ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হঠাৎ ছাত্র আন্দোলনের পেছনে বিশেষ মহলের ইন্ধন!

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

হঠাৎ ছাত্র আন্দোলনের পেছনে বিশেষ মহলের ইন্ধন!

শংকর কুমার দে ॥ হঠাৎ করে শিক্ষাঙ্গনে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরির পেছনে কারো মদদ রয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের বিভিন্ন দাবিকে এক দাবিতে পরিণত করে বড় ধরনের আন্দোলনের ছক কষা হচ্ছে। পরীক্ষা গ্রহণ, শিক্ষাঙ্গন ও ছাত্রাবাস খুলে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন, রাস্তা অবরোধ করছে শিক্ষার্থীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে আন্দোলন চলছে অনেক প্রতিষ্ঠানে। করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাঙ্গন ও ছাত্রাবাস খুলে দেয়ার মতো এই ধরনের দাবি ও আন্দোলন রীতিমতো আত্মঘাতী। অতীতের নিরাপদ সড়ক, কোটা বিরোধী আন্দোলনের মতো পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি করতে চায় এই মহল। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এই ধরনের তথ্যের উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হঠাৎ করে ছাত্র আন্দোলনের পেছনে অন্য কোন অপশক্তির কারসাজি রয়েছে। শিক্ষাঙ্গন ও ছাত্রাবাস খুলে দেয়ার ইস্যুকে মদদ দেয়া হচ্ছে। এর আগে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন বা কোটা বিরোধী আন্দোলনের পেছনেও অশুভ শক্তির উস্কানি ও মদদ দেয়ার তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। এখন আবার রাজপথে সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়ে পরীক্ষা গস্খহণ, শিক্ষাঙ্গন ও ছাত্রাবাস খুলে দেয়ার দাবিতে দেশে নৈরাজ্যকর ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। কাতারভিত্তিক টেলিভিশন আলজাজিরা ও বিদেশের মিডিয়ায় অপপ্রচার চালানোসহ সাম্প্রতিক সরকার বিরোধী যে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে, সেই ষড়যন্ত্রের একটি অংশ এই ছাত্র আন্দোলন হতে পারে বলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা আশঙ্কা করছে। আলজাজিরার প্রতিবেদন, বিএনপির নির্বাচন কেন্দ্রিক আন্দোলন, জামায়াতের ষড়যন্ত্র এবং বর্তমানে শিক্ষাঙ্গন ও ছাত্রাবাস খুলে দেয়ার এই ছাত্র আন্দোলন একই সূত্রে গাঁথা কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে ছাত্র আন্দোলনের নানা রকম ধরন তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয়ার জন্য রাস্তায় নেমেছিল। তারা চাচ্ছে যে পরীক্ষাটি হোক। সরকার তাদের দাবি মেনে নেয়ায় আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে। এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনের চেষ্টা করছে। দ্বিতীয়ত যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ওপর নির্ভরশীল এবং আবাসিক হলে থাকে তারা এখন অস্থির হয়ে উঠেছে। তারা এখন হল খোলার দাবিতে আন্দোলন করছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়েছে এই আন্দোলন। হল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পড়ে তারা হল ত্যাগ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই আন্দোলন বড় আকার ধারণ করতে পারে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই আন্দোলনের সূচনা হয়েছে। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কোন সময় আন্দোলন প্রকাশ্য রূপ নিতে পারে বলে স্থানীয় ছাত্ররা জানিয়েছে। তৃতীয়ত বিসিএস পরীক্ষা যারা অংশগ্রহণ করতে চান তারাও মনে করছেন যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো না খুললে বা লাইব্রেরিগুলো না খুললে তাদের বিসিএসের প্রস্তুতি হচ্ছে না। ফলে তাদের দিক থেকেও একটি আন্দোলনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। চতুর্থত যারা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন তারা পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য আবাসিক হলসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছে এবং তারা দ্রুত শিক্ষা জীবনে ফিরতে চেয়েছে। অপরদিকে সরকার এখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ঝুঁকি নিতে চায় না। জীবন বাঁচানো আগে, তারপর অন্য কিছু। জীবনের চেয়ে অন্য কিছুই বড় হতে পারে না। আর সরকার কোমলমতি ছাত্রদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে না। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আবাসিক হল খুলে দিলে সেখানে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায়িত্ব কে নেবে। সরকারের একাধিক মহল মনে করছে যে, হঠাৎ করে ছাত্র আন্দোলনের পেছনে অন্য কোন অপশক্তির কারসাজি রয়েছে। কারো উস্কানিতে শিক্ষার্থীরা এই অযৌক্তিক দাবিতে মাঠে নেমেছে। সরকার ইতোমধ্যে ঈদ-উল-ফিতরের পর ২৪ মে থেকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যে সকল বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করেছে এবং একাডেমিক পরীক্ষা স্থগিত করেছে। সে ঘোষণা মানছে না কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে উঠতে চান। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের পর আবাসিক হলে ওঠার দাবিতে ইতোমধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। হল খোলার দাবিতে সরব হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও। তারা দ্রুততম সময়ে হল খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। হল খোলার দাবিতে অনড় রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন, সরকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান নিশ্চিত করবে ১৭ মে’র পূর্বে। শিক্ষামন্ত্রীও একথা বলেছেন। সে কারণে ১৭ মে থেকে শিক্ষার্থীদেরকে আবাসিক হলে ওঠানোর উদ্যোগ নেবে। প্রথম ডোজের চার সপ্তাহ পরে শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে পারে। ১৭ এপ্রিলের মধ্যে যাতে সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে টিকা প্রদান নিশ্চিত করা হয়, আমরা সে অনুরোধ করেছি। কিন্তু উপাচার্যের এমন সিদ্ধন্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছে, নির্ধারিত আলটিমেটামের মধ্যে যদি হল খুলে না দেয়া হয় তাহলে তারা পরবর্তী কর্মসূচীতে যাবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচারের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তিনদফা দাবিতে অনড় রয়েছেন। তারা তাদের দাবিতে ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছেন এবং ক্যাম্পাসের হল খোলার দাবিতে ২৩ শিক্ষার্থী রাত্র যাপন করেছেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দিতে পাঁচ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে (ইবি) শিক্ষার্থীরা। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে থাকা রুটিন পরীক্ষাগুলো দিতে চান শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষাগুলো এখন না গ্রহণ করলে শিক্ষার্থীরা আবারও দীর্ঘ সেশনজটে পড়বে। না হলে ক্যাম্পাস খোলার পর আটকে থাকা এই পরীক্ষা নিতে শিক্ষকরা হিমশিম খাবে। এছাড়া অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ও একই দাবিতে অনড় রয়েছে বলে জানা গেছে।
×