ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসি

পঞ্চম ধাপের পৌর নির্বাচন নিয়েও শঙ্কা

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

পঞ্চম ধাপের পৌর নির্বাচন নিয়েও শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পৌরসভায় পঞ্চম ধাপের নির্বাচন নিয়েও শঙ্কা বাড়ছে। আর একদিন বাদেই অনুষ্ঠিত হবে এই ধাপের ভোট। এর আগের চার দফায় অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনগুলোতে কমবেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ইসির আশ্বাস সত্ত্বেও বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি হয়েছে। আগামী রবিবার পঞ্চম দফায় ৩০ পৌর সভায় নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসি। ইসির সতর্ক পদক্ষেপের মধ্যে নির্বাচনী প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে চার দফায় অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সির প্রার্থীদের মধ্যেই বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিরাজগঞ্জের একটি পৌরসভায় উভয়পক্ষের সহিংসতায় একজন নবনির্বাচিত কাউন্সিলের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া গত ১৪ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ দফায় নির্বাচনের দিনে চট্টগ্রামের পটিয়ায় ৮নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল প্রার্থীর দু’পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় এক প্রার্থীর ভাই নিহত হয়। এছাড়া ২৮ তারিখের নির্বাচনকে কেন্দ্রে করে বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটছে ইসির সতর্ক পদক্ষেপের মধ্যে। ভোলার চরফ্যাশন পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচনী মাঠে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন দুই পক্ষের ১২ জন। এছাড়াও বেশ কিছু স্থানে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় আশঙ্কা দেখা দিয়েছে পঞ্চম দফায় পৌর নির্বাচন কতটা সহিংসতামুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। আগামী রবিবার পৌরসভার পাশাপাশি ওইদিন বিভিন্ন উপজেলায় এবং ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন পদে উপনির্বাচনে ভোট নেয়া হবে। এই নির্বাচনের বিষয়ে ইসি কবিতা খানম সাংবাদিকদের বলেন, এসব ভোটে যাতে সহিংসতা না হয় সেজন্য কমিশন পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা বৈঠক করে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছি। কোন ঘটনার খবর পেলেই তাৎক্ষণিকভাবে রিটার্নিং অফিসার, ডিসি এবং ওসির সঙ্গে কথা বলছি। যদি সেই ঘটনা আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে হয়, সেক্ষেত্রে আচরণবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া এবং ফৌজদারি অপরাধ হলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। সতর্ক করেছি যাতে তারা শক্ত অবস্থানে থাকেন। এসব বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে থাকব। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ দফায়ও ৫৫ পৌরসভায় ভোট গ্রহণ করা হয়। এই নির্বাচনের আগেও ইসির পক্ষ থেকে যাতে কোন সহিংসতা না ঘটে সেজন্য ইসির পক্ষ থেকে বাড়তি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়। এর পরও বেশ কিছু পৌরসভায় সহিংতায় প্রাণহানি ঘটেছে। নির্বাচনের আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, চলমান পৌরসভার সামনের নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু ও সংঘাতমুক্ত হবে। নির্বাচনে কোথাও কোথাও ভোটে সংঘাত হয়। এগুলো চলে গেলে খুশি হব, কিন্তু যাচ্ছে না। ভোট সুষ্ঠু করতে আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনার দিক দিয়ে যা যা দরকার আমরা সব ঠিকভাবে দেখেছি। ইসির পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হলেও বেশ কিছু পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, গোলাগুলির ঘটনা ছাড়াও জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, ভোট প্রদানে বাধা দান, ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনার ঘটে। ঠাকুরগাঁওয়ে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে বোমা বিস্ফোরণ কেন্দ্রে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ, হাতের ছাপ নিয়ে ভোটারদের বের করে দিয়ে বহিরাগতদের ভোট প্রদান, প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের এজেন্ট বের করে দেয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এখন অনুষ্ঠিত হওয়া পৌরসভা নির্বাচনের বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘটনা ঘটে। তবে এবারের পৌরসভায় কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও নির্বাচনের উল্টোচিত্র দেখা গেছে। বিশেষ করে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি। অনেক নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনকে কেন্দ্রে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ভোট পড়ার হার ছিল সন্তোষজনক। নির্বাচনে ভোটারদের আস্থা ফেরার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমনকি বিএনপির অনেক প্রার্থী নির্বাচনে জয়লাভ করার পাশাপাশি ভোট পাওয়ার হার তাদের অনেক বেড়েছে। তাদের অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে জয় পেয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি অনেকটা নির্বাচনী মাঠে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় রয়েছে। তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে ভোটার উপস্থিতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সহিংসতায় বাড়ছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে সহিংসতায় বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া অনেক পৌরসভায় অনিয়মের অভিযোগ এসে বিএনপি প্রার্থীদের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার ঘটনাও কম নয়। আগের চার দফা নির্বাচনের ফলে দেখা গেছে চতুর্থ দফায় ভোট পড়েছে ৬৫.৬৮ শতাংশ। এর আগে তিন দফায় পরিচালিত পৌর ভোটের ভোটার উপস্থিতির শতকরা হার ছিল ৬০ থেকে ৭০ এর ঘরের মধ্যে। এর মধ্যে গত ২৮ ডিসেম্বর পরিচালিত প্রথম দফায় ভোটের হার ছিল ৬৫ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ১৬ জানুয়ারি ৬২ শতাংশ ও ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ ভোট পড়ে। এদিকে পৌরসভায় ভোটার উপস্থিতি, ভোটের পরিবেশ নিয়েও বরাবরই সন্তোষ প্রকাশ করছে ইসি। তারা সহিংসতার ঘটনা বিচ্ছিন্ন বলেও উল্লেখ করছেন। এছ্ড়াা প্রতিটি নির্বাচনে আরও কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। সে অনুযায়ী চতুর্থ দফায় ঝুঁকিপূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। এর মধ্যে অনেক জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ভোটে অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে। এ অবস্থায় আগামী রবিবার অনুষ্ঠিত হবে পঞ্চম দফায় পৌরসভা ভোট। এখন দেখার বিষয়, এই দফায় নির্বাচন কতটা সহিংসতামুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।
×