ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ

একযুগ পেরিয়ে গেলেও বিস্ফোরক মামলার নিষ্পত্তি হয়নি

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

একযুগ পেরিয়ে গেলেও বিস্ফোরক মামলার নিষ্পত্তি হয়নি

গাফফার খান চৌধুরী ॥ পিলখানায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞের একযুগ পেরিয়ে গেলেও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি। চলতি বছর বিস্ফোরক মামলার বিচারিক কার্যক্রম নিষ্পত্তি হচ্ছে বলে সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে বিস্ফোরক ও হত্যা মামলার পলাতক বিশ আসামির কেউ গ্রেফতার হয়নি। এছাড়া ঘটনার সময় পিলখানা থেকে খোয়া যাওয়া ৬৪টি অত্যাধুনিক বিদেশী পিস্তল ও ৫টি চাইনিজ রাইফেলসহ বেশ কিছু অস্ত্র গোলাবারুদ এখনও উদ্ধার হয়নি। খোয়া যাওয়া অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহীরা ৫৭ সেনা কর্র্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যার পর অনেকের লাশ গণকবর দেয়। আবার কারও লাশ নর্দমায় ম্যানহোলে ও ডোবায় ফেলে দেয়। অনেক লাশ পুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে বিদ্রোহীরা। বিডিআর বিদ্রোহের নামে সেনা হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার লালবাগ থানার তৎকালীন ওসি নবজ্যোতি খীসা হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে লালবাগ থানায়ই পৃথক ২টি মামলা দায়ের করেন। মামলা ২টি পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। ফৌজদারি আইনে মামলা ২টির তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ। ২০১৩ সালের ৫ নবেম্বর কারা অধিদফতরের পাশের মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মোঃ আখতারুজ্জামান হত্যা মামলার ৮৫০ আসামির মধ্যে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২৭১ জনকে খালাস দেন। অন্যদের ২ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। প্রসঙ্গত, এ মামলার তিন আসামি মৃত্যু হওয়ায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। আর বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করে মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। পরবর্তীতে বিস্ফোরক মামলায় সম্পুরক চার্জশীট দাখিল করা হয়। সর্বশেষ দাখিলকৃত চার্জশীট মোতাবেক আরও ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। বর্তমানে এ মামলার আসামির সংখ্যা ৮৩৪। বিস্ফোরক আইনের মামলাটি বর্তমানে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। ৮৩৪ জন আসামির মধ্যে মাত্র একজন বেসামরিক ব্যক্তি। বাকিরা বিডিআরের সদস্য। আসামিদের মধ্যে ২৪ জন মারা গেছে। জীবিত আছে ৭৯০ জন। পলাতক রয়েছে ২০ জন। সর্বশেষ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি চার জনের সাক্ষ্য নেয় আদালত। এই নিয়ে ১৮৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হলো। আগামী ২৩ ও ২৪ মার্চ পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছে আদালত। গত বছর এ মামলার এজাহারভুক্ত ৭৮৩ নম্বর আসামি আতিকুল ইসলাম হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে তার জামিন স্থগিত হয়। বিডিআর বিদ্রোহে হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলা দুইটির তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় পিলখানায় প্রায় এগারো হাজার বিডিআর জওয়ান উপস্থিত ছিল। বিডিআর সদর দফতরের সাড়ে ৪ কিলোমিটার আয়তনের মধ্যে প্রায় একশ’টি স্থাপনা রয়েছে। প্রতিটি স্থাপনাতেই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। পিলখানায় খুন, অপহরণ, জিম্মি, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, গণকবর, অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, নগদ টাকা পয়সা, সোনাদানা, মোবাইল ফোন লুটপাটসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে সিআইডি ৩ হাজার ৭শ’টি আলামত সংগ্রহ করেছে। বিদ্রোহীরা অস্ত্রাগার লুট করে। বিডিআর হত্যাযজ্ঞে পিস্তল, এলএমজি, এসএমজি ও গ্রেনেডসহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৩ হাজার ৭শ’টি অস্ত্র ও অস্ত্র অনুযায়ী গোলাবারুদ ব্যবহৃত হয়েছে। বিদ্রোহের সময় পিলখানা থেকে ১শ’ ৯৯টি গ্রেনেড, ৬৪টি পিস্তল ও ৫টি রাইফেলসহ প্রায় ৩শ’টি অস্ত্র খোয়া গেছে। বিডিআর বিদ্রোহের পর থেকে এখন পর্যন্ত খোয়া যাওয়া ৬৪টি পিস্তল ও ৫টি চাইনিজ রাইফেল উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এমনকি পলাতক ২০ জনকে এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পলাতকদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
×