ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেনেড হামলার আসামি

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

গ্রেনেড হামলার আসামি

ভয়াবহ একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ইকবাল হোসেনকে সোমবার রাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের সহযোগিতায় র‌্যাব রাজধানীর দিয়াবাড়ি থেকে। এক সময় ছাত্রদল করে কুখ্যাত মুফতি হান্নানের জঙ্গী দলের সক্রিয় কর্মী ইকবাল বিভিন্ন সময় পরিচিত ছিল জাহাঙ্গীর ওরফে সেলিম নামেও। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট জঙ্গী নেতা মুফতি হান্নানের নির্দেশে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে মঞ্চ লক্ষ্য করে, যেখানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখছিলেন, সরাসরি গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছিল। হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ নিহত হন ২৪ জন। প্রধানমন্ত্রীসহ আহত হন অনেকে। দীর্ঘ কয়েক বছর পর ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর আদালত প্রদত্ত রায়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেকসহ ১৯ জনকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন, ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড। এর মধ্যে ৩৩ আসামি কারাগারে থাকলেও পলাতক ছিল ইকবালসহ ১৬ জন। হামলার পর ইকবাল বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থেকে পালিয়ে গিয়েছিল মালয়েশিয়ায়। সম্প্রতি সে দেশে অবৈধ ঘোষিত হলে পালিয়ে আসে বাংলাদেশে। উল্লেখ্য, গ্রেনেড হামলা ছিল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার অপপ্রয়াস। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে গ্রেনেড হামলা ছিল বর্বরোচিত ও কলঙ্কিত অধ্যায়। ২০০৪ সালের এইদিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে দলটির মিছিলপূর্ব এক সমাবেশে এই ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। হামলার মূল টার্গেট ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এই হামলার শিকার অনেকেই এখনও শরীরে ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন। হামলায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও তাঁর শ্রবণেন্দ্রীয় গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে ভিন্ন আদর্শ ও ভিন্নমত থাকবে। সেই মত জনমুখী করতে রাজনৈতিক দলগুলো সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তা তুলে ধরবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোন দলকে নিশ্চিহ্ন করা বা দলটিকে নেতৃত্বশূন্য করার ষড়যন্ত্র কোন সভ্য সমাজে কাম্য হতে পারে না। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া যে এ ধরনের হামলা সম্ভব নয় তা এখন প্রমাণিত। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াতসহ চারদলীয় জোট সরকার এ ঘটনার পর তদন্তে দায়িত্বশীল ভূমিকা নেয়নি। বরং ঘটনার পরপরই সরকারের প্রভাবশালী মহল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হাওয়া ভবনের সম্পৃক্ততার কথা, ঘটনার পর আলামত নষ্ট করা, এফবিআই-এর তদন্ত দলকে সহযোগিতা না করার মতো ঘটনা ঘটেছিল। এমনকি প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে জজ মিয়া নাটকের অবতারণা করেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এমনটাও বলেছিলেন যে, শেখ হাসিনা ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে এসেছিলেন। সংসদেও অনুরূপ মিথ্যাচার করেছিল সরকারী দল। পরবর্তীকালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই ঘটনার তদন্ত করে ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে জঙ্গী সংগঠন হরকত-উল-জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আদালত এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয়। পুনর্তদন্ত শেষে ২০১১ সালের তিন জুলাই আরও কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে একটি সম্পূরক চার্জশীট আদালতে জমা দেয়া হয়। ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর বুধবার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্র্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালত গ্রেনেড হামলার বিচারের রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। মোট ৫২ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড ইতোপূর্বে কার্যকর করা হয়েছে অন্য মামলায়। দেশবাসী এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের বিচারের রায় দ্রুত বাস্তবায়নের প্রত্যাশী। এই মামলার রায়ের পেপারবুক প্রস্তুত করে সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছে। যথাশীঘ্র এর শুনানিপূর্বক দণ্ডিত অপরাধীদের সাজা কার্যকর করা বাঞ্ছনীয়।
×