ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চলমান পরীক্ষা অব্যাহত থাকবে

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

চলমান পরীক্ষা অব্যাহত থাকবে

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ ‘চলমান পরীক্ষা অব্যাহত থাকবে’-শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন ঘোষণার পর সড়ক অবরোধ করে চলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে ঘরে ফিরেছে। নীলক্ষেত ও সাইন্সল্যাব মোড় অবরোধ করে দিনভর অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভের পর বিকেল পৌনে ৪টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় শিক্ষার্থীরা উল্লাস প্রকাশ করে আন্দোলন প্রত্যাহার করলে স্বাভাবিক হয় সড়কের অবস্থা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শর্ত দিয়েছে, ‘পরীক্ষা চলাকালে কলেজগুলোর হোস্টেল খোলা যাবে না এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে’। এই শর্ত মেনেই শিক্ষার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছে। বুধবার বিকেলে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য এবং সাত কলেজের অধ্যক্ষদের এক ভার্চুয়াল সভা সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দুই শর্তে কেবল ঘোষিত পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজসহ অন্য বিশ^বিদ্যালয়ের পরীক্ষা ২৪ মে পর্যন্ত বন্ধই থাকবে। এর আগে সোমবার অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি জানান, আসন ঈদের পর আগামী ২৪ মে থেকে দেশের সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও শ্রেণীকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। তার আগে ১৭ মে আবাসিক হলগুলো খুলবে। খোলার আগে কোন পরীক্ষা হবে না। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা ও হল খোলার ঘোষণা দিয়েছিল, সেই সিদ্ধান্তও বাতিল হবে। অবশ্য অনলাইনে ক্লাস চলবে। এরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাত কলেজের চলমানসহ সকল পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে। এই ঘোষণার পর মঙ্গলবার রাত আটটা থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নেন। এরপর বুধবার সকাল থেকে সড়ক বন্ধ করে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় পুরো এলাকায়। যার প্রভাব পরে ঢাকা শহরজুড়েই। বিশেষত মিরপুর রোডে ভয়াবহ যানজটে নাকাল হয় মানুষ। বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ির চালকদের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় রাস্তায়। সকাল থেকেই পুলিশ সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সড়ক ছেড়ে দেয়ার জন্য আল্টিমেটাম দিলেও শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে সরেনি। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে। তারা পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত বাতিল ও হল খুলে দেয়ার দাবিতে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে দুপুরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পুলিশ সদস্যদের গোলাপ ফুল দিতেও দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘পুলিশ ও শিক্ষার্থী ভাই ভাই। এখানে কোন বিরোধ নেই’। তবে সময় যত যেতে থাকে যানজটের অবস্থা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। প্রথমে সায়েন্স ল্যাব থেকে নিউ মার্কেটগামী গাড়িগুলো নিউ এলিফ্যান্ট রোড হয়ে কাঁটাবন দিয়ে বের করে দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু পরে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে অবস্থানের কারণে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। তিনটার দিকে পুরো মিরপুর রোডসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়তে এ অবরোধের প্রভাব পরে। বিভিন্ন সড়ক থমকে যায়। মিরপুর রোড ছাড়াও রমনা পার্কের আশপাশের সড়ক, শাহবাগ, কাঁটাবন মোড় ও বাটা সিগন্যাল সড়কেও দেখা দেয় তীব্র যানজট। মিরপুর রোড বন্ধ থাকায় যানজট সৃষ্টি হয় পুরান ঢাকার বংশাল, নয়াবাজার সড়কেও। ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের (তেজগাঁও) অতিরিক্ত উপকমিশনার মনজুর মোর্শেদ সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে পুরো মিরপুর রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে, যা গাবতলী পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। দুপুরে সাত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত (ফোকাল পয়েন্ট) ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজের কয়েকজন শিক্ষক নিয়ে ওই এলাকায় যান। তিনি জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের ডাকা হয়েছে। সেখানে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে বলে তিনি আশা করেন। তবে তার আশ্বাসের পরও সড়ক ছাড়েনি শিক্ষার্থীরা। তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে লিখিত আকারে বিজ্ঞপ্তি ও এর সুষ্ঠু সমাধান চান। ঠিক এমন অবস্থায় সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে খবর আসে শিক্ষার্থীদের কাছে। তবে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বিশেষ উদ্যোগে দুপুরের পরপরই বৈঠকে বসেন মন্ত্রনালয়ে। বিকেলে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য এবং সাত কলেজের অধ্যক্ষদের ভার্চুয়াল সভা বসে। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে শর্তসাপেক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সাত সরকারী কলেজের পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। শর্তের মধ্যে রয়েছে- পরীক্ষা চলাকালে হল খোলা যাবে না এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। বৈঠক শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, সাত কলেজের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। আগামী ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর এসব প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা নেয়া হবে। চলমান পরীক্ষা গ্রহণ করার সংবাদে উল্লাস প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে নীলক্ষেত মোড় থেকে অবরোধ তুলে নেন তারা। ফলে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এসময় তারা ‘সাত কলেজ জিতলো’, ‘সাত কলেজের জয় হলো’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা এ সিদ্ধান্তে খুশি। এখন আমাদের গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হবে’। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয় ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারী শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারী কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারী মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারী বাঙলা কলেজ ও সরকারী তিতুমীর কলেজ। এই কলেজগুলোয় মোট শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। দুই পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি বড় সরকারী কলেজের দুটি পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। বুধবারের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা ও আজ বৃহস্পতিবারের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। সাত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত (ফোকাল পয়েন্ট) ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার রাতে বলেছেন, বুধবারের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা আগামী ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবারের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১৩ মার্চে।
×