ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরিষাবাড়ীতে মুকুল বাহিনীর প্রভাবে বিপাকে সাধারণ মানুষ

প্রকাশিত: ১৭:০৮, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

সরিষাবাড়ীতে মুকুল বাহিনীর প্রভাবে বিপাকে সাধারণ মানুষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ জামালপুরের সরিষাবাড়ীর চার লক্ষাধিক মানুষের আতঙ্ক ‘মুকুল বাহিনী’। উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ, পৌরসভাসহ আটটি ইউনিয়নের সর্বময় ক্ষমতার মালিক কথিত এই বাহিনীর প্রধান সাখাওয়াত আলম মুকুল। তার নেতৃত্বে পুরো উপজেলায় চলছে সরকারি বরাদ্দের হরিলুট, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি। এমনকি থানা পুলিশও তার কথা শুনতে বাধ্য হয়। তথ্য প্রতিমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় জাতির পিতার প্রতিকৃতিও ভাঙচুর করেছে ‘মুকুল বাহিনী’। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীরাও তাদের হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এই বাহিনীর আক্রমণে গুলিবিদ্ধ হয়ে চোখ হারিয়েছেন ছাত্রলীগনেতা আল মামুন। মুকুলবাহিনীর নির্যাতন থেকে বাদ পড়েননি স্থানীয় সাংবাদিকরাও। জানা গেছে, সরিষাবাড়ী উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের চৌখা গ্রামের দরিদ্র শাহজাহান আলী সেকের ছেলে সাখাওয়াত আলম মুকুল একসময় যুবদল করতেন। নবম জাতীয় সংসদে ডা. মুরাদ হাসান এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তার বাড়ির ফরমায়েশ খাটতেন এই মুকুল। প্রতিমন্ত্রীর বাড়ির কাজের মেয়েকে বিয়ে করেন মুকুল। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে কোন্দলকে কেন্দ্র করে মুকুলের নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা করা হয়। এরপরই মূলত তিনি আলোচনায় আসেন। ডা. মুরাদ হাসান পুনরায় এমপি নির্বাচিত ও প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হলে পুরো উপজেলায় পাতেন তার আধিপত্যের জাল। আওয়ামী লীগ বা অঙ্গ সংগঠনের কোথাও কোনো পদ-পদবি নেই তা। কিন্তু তার ইশারা ছাড়া গাছের পাতা নড়ে না। তার রয়েছে অর্ধ কোটি টাকার বিলাসবহুল ‘নোয়া’ ব্র্যান্ডের প্রাইভেট কার। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা পরিষদের সকল দপ্তরে মুকুলের রয়েছে হাত। তার অনুমতি ছাড়া একটি প্রকল্পও তালিকাভুক্ত হয় না। এরমধ্যে ২০১৯ ও ২০২০ সালে পিআইও অফিসের বরাদ্দকৃত টিআর, জিআর, কাবিখা প্রকল্পগুলো মুকুলের পছন্দমতো নাম-তালিকা করা হয়েছে। যার ২০ ভাগও বাস্তবায়ন হয়নি। অতিদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ৪০ দিনের কর্মসংস্থান (ইজিপিপি) কর্মসূচির দুই কোটি ৫৯ লাখ টাকার সিংহভাগ হরিলুট করা হয়েছে তারই নেতৃত্বে। করোনা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণের প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ প্রায় ৫০ লাখ টাকা এবং ভিজিএফ প্রকল্পের ২০২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, বরাদ্দকৃত সহায়তাগুলো লোক দেখানো কিছু বিতরণ করা হলেও সিংহভাগ চাল গুদাম থেকেই উধাও হয়ে যায়। মুকুলের নেতৃত্বে এ হরিলুট হলেও কাগজে-কলমে এর দায়ভার পড়েছে পিআইও হুমায়ুন কবীরের ওপর। অভিযোগ তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় টাঙ্গাইল রেকর্ডপত্র তলব করে সম্প্রতি পত্র দিয়েছে তাকে। এছাড়া সোলার হোম সিস্টেম ও ব্রিজ নির্মাণ কাজও মুকুলের পছন্দের লোকদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। আশ্রয়হীনদের জন্য উপজেলায় ১৯৫টি ঘরের কয়েকটি ঘর বিনামূল্যে দেওয়া হলেও বেশিরভাগ উপকারভোগীর কাছ থেকে ২০-৫০ হাজার টাকা করে উৎকোচ নিয়েছে মুকুল বাহিনী। তারা এই ঘরগুরো নি¤œমানের ইট-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করেছে। কয়েজন ইউপি চেয়ারম্যান জানান, পিআইও অফিসের সকল দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে ভুয়া মাস্টাররোল তৈরি করা হয়েছে। মাস্টাররোলে একই সুবিধাভোগীর নাম ৫-১০ বার করে দেখানো হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানদের অনুকূলে প্রকল্প বরাদ্দ হলেও তারা ভালো-মন্দ জানেন না কিছুই। শুধুমাত্র স্বাক্ষর নেওয়া হয় তাদের। মুকুল বাহিনীর আতঙ্কে বাধ্য হয়ে স্বাক্ষর করেন তারা। শুধু পিআইও অফিস-ই নয়; উপজেলা খাদ্য গুদাম, স্থানীয় সরকার বিভাগ, কৃষি দপ্তর- সর্বত্রই মুকুলের আধিপত্য। মুকুল খাদ্য গুদামে নিজেকে কৃষক প্রতিনিধি নাম দিয়ে ধান সংগ্রহ অভিযানের সমস্ত ধান ডিলার রাজু মিয়ার মাধ্যমে তিনিই দেন। চাল সংগ্রহ অভিযানের ক্ষেত্রেও ভূয়া চাতাল কল তালিকায় সব চাল একাই দেন। সরকারিভাবে ধান-চাল ক্রয়ে অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকারের হুশিয়ারি থাকলেও তা উপেক্ষা করায় বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত কৃষকরা। গেল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষি পুনর্বাসনের আওতায় ১৭ হাজার ৩৩০ জনকে তালিকাভুক্ত করা হয়। বেশিরভাগ ভূয়া তালিকা করে মুকুলের পছন্দের লোকদের প্রদান এবং কোনো কোনো কৃষককে সার-বীজ বিক্রি করে নামমাত্র কিছু টাকা ধরিয়ে দেওয়া হয়। উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় ও পৌরসভার সকল টেন্ডারেও মুকুল বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ। এডিপিসহ সকল উন্নয়ন কাজের টেন্ডারে ভয়ভীতি দেখিয়ে ঠিকাদারদের দরপত্র প্রত্যাহার করানো হয় এবং পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নামেমাত্র কার্যাদেশ দেখিয়ে মুকুল ও তার লোকজন নিম্নমানের কাজ বাস্তবায়ন করে। এছাড়া দেশের সর্ববৃহৎ যমুনা সার কারখানা এলাকায় চলছে প্রতিদিন নীরব চাঁদাবাজি। তারাকান্দি ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক মুকুল ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম মানিকের মাধ্যমে প্রতিবস্তা সার পরিবহন বাবদ দুই টাকা হারে প্রতিমাসে অর্ধ কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে আসছেন মুকুল। এছাড়া সিবিএ’র মাধ্যমে কারখানার ভেতরে চাঁদাবাজি, উৎকোচ বাণিজ্য, দৈনিক হাজিরাভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যও কথিত ওই বাহিনীর হাতে। যমুনা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের নিয়ন্ত্রকও এই মুকুল বাহিনী। বর্তমানে উপজেলার শতাধিক স্পটে অবৈধ ড্রেজার মেশিন চলে। প্রতিটি মেশিন থেকে প্রতিমাসে মুকুলকে দিতে হয় ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে। অভিযোগ রয়েছে, মুকুল বাহিনীর অন্যায়ে কেউ প্রতিবাদ করলে নেমে আসে ভয়াবহ নির্যাতন। বাস টার্মিনাল এলাকায় তিনি গড়ে তুলেছেন তার নিয়ন্ত্রণ অফিস। তার এ অফিস, শিমলাপল্লীর বাসা ও আশেপাশে জমা করে রেখেছেন অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র। যা তার বাহিনীর সদস্যরা প্রয়োজন হলেই ব্যবহার করে। তার ত্রাস বাহিনীর সদস্য সাবেক ছাত্রদলকর্মী শরিফ আহাম্মেদ নীরব, বিএনপি থেকে আসা একসময়ের দুর্ধর্ষ ক্যাডার বেলাল হোসেন, এমডি রানা সরকার, সামিউল ইসলাম সামির, জিএস রাজন, মহিউদ্দিন ওরফে সুমন চাকলাদার, রাজন স্বপন উল্লেখ্যযোগ্য। মুকুল বাহিনীর সদস্যরা অধিকাংশই বিএনপি থেকে অনুপ্রবেশকারী হওয়ায় এদের হামলার হাত থেকে রেহাই পাননি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের সিনিয়র ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা। সম্প্রতি সারাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য রক্ষায় সোচ্চার হলেও সরিষাবাড়ীতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভাঙচুর করে প্রকাশ্যে ঘুরছে এ বাহিনীর লোকজন। জানা গেছে, গত ১৫ ডিসেম্বর রাতে তারাকান্দিতে বিজয় দিবস পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। এসময় সাখাওয়াত আলম মুকুলের নেতৃত্বে সশস্ত্র ক্যাডার সেখানে অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধলে মুকুল বাহিনী রফিকুল ইসলামের লোকজনের উপর গুলিবর্ষণ করে এবং বিজয় দিবসের মঞ্চ ও সেখানে টাঙানো জাতির পিতার প্রতিকৃতি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন গুলিবিদ্ধ ও