শামীম নামে এক ব্যক্তিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আনেন তার বন্ধু পিয়াস। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে তাদের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়েছে।
×