ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রেজাউল করিম সিদ্দিকী

ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকা তখন উত্তাল। রাজধানীর এই রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন জেলা শহরে। সে সময়ের ময়মনসিংহ জেলার সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আনন্দমোহন কলেজেও এই আন্দোলনের ঢেউ এসে পৌঁছায়। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে চলমান আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রসমাজ। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় এম শামসুল হক ছিলেন এই কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দীর্ঘ ছয় মাস কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে তাকে বন্দী করে রাখা হয়। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি ময়মনসিংহ শহরে প্রথম শহীদ মিনার স্থাপনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ভাষা আন্দোলনে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এ বছর মরণোত্তর একুশে পেলেন ভাষাসৈনিক এম শামসুল হক। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে তার অবদানের এই স্বীকৃতি দীর্ঘদিন পরে হলেও আমাদের জন্য এক অনন্য গৌরব ও আত্মতৃপ্তির বিষয়। পৃথিবীতে বাঙালী একমাত্র জাতি যারা নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির দাবিতে নিজের প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছে। ১৯৫২ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন এবং জীবন উৎসর্গ করা পৃথিবীর ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ইতিহাসের এই বিরল ঘটনার একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন ভাষাসৈনিক এম শামসুল হক। এম শামসুল হক ১৯৩০ সালের ২৯ জানুয়ারি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কামারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা এ্যাডভোকেট সমীর উদ্দিন ছিলেন একজন নামকরা আইনজীবী। ভাষাসৈনিক এম শামসুল হক ১৯৬৬’র ছয় দফা, ’৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭০ সালের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ময়মনসিংহ-১৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালের চতুর্থ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম ও ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ময়মনসিংহ-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে তিনি ফুলপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৬ সালে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। তৃণমূল থেকে উঠে আসা ব্যাপক জনপ্রিয় এই নেতার স্থানীয় জনগণের প্রতি ছিল অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। অবিসংবাদিত এই নেতা বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল আন্দোলন সংগ্রামে সম্মুখ সারির একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সাধারণ মানুষকে অতি সহজেই আপন করে নেয়ার এক মোহনীয় ক্ষমতা ছিল তার মধ্যে। তার স্ত্রী আম্বিয়া খানম একজন গৃহিণী হওয়া সত্ত্বেও তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে ছিলেন নিরন্তর অনুপ্রেরণার উৎস। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তিন পুত্র ও তিন কন্যা সন্তানের গর্বিত পিতা। ২০০৫ সালের ৩০ মে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ভাষাসৈনিক এম শামসুল হক পরলোক গমন করেন। তারাকান্দা উপজেলার বঙ্গবন্ধু সরকারী ডিগ্রী কলেজ প্রাঙ্গণে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন এই কীর্তিমান পুরুষ।
×