তারাকান্দি পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ তরিকুল ইসলামসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, বিজয় দিবস উদযাপনের মঞ্চে মুকুল বাহিনী বিনা কারণে হামলা করে। তাদের গুলিতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের ডান চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তাকে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতাল থেকে চক্ষু হাসপাতালে স্থানান্তর ও চোখের জটিল অপারেশন করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। তিনি চোখ ফিরে পাবেন কি-না চিকিৎসকরা এখনো বলতে পারছেন না। হামলাকারীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিও ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনায় মামলা হলেও সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে। জানা গেছে, একইভাবে মুকুল বাহিনী ২০১৯ সালের ২১ আগস্ট উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল-আমিন হোসাইন শিবলুর ওপর হামলা করে। সেদিন পৌরসভার সামনে শিবলুকে একা পেয়ে বেধড়ক মারধর করে তারা। দীর্ঘদিন তিনি রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ ঘটনায় সরিষাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের হলে আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেয়। ঘটনার প্রায় দেড় বছর হলেও রহস্যজনক কারণে মামলার চার্জশিট দেয়নি পুলিশ। গত বছরের ১৩ জানুয়ারি মুকুল বাহিনী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন সদস্য আব্দুর রাজ্জাককেও মারধর করে। উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর সরিষাবাড়ী জিগাতলা এলাকায় কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের একটি অনুষ্ঠান চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিষয়টি নিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান কৃষিমন্ত্রীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে হামলাকারীদের কিছুই করা হয়নি। গত ৯ জানুয়ারি রাতে জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ও সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন পাঠানকে তাঁরই বাড়িতে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে মুকুল ও তার বাহিনী। মুকুল বাহিনীর অত্যাচার হতে দলীয় নেতাকর্মীদের রক্ষায় সিনিয়র নেতারা প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের কাছে দাবি জানালে এ ঘটনা ঘটে। পরে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান সিনিয়র নেতাদের তোপের মুখে বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন পাঠানের পায়ে ধরে ক্ষমা চান। গত ১ ফেব্রুয়ারি উপজেলার শিমলাবাজারের নবনির্বাচিত ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল হক তরফদারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, স্বর্ণালঙ্কার লুটতরাজ ও নারীসহ অন্তত ১০ জনকে মারধর করে এ বাহিনী। পরাজিত প্রার্থী কালাচান পালকে নির্বাচনে জেতানোর জন্য চার লাখ টাকা চুক্তি নিয়ে ব্যর্থ হয়ে তারা ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে উপজেলার ইস্পাহানি আবাসিক মন্দিরে এ বাহিনী হামলা চালিয়ে সরস্বতী পূজা চলাকালে মন্ডপে হামলা চালায়। এতে অন্তত ১৫ জন আহত ও মন্ডপের মঞ্চ তছনছ হয়ে যায়। এছাড়া তাদের হাতে শিমলাবাজারের ব্যবসায়ী রাজু আহমেদের ওষুধ ও প্রিন্টার্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও লাঞ্ছিত, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জিন্দানুর, ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম ও পিডিবি অফিসে দেলোয়ারসহ কয়েকজন কর্মচারী মারধরের শিকার হন এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীম ও সাবেক মেয়র ফয়েজুল কবীর শাহীন কয়েকবার লাঞ্ছিত হন। