ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা শেষে আবুল মকসুদকে আজিমপুরে দাফন

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা শেষে আবুল মকসুদকে আজিমপুরে দাফন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আমৃত্যু মানবতাবাদকে জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। গান্ধীর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতি অনুরক্ত এই সামাজিক ও পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী সুতির সাদা কাপড়কে প্রতিবাদের পোশাক হিসেবে বেছে নেন। নির্মোহভাবে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করতেন সমসাময়িক রাজনীতি ও সমাজের নানা অসঙ্গতি। যে কোন অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে রাজপথে নেমে আসতেন। তিনি সাংবাদিক-কলামিস্ট, গবেষক ও নাগরিক আন্দোলনের নেতা সৈয়দ আবুল মকসুদ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন গুণী এই ব্যক্তিত্ব। বিশিষ্ট লেখক ও প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সর্বস্তরের মানুষ। বুধবার বিকেল ৩টায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। সেখানে কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বাংলাদেশের পতাকা দিয়ে তাকে আচ্ছাদিত করেন। তারপর থেকে শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন। এ সময় কৃষিমন্ত্রী বলেন, সৈয়দ আবুল মকসুদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা বর্তমান প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। তিনি বাঙালীর হৃদয়ে চিরদিন বেঁচে থাকবেন। তার চলে যাওয়া আমাদের জন্য সত্যিই বেদনাদায়ক। আমরা তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। বাংলা একাডেমির সচিব হাসনাত লোকমান শোকবাণীতে লেখেন, মানবিকতার উজ্জ্বল নক্ষত্র, অহিংস অনড় অন্তরের অধিকারী, বাংলা সাহিত্যে তার অনবদ্য অবদান প্রদীপ্তমান বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির গগনে। আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা তার বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি, প্রকাশ করি সমবেদনা তার পরিবার-পরিজনের প্রতি। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, আবুল মকসুদের পুরো জীবনটা ছিল প্রতিবাদের। তিনি জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত বিভিন্ন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছিলেন। তিনি লেখক, সাংবাদিক, গবেষকের বাইরে গিয়ে একজন কর্মী হয়ে রাজপথে আন্দোলন করে গেছেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সৈয়দ আবুল মকসুদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, সিপিবি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, ক্ষেতমজুর সমিতি, ভাসানী পরিষদ, ঐক্য ন্যাপ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাসদ, ছাত্র ফেডারেশন, গণসংহতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তি পর্যায়ের মানুষ। এর আগে সৈয়দ আবুল মকসুদের জানাজা হয় জাতীয় প্রেসক্লাবে। দুপুর আড়াইটায় এ জানাজায় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাইনুল আলম, আশরাফ আলী, কোষাধ্যক্ষ সাহেদ চৌধুরী, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ প্রমুখ। জানাজার আগে আবুল মকসুদের ছেলে নাসিফ মাকসুদ বলেন, বাবা এই দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছেন। দোয়া করবেন এবং কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে মাফ করে দেবেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন প্রয়াত আবুল মকসুদের স্মৃতিচারণ করে বলেন, নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করে তিনি কলাম লিখতেন। সবার শ্রদ্ধারপাত্র ছিলেন। জানাজা শেষে সাংবাদিক নেতারা তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নাগরিকদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তার আরেক দফা জানাজা হয়। বাদ আছর আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। সৈয়দ আবুল মকসুদ বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে নানা বই ও প্রবন্ধ লিখেছেন। বিখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন। পাশাপাশি কাব্যচর্চাও করেছেন। তার রচিত বইয়ের সংখ্যা চল্লিশের ওপর। বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। সৈয়দ আবুল মকসুদ ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার এলাচিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ আবুল মাহমুদ ও মা সালেহা বেগম। তার কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬৪ সালে এম আনিসুজ্জামান সম্পাদিত সাপ্তাহিক নবযুগ পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে। এটি ছিল পাকিস্তান সোশ্যালিস্ট পার্টির মুখপত্র। পরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি সমর্থিত সাপ্তাহিক ‘জনতা’য় কাজ করেন কিছুদিন। পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ বার্তা সংস্থায় যোগ দেন। সাহিত্যিক হিসেবেও তিনি খ্যাতিমান ছিলেন। ১৯৮১ সালে তার কবিতার বই ‘বিকেলবেলা’ প্রকাশিত। ১৯৮৭ সালে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘দারা শিকোহ’ ও অন্যান্য কবিতা প্রকাশিত। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বুদ্ধদেব বসু, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রমুখ প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করেছেন।
×