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, কৃষি প্রণোদনা দাবি করাকে কেন্দ্র করে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জিন্দানুরের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরে ‘মুকুল সাহেব-ই’ বিষয়টি সমঝোতা করেন। পিডিবি’র কর্মচারী বশির উদ্দিন জানান, বিদ্যুতের রুটিন লোডশেডিং দেওয়ায় ‘মুকুল ভাই’ ক্ষিপ্ত হয়ে পিডিবিতে এসে কয়েকজনকে মারধর করেন। এ জন্য তথ্য প্রতিমন্ত্রী ফোন করে ‘সরিও’ বলেন। এদিকে মুকুল বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাননি স্থানীয় সাংবাদিকরাও। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল চুরি সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশন করায় গত বছরের ১০ এপ্রিল রাতে মুকুলের নেতৃত্বে আনন্দ টিভির উপজেলা প্রতিনিধি নাসিম উদ্দিনের বাসায় ঢুকে তার স্ত্রীর সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশের সহায়তায় নাসিম উদ্দিনকে মধ্যরাত পর্যন্ত থানায় আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন করা হয়। পরে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর আদায় ও সাংবাদিকতা বাদ দেওয়ার শর্তে ছেড়ে দেয়। এরপর কারো সহযোগিতা না পেয়ে এলাকা ছেড়ে তিনি টাঙ্গাইল শশুরবাড়িতে আশ্রয় নেন। এ ব্যাপারে সাংবাদিক নাসিম উদ্দিন বলেন, একসময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। কিন্তু দুর্নীতির নিউজ করায় শেষ পর্যন্ত আমাকেই দেশদ্রোহী বানিয়ে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। অনেক আকুতি-মিনতি করেও সেদিন লাভ হয়নি। সেই রাতের কথা মনে হলেই আতকে উঠি। শুধু নাসিম উদ্দিনই নয়। চাল চুরির সংবাদকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আরো কয়েকজন সাংবাদিককে এই বাহিনী একাধিকবার প্রাণনাশের হুমকি দেয়। যমুনা সার কারখানার দুর্নীতি-চাঁদাবাজির সংবাদ পরিবেশন করায় লাঞ্ছিত করা হয় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশন ও ভোরের কাগজের স্টাফ রিপোর্টার দুলাল হোসাইনকে। নেতিবাচক সংবাদ লেখায় প্রেসক্লাবসহ স্থানীয় গণমাধ্যম সংগঠনগুলোতে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এই বাহিনী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাংবাদিকরা জানান, গণমাধ্যমকর্মীদের স্বার্থেই তথ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু সে মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর এলাকাতেই গণমাধ্যমকর্মীদের আতঙ্কে থাকতে হয়। এদিকে মুকুল বাহিনীর প্রধান সাখাওয়াত আলম মুকুলের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগও রয়েছে। চাকরির লোভ দেখিয়ে সহজ-সরল সুন্দরী নারীদের ফাঁদে ফেলে তার সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করেন। জানা গেছে, ফেনী থেকে এক নারীকে প্রলোভনে সরিষাবাড়ীতে এনে বাস স্ট্যান্ডের এক বাসায় মুকুলের ক্যাডার বেলালের আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। তাকে মুকুল ও বেলাল উভয়েই ভোগ করছেন। অভিযোগ রয়েছে ২০১৯ সালের ৮ জুন তারাকান্দি গ্রামের এক যুবকের সাথে (৩৪) মাহমুদা সালাম মহিলা কলেজে পড়ুয়া মহিষাকান্দি গ্রামের এক সুন্দরী যুবতীর (২৩) বিয়ে হয়। শশুরবাড়ি থেকে কলেজে যাতায়াতের একপর্যায়ে ওই যুবতীর প্রতি মুকুলের কুনজর পড়ে। তাকে চাকরির লোভ দেখিয়ে কৌশলে তার সাথে সম্পর্কে জড়ায়। এদিকে মুকুলের সাথে ওই মেয়েটির মুঠোফোনে ভিডিওকলের আপত্তিকর দৃশ্য ও কল রেকর্ড স্বামীর কাছে ধরা পড়ে। এ ঘটনা মেয়েটির স্বামী সহ্য করতে না পেরে গত বছরের ১৬ জুন তাকে তালাক দেন। এরপর মুকুল ওই মেয়েকে দিয়ে তার স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে যৌতুক আইনে মামলা দায়ের করান। ঘটনাটি জানাজানি হলে মুকুল তার ক্যাডার বাহিনীর সশস্ত্র মহড়া দিয়ে ওই মেয়েকে তালাক প্রদানকারীর বাড়িতে রেখে আসে। এরপর ওই যুবকের মা সরিষাবাড়ী থানায় জিডি করেন। সম্প্রতি সরিষবাড়ী পৌরসভার নির্বাচনে অন্যান্য প্রার্থীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদটিও দখল করে নিয়েছেন। এসব অভিযোগ সম্পর্কে মুকুল বাহিনীর প্রধান সাখাওয়াত আলম মুকুলের ফোনে একাধকিবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